সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মোনহারপুর গ্রামের কৃষক আছালদ সরকার জ্বর-ব্যথা নিয়ে গিয়েছিলেন তাদের গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকে। সেখানে কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মো. মোক্তার হোসেন রোগের কথা শুনেই তাঁকে স্থানীয় পল্লিচিকিৎসক বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ মোক্তার হোসেন জানান, তাঁদের এখানে ১ মাস হলে ওষুধ তেমন নেই এক কার্টুন ছিল তা শেষ হয়ে গিয়েছে ।
ক্লিনিকের প্রধান ফটকের সামনে আলাপকালে হতাশ কণ্ঠে আছালদ সরকার বলেন, ‘চার দিন ধরে জ্বর ও গায়ে ব্যথা। জ্বরের কারণে মাঠে কাজ করতে পারছিলাম না। তাই এসেছিলাম কমিউনিটি ক্লিনিকে; কিন্তু কোনো ওষুধ দেয়নি। আমাদের মতো গরিব খেটে খাওয়া মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল এটা। সরকার ওষুধ দিতে না পারলে এসব খুলে রেখেছে কেন?’
গত সোমবার দুপুরে আধা ঘণ্টা অবস্থান করে অন্তত ৭ জন রোগীকে খালি হাতে ফিরতে দেখা গেছে এই ক্লিনিক থেকে। শুধু এটি নয়, তাড়াশে সব কমিউনিটি ক্লিনিকে গত কয়েক মাস থেকে ওষুধ সংকট চলছে। মাঝে কিছু ওষুধ সরবরাহ করা হলেও কয়েক মাস ধরে তা তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে সেবাদান ব্যাহত হচ্ছে, ভোগান্তিতে পড়ছে প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
জেলা সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে জানা গেছে, স্বাস্থ্যসেবা দোরগোড়ায় পৌঁছাতে তাড়াশে গ্রামীণ পর্যায়ে ৩১টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে বিনা খরচে চিকিৎসার পরামর্শ ও ওষুধ দেওয়ার কথা।
ক্লিনিকগুলোর দায়িত্বে থাকা সিএইচসিপিরা জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় ওষুধ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। আগে তিন মাস পরপর ক্লিনিকে ওষুধ আসত। স্থানীয়দের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে প্রতি ক্লিনিক দু-তিন কার্টন ওষুধ সরবরাহ করা হতো। এখন কয়েক মাস ধরে কোনো ক্লিনিকে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে না।
ক্লিনিকগুলো শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের ছয় দিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চালু রাখার কথা থাকলেও বাস্তব চিত্র উলটো। অভিযোগ রয়েছে, বেশির ভাগ ক্লিনিক সকাল ১০টার পর খোলা হয় এবং বেলা দেড়টার পরই বন্ধ হয়ে যায়।
কোহিত কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে কথা হয় কৃষক দেলবার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ নিতে এসেছিলাম। আগে এখান থেকে ফ্রি পেতাম, তবে অনেক দিন থেকে আর পাচ্ছি না। এখন দোকান থেকে কিনতে হচ্ছে।’
জানতে চাইলে সিএইচসিপি মো. ফিরোজ্জামন হীরা বলেন, গত ১ মাস ধরে ঔষধ নেই। এখানে ঔষধ ছিলো জিংক, বাচ্চাদের শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস, প্রেশারের ওষুধসহ ২২ ধরনের ওষুধের একটি কার্টন পাইছি। চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে তা দ্রুত শেষ হয়ে গেছে। আগে প্রয়োজন অনুযায়ী তিন কার্টন পেতাম। এখন ওষুধ দিতে পারি না। রোগীরা এসে জ্বর, আমাশয়, গ্যাস্ট্রিক, ব্যথা, সর্দি, কাশি, চুলকানি, দাদ, অ্যালার্জি, ক্যালসিয়ামের ওষুধ চায়। আগে দৈনিক ৪০ জন রোগী আসত। এখন ওষুধ না থাকার খবর জানতে পেরে রোগী তেমন আসে না।’
কুসুম্বি গ্রামের শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘বাড়িতে পানি উঠে হাত-পায়ে চুলকাচ্ছে। ক্লিনিকে ওষুধ নিতে আইছি; কিন্তু বলল ওষুধ নাই।’ সেখানকার সিএইচসিপি মিত্র কুমার বলেন, ‘গত দেড় মাস হলে আমার এখানে কোনো ওষুধ নেই। পুরোনো ওষুধ দিয়ে কোনো রকমে চালাচ্ছি। ওষুধ না দিতে পারলে পরামর্শ দিয়ে বিদায় দিচ্ছি।’
নাম প্রকাশ না করে এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ‘অনেক দিন ধরে ওষুধ নেই। রোগীরা এসে গালমন্দ করেন, বিষয়টি খারাপ লাগে। আমরা উপজেলার কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তাঁরা বলেছেন, যা আছে সেটা দিয়েই চিকিৎসা দেন। না থাকলে পরামর্শ দেন।’
এনিয়ে কথা হলে তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এরফান আহমেদ
বলেন, ‘ তাড়াশে ৩১টি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে তার মধ্যে ২৯ টি চালু আছে আর ৩টি এখনো উদ্বোধন হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখি কোন কোন কমিউনিটি ক্লিনিক কি সমস্যা আছে তা জেনে পারে আপনাকে বলতে পারবো।
যোগাযোগ করা হলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. নুরুল আমিন বলেন, আপনি আমার সাথে কথা না বলে আপনি তাড়াশে যে দায়িত্বে আছে ডা. এরফান আহমেদ তার সঙ্গে কথা বলেন।
জেএইচআর