ট্রেন পরিচালকের বুদ্ধিতে যেভাবে রাবিতে পরীক্ষা দিলেন ৭০০ ভর্তিচ্ছু

রাবি প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৪, ১২:১৪ পিএম
ট্রেন পরিচালকের বুদ্ধিতে যেভাবে রাবিতে পরীক্ষা দিলেন ৭০০ ভর্তিচ্ছু
ছবি: সংগৃহিত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষা কিছু মুহূর্ত পর শুরু হবে। একটি ট্রেনে ছিল প্রায় ৭০০ পরীক্ষার্থী। তারা ভেবেই নিয়েছিলো আজ পরীক্ষা দেয়া হচ্ছে না। তখন ইঞ্জিন বিকল। অবশেষে চালকের বুদ্ধিতে সব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে সাড়ে চারটার শিফটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।

ওয়েস্ট বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বিষয়টির বিস্তারিত তুলে ধরে নিজস্ব ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন।

তিনি ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এটাকে পরীক্ষা না বলে ভর্তি যুদ্ধ বলা যেতে পারে। প্রায় ৭০০ ছাত্র/ছাত্রী আজকে ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা থেকে এসে বিকেল সাড়ে তিনটার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। রেল ব্রোকেনের জন্য ধূমকেতু এক্সপ্রেস ঢাকা থেকেই বিলম্বে রওনা হয়। সকাল ১১টায় হিসেব করে দেখা গেল ট্রেনটি বিকেল ৩টা নাগাদ রাজশাহী পৌঁছবে।

তিনি লিখেছেন, পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ট্রেনটি অন্য ট্রেনকে বসিয়ে দিয়ে এগিয়ে আনছিলাম। ভাগ্য এতই খারাপ, লাহেড়ী মোহনপুর স্টেশনে এসে ধূমকেতুর ইঞ্জিন ফেইল করে, চাকা ঘুরছে না। কি করা যায়, কি করা যায় পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে শরৎনগরে বসা চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন কেটে এনে ধূমকেতু আবার চালু করলাম। হিসেবে করে দেখলাম ট্রেনটি বিকেল ৪ ঘটিকায় রাজশাহী পৌঁছবে, তখন পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে।

তিনি আরও লিখেছেন, মাননীয় ভিসি মহোদয়কে পরীক্ষার সময় পিছিনোর বিনীত অনুরোধ করলাম। তিনি আমাকে প্রায় ৪ বার ফোন করে ট্রেনের খবর নিলেন। ট্রেন সর্বোচ্চ অনুমোদিত গতিতে চলছে। দুশ্চিন্তা ছাড়ছে না। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উপায়ন্ত না দেখে আড়ানী স্টেশনের স্টপেজে ট্রেন না থামিয়ে থ্রু পাশ করলাম।

তিনি ওই পোস্টে উল্লেখ করেন, ঈশ্বরকে খুব একটা ডাকি না, পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে জোরে জোরে ডাকা শুরু করলাম, একটু মানত ও করলাম। ঈশ্বর মনে হয় সদয় হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে দিলাম, তখন বিকেল ৩.৩৮ মি.। দৌড় দৌড় হলে ঢুকতে হবে ৪ টার মধ্যে।

তিনি পোস্টে লিখেছেন, ভিসি মহোদয়কে বিনীত অনুরোধ করলাম ছেলে মেয়েদের হলে ঢোকার সুযোগ দেয়ার জন্য। তিনি কথা রাখলেন এবং রেলওয়ের সবাইকে ধন্যবাদ দিলেন। ট্রেন পরিচালনায় পাকশী কন্ট্রোলে সার্বক্ষণিক ভাবে মনিটরিং করেন ডিআরএম (পাকশী)। এখন নিজেকে বেশ হালকা লাগছে।

মহাব্যবস্থাপকের অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে অসীম কুমার দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, গতবছর আমার ছেলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলো। একজন বাবা হিসেবে আমি বুঝতে পারি সন্তানদের নিয়ে মা-বাবার উদ্বেগ। ট্রেন ঢাকা থেকে যাত্রা করার সময় থেকে আমি অনুস্মরণ করেছি। কিন্তু ভাগ্যের বিড়ম্বনায় আমরা বারবার বিপদে পড়ি। পথিমধ্যে ইঞ্জিন নষ্ট হয়েছিলো। বনলতা এক্সপ্রেসকে বসিয়ে রেখে অন্যএকটি ট্রেনের ইঞ্জিন নিয়ে পুনরায় ধূমকেতু এক্সপ্রেস গন্তব্যে নিয়ে আসা হয়। সামান্য বিলম্ব হলেও সবাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পেরেছে।

এবিষয়ে আজ (বুধবার) ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ক প্রেস বিফ্রিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, দুর্ভোগ কাউকে বলে আসে না। ইঞ্জিন নষ্ট হওয়ায় ঠিক সময়ে ট্রেনটি আসতে পারেনি। ট্রেনে ১২৫ জনের মত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ছিল। পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট পর পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ চাইলে মানবিক বিবেচনায় তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ সেশনে স্নাতক প্রথম বর্ষের ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এতে উপস্থিতির হার ছিল ৮২ শতাংশ।

এআরএস