মাগুরা জেলা কারাগার। পুরোনো হলেও এখানে ঘটছে নীরব পরিবর্তন। শৃঙ্খলা, মানবিকতা ও সংশোধনের ছোঁয়ায় এই কারাগার আজ দেশের অন্যান্য কারাগারের জন্য এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ। তবে উন্নয়নের এ পথ মসৃণ নয়—পাশাপাশি রয়েছে অবকাঠামোগত সংকট, অতিরিক্ত বন্দির চাপ আর চিকিৎসাসেবার ঘাটতির মতো গুরুতর চ্যালেঞ্জ।
১৯৯৭ সালে সাব-জেল থেকে পূর্ণাঙ্গ জেলা কারাগারে উন্নীত হয় মাগুরা জেলা কারাগার। ৬.৩৯৪ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এই কারাগারের ধারণক্ষমতা মাত্র ১৭২ জন। অথচ বাস্তবে এখানে বর্তমানে বন্দি প্রায় ৩০২ জন। ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ বন্দির ভারে জেরবার কারা প্রশাসন।
তবুও এখানকার পরিবেশ তুলনামূলকভাবে পরিপাটি ও সুশৃঙ্খল। দেয়ালজুড়ে সচেতনতামূলক লেখালেখি, রয়েছে উন্নয়নমূলক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। মহিলা বন্দিদের শিশুদের জন্য রয়েছে খেলনাসহ ছোট্ট শিশুপার্ক, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, রান্নাঘর, ক্যান্টিন এবং পতাকা মঞ্চ।
কারা কর্তৃপক্ষ নিয়মিত বন্দিদের সঙ্গে কথা বলেন, চেষ্টা করেন তাদের মনোভাব পরিবর্তনের। ধর্মীয় শিক্ষা, প্রার্থনা, সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাধ্যমে বন্দিদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো।
তবে সবচেয়ে বড় সংকট চিকিৎসাসেবা। কারাগারে ২৫ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল থাকলেও নেই কোনো স্থায়ী চিকিৎসক। মাঝে মধ্যে সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি আসলেও তা প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ। সম্প্রতি দীর্ঘ মেয়াদি সাজাপ্রাপ্ত এক বৃদ্ধ কয়েদির মৃত্যুও ঘটে চিকিৎসার অভাবে।
কারাগারে এখনও রয়েছে জনবল সংকট। সীমিত সংখ্যক কারারক্ষী দিয়ে অতিরিক্ত বন্দিদের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবুও—এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই পরিবর্তনের ছাপ স্পষ্ট। কারা কর্তৃপক্ষ বন্দিদের জন্য উন্নতমানের খাবার, মাদক প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি এবং পুনর্বাসনে কার্যকর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও পর্যাপ্ত জনবল নিশ্চিত করা গেলে মাগুরা জেলা কারাগার হতে পারে দেশের প্রথম মানবিক ও সংশোধনমূলক মডেল কারাগার। এখানকার বাস্তবতা শুধু পরিবর্তনের নয়, বরং নতুন ভাবনার সূচনাও।
বিআরইউ