তারুণ্যের ঈদ ভাবনা

মোহাম্মদ এনামুল হোসেন (ববি প্রতিনিধি): প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৪, ১২:২০ পিএম
তারুণ্যের ঈদ ভাবনা

ঈদ শব্দটির অন্তরালে জড়িয়ে আছে আবেগ আর নানা বিশেষণের। ঈদ হৃদয়ের গভীর থেকে উচ্ছ্বাস প্রকাশের একটি উৎসব। হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের ভাব বিনিময়ের একটি উৎসব। যে উৎসবে একে অপরের প্রতি প্রকাশ করে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা। 

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর আমাদের মাঝে বয়ে আনে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি আর সাম্যের বার্তা। এই উৎসব নিয়ে তারুণ্যের আগ্রহ আর উদ্দীপনার মাত্রা যেমন বেশি থাকে, তেমনি থাকে বৈচিত্র্যময় নানান ভাবনার। তারুণ্যের ঈদ নিয়ে সেই ভাবনাগুলোর কথা তুলে ধরেছেন দৈনিক আমার সংবাদের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ এনামুল হোসেন—

 

‍‍‘ঈদ হোক সর্বজনীন‍‍’
গানের ছলে কিংবা কবিতার ছলে আমরা সবসময় বলে থাকি ‍‍‘ঈদ মানে খুশি‍‍’। মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব হচ্ছে ঈদ। ঈদের আনন্দে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে নাড়ীর টানে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য ঈদ মানে অনেক বড় কিছু। তবে ঈদ আসে আমাদের সকলের জন্যই।

ছোট বড়, ধনী গরিব নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষের জন্যই ঈদ একটি আনন্দের উৎসব। তবে হাতেগোনা কয়েক শ্রেণীর মানুষই যেনো ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। প্রবাসীদের ঈদের আনন্দ নেই বললেই চলে। দেশের সবাই সকল প্রান্ত থেকে ছুটি পেলেও প্রবাসীরা ঈদের ছুটি পাচ্ছেনা। 

দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে মানুষ ছুটে আসে প্রিয়জনের টানে; শুধুমাত্র প্রিয়জনের সাথে ঈদ পালন করবে বলে। অথচ প্রবাসীদের ঈদ পালন করতে হয় কয়েক হাজার মাইল দূরে বসে, প্রিয়জনদের থেকে আলাদা হয়ে। এ বিষয়টির প্রতি নজর দেওয়া উচিৎ। ঈদ হোক সর্বজনীন। ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে যাক সবার মাঝে।

—ফারহানা আফসার মৌরী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।


‘ঈদ আত্মভাবনায় সীমাবদ্ধ না হোক’
ঈদ মানেই দীর্ঘ এক মাসের সংযমের পর আনন্দ আর খুশি। এই আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে দূর-দূরান্ত থেকে সকলেই শিকরের টানে চলে আসে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে। অনেকের পুরো বছরের সময়গুলো দুঃখ বেদনার মধ্য দিয়ে কাটলেও, ঈদ আনন্দ সেটা ভুলিয়ে দেয়। এ যেন সৃষ্টিকর্তা থেকে পাওয়া আমাদের ওপর এক অপার নিয়ামত। 

ঈদ ধনী-গরীবের মাঝে বৈষম্য দূর করে সাম্যের কথা বলে। ঈদে শুধুই দামি পোশাকে বিলাসীতা না করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ, শ্রেনী-পেশা দলমত নির্বিশেষে আসুন আমরা আর্তমানবতার পাশে দাঁড়াই। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সাম্য, মৈত্রী, সহমর্মিতা, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হই। 

শুধু নিজেকে নিয়ে না ভেবে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং গরীব-দুঃখীদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করলে ঈদ হয়ে উঠতে পারে সবার জন্য সমান আনন্দের।

—মেহেদী হাসান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

 

‍‍‘ঈদ বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ, রমজানের শিক্ষা হোক জীবনের পাথেয়‍‍’

আত্মশুদ্ধি, ন্যায় পরায়ণতা আর সংযমের মহান শিক্ষা নিয়ে বিশ্বমানবতার মাঝে শুভাগমন ঘটেছিল মাহে রমজানের। দাম্ভিকতার জিঞ্জির গুঁড়িয়ে, অন্যায়-অপরাধের পাহাড় মাড়িয়ে, আত্মপ্রতারণার পারদ গলিয়ে এক পরিশুদ্ধ-মানবিক মানুষ হওয়ার জন্য বারংবার আহ্বান জানিয়েছে রমজানের রোজা। ভেদাভেদ ভুলে সমাজের সকল স্তরের মানুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে অনাবিল আনন্দের ঈদ উদযাপনের মাঝে বৈচিত্র্যের অন্যন্য এক নজির স্থাপন তারই অবদান।

এই ঈদে আমার আশা থাকবে রমজানের মহান ব্রতপালন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে প্রত্যেকেই ধর্ম-বর্ণ, জাতি গোষ্ঠী নির্বিশেষে হয়ে উঠবে একজন প্রকৃত মানুষ। আর কোনো চিকিৎসক না হয়ে উঠুক সমাজের চোখে কসাই, প্রকৌশলী না হোক লালায়িত প্রতারক, সরকারি কর্মকর্তা না হোক ঘুষখোর আর দায়িত্বজ্ঞানহীন, বিত্তশালীর রক্তচক্ষু হোক অবনত, গণমাধ্যমকর্মী হোক সত্যের পথে অটুট, দিনমজুর-খেটে খাওয়া মানুষ পাক সকলের সাথে প্রাণখুলে হাসার অধিকার, সকলের নিজ প্রাণ হোক উজ্জীবিত-হোক পরিশীলিত।

—এম. শামীম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


‍‍‘যান্ত্রিকতা মুক্ত হয়ে ঈদ হোক আন্তরিকতার ছোঁয়ায়’

কয়েকবছর আগেও ঈদ পালনে সবার মাঝে দেখা যেত আন্তরিকতার ছোঁয়া। ঈদের শুভেচ্ছার আদান-প্রদান, আত্মীয় স্বজন কিংবা প্রতিবেশীর বাড়িতে দাওয়াত বিনিময় এবং বন্ধুদের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়া, বিকেলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে বের হওয়া, ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলায় মেতে ওঠা সবই ধীরে ধীরে অতীতের ফ্রেমে বন্দি হয়ে যাচ্ছে। 

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে আমরা এতটাই যান্ত্রিক হয়ে উঠেছি যে পরিপূর্ণভাবে সবাই মিলে ঈদ আনন্দ গ্রহণ করতে পারছি না। ঈদের আনন্দগুলো যেন হারিয়ে যাচ্ছে, হয়ে উঠছে অনুভূতিহীন আর কৃত্রিমতার। আমাদের জীবনে সেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আবার ফিরে আসুক। ফিরে আসুক সেই আনন্দঘন, শান্তি, সৌন্দর্য মিশ্রিত ঈদ।

—মাহমুদ হাসান, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ।

 

‍‍‘ঈদ হোক বৈষম্যহীন‍‍’
দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পরে আনন্দের বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে আগমন ঘটে ঈদুল ফিতরের। সকলের মাঝেই যেন বয়ে চলেছে ঈদ আমেজ। ঈদের দিন ছোট-বড় বয়সভেদে, ধনী-গরিব শ্রেনীভেদে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকলে একসাথে নামায আদায় করে থাকেন ঈদগাহে, থাকে না কোনো বৈষম্য। 

আর এটাই ঈদের সৌন্দর্য। আর এই ঈদের সৌন্দর্য রক্ষায় প্রতিবারের মত এই ঈদেও গরীব, অসচ্ছল ও স্বল্প আয়ের মানুষের মুখে ঈদের হাসি ফোটানোর দায়িত্ব আমাদেরই। ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হোক কোনো পথ শিশু। 

আমরা চাইলেই আমাদের নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের মাঝে বিলিয়ে দিতে পারি ঈদের আনন্দ। সকলের ঈদ ভালো কাটুক এই প্রত্যাশা রইলো।

—ফাতেমা তুজ জোহরা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।


বিআরইউ