বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খসড়া বিধিমালায় সংশোধন চায় বিকেএ

রহমতুল্লাহ প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৩, ০৮:২৩ পিএম
বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খসড়া বিধিমালায় সংশোধন চায় বিকেএ

নিবন্ধন ফি ও স্থায়ী আমানত কমানো
ম্যানেজিং কমিটিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধানকে বাদ দেয়া
ঢাকায় জায়গা ও অবকাঠামোর পরিমাণ কমানো
নিবন্ধনের জন্য এই খরচ শিক্ষা উদ্যোক্তাদের জন্য কঠিন। এর ফলে অনেকে নিবন্ধন নিতে চাইবেন না - মো. মিজানুর রহমান সরকার, মহাসচিব, বিকেএ

সকল ধরনের কিন্ডারগার্টেন, কেজি ও অন্যান্য স্কুলের নাম বাদ দিয়ে দেশে দুই ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য নতুন করে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিধিমালা সংশোধনের খসড়া প্রণয়ন করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)।

নতুন এ বিধিমালাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএ)। তবে বিকেএ এ বিধিমালায় চারটি বিষয়ে সংশোধনী চায়। তারা মনে করেন, এ বিষয়গুলো সংশোধন না হলে ২০১১ সালের বিধিমালার ন্যায় এবারও এই বিধিমালা বাস্তবায়ন হবে না। অনেকেই নিবন্ধন নিতে চাইবেন না।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বেশ কিছু নতুন ও পুরনো শর্তের আলোকে কেজি স্কুল নিবন্ধন বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে সরকার। বর্তমানে এর খসড়া কপি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে আছে। এই প্রক্রিয়া শেষে এর খসড়া যাবে মন্ত্রিসভায়। সেখানে চূড়ান্ত অনুুুমোদন পেলে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই বিধিমালার আলোকে নিবন্ধন নিয়েই শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হবে দেশের সব কেজি স্কুলকে।

জানা যায়, কিন্ডারগার্টেনসহ (কেজি) বেসরকারি বিভিন্ন ধরনের স্কুল তত্ত্বাবধানের জন্য ২০১১ সালের একটি বিধিমালা তৈরি করা হয়। তবে নিবন্ধন জটিলতার কারণে এর পরিবর্তে নতুন করে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এ বিধিমালায় নিবন্ধন ফি ও স্থায়ী আমানত কমানো, ম্যানেজিং কমিটিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানকে না রাখার এবং ঢাকায় জায়গা ও ভবনের পরিমাণ কমানোর কথা বলছেন বিকেএ।  

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন বিধিমালার আওতায় প্রাথমিক অনুমোদনের পর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অনুমোদন নিতে হবে নিবন্ধন। শহরাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত স্কুল নিবন্ধন ফি ১৫ হাজার টাকা। জেলায় ১০ হাজার এবং উপজেলায় আট হাজার টাকা। প্রত্যেক স্কুলের একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকবে। কমিটিই চালাবে প্রতিষ্ঠান।

এতে প্রধান শিক্ষক, একজন শিক্ষক প্রতিনিধি, একজন অভিভাবক প্রতিনিধি, উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে দু’জন থাকবেন। প্রতিষ্ঠাতা পাওয়া না গেলে ইউএনও বা ডিসির দু’জন প্রতিনিধি থাকবেন। এ ছাড়া থাকবেন নিকটতম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক। প্রতিনিধি নির্বাচনে ভূমিকা রাখবেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। বিদ্যালয়ের সংরক্ষিত ও সাধারণ নামে দু’টি তহবিল থাকবে।

বিধিমালায় আরো বলা হয়েছে, সংরক্ষিত তহবিলে এলাকা অনুযায়ী স্থায়ী আমানত বা সঞ্চয়পত্র আকারে থাকতে হবে। এর মধ্যে আছে মেট্রোপলিটনে এক লাখ, জেলায় ৭৫ হাজার, উপজেলা ও পৌরসভায় ৫০ হাজার এবং ইউনিয়নে ২৫ হাজার টাকা। এবং ব্যক্তি নামে বিদ্যালয় স্থাপন করতে হলে ৫ লাখ টাকা স্থায়ী আমনত জমা করতে হবে।

বিদ্যালয় ভাড়া কিংবা স্থায়ী বাড়িতে হোক, মেট্রোপলিটন এলাকায় অন্যুন দশমিক ৮ একর, পৌরসভায় দশমিক ১২ এবং অন্য এলাকায় দশমিক ৩০ একর ভূমিতে হতে হবে। ভবন ও ভূমি ভাড়া নেয়া যাবে। তবে এ বিধিমালার আগে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের ভূমির পরিমাণ কম হলে সে ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না।

এর সঙ্গে অন্যদিকে মালিক পক্ষ বিধিমালাকে স্বাগত জানালেও কয়েকটি ক্ষেত্রে আপত্তি তুলেছেন তারা। তারা বলেছেন, আপত্তির জায়গাগুলো সংশোধন না হলে নতুন বিধিমালা বাস্তবায়ন ফল প্রসু হবে না। বিশেষ করে ব্যবস্থপনা কমিটিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে নিযুক্ত, নিবন্ধন ফি’র পরিমাণ ও স্থায়ী আমানত বা সঞ্চয়পত্র এবং সংরক্ষিত তহবিলে এলাকা অনুযায়ী স্থায়ী আমানতের পরিমাণ। তাছাড়া বাকি নিবন্ধনের সব প্রক্রিয়া পূরণে সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন মালিক পক্ষ।

২০১১ সালে প্রণীত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধন বিধিমালা রিভিউ কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. মিজানুর রহমান সরকার আমার সংবাদকে বলেন, নতুন বিধিমালার বিপক্ষে আমরা নই। তবে নতুন করে যে বিধিমালা হচ্ছে এখানে কিছু শর্তের মধ্যে জটিলতা রয়েছে। এ জটিলতা শিথিল করা হলে আমরা নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় কর্তৃপক্ষকে সার্বিক সহযোগীতা করব। বিশেষ করে নিবন্ধন ফি ও স্থায়ী ব্যাংক তহবিলে টাকার পরিমাণ কমাতে হবে। যেখানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আবেদন ফি মাত্র ৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে একজন শিক্ষা উদ্যোক্তার জন্য এই পরিমাণ টাকা গচ্ছিত রাখলে প্রতিষ্ঠানরুপ দেয়া কঠিন হয়ে যায়। এ ছাড়া কমিটিতে পার্শ্ববর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিও বাদ দেয়ার দাবি জানিয়েছি। কেননা একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান নিজপ্রতিষ্ঠান নিয়েও ব্যস্ত থাকে সেক্ষেত্রে বিধিমালা একজন সরকারি কর্মকর্তা কিংবা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদান বিবেচ্য হতে পারে ।

একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যবহৃত ভূমির পরিমাণের বিষয়টিও প্রদেয় শর্তের আলোকে পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। বিশেষ করে রাজধানীতে শর্তের আলোকে পরিমাণ জায়গার ভবন পাওয়ায় দুস্কর এমনকি ভাড়াও ব্যয়বহুল।

তিনি আরোও বলেন, এ সকল জটিলতা পুনঃবিবেচনা না করা হলে পুরাতন বিধিমালার মতোই হয়তো অকার্যকর হবে নতুন এই বিধিমালা।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দাবি নিয়ে আলোচনার বিষয়ে তিনি জানান, বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিষয়গুলো আমরা লিখিত আকারে তুলে ধরেছি। মন্ত্রী মহোদয় আমাদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।

এআরএস