জুলাই সনদেই নির্বাচন চায় জামায়াত-এনসিপি, ভিন্ন অবস্থানে বিএনপি

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০১:৪১ পিএম
জুলাই সনদেই নির্বাচন চায় জামায়াত-এনসিপি, ভিন্ন অবস্থানে বিএনপি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা শেষে জুলাই সনদের খসড়া প্রস্তুত করে তাদের কাছে পাঠিয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, দলগুলোর মতামত নিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরে সনদ ঘোষণা করা হতে পারে। তবে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে।

বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়েছে, বিএনপির অবস্থান হলো নির্বাচিত সংসদই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে। এর বিপরীতে, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদ নির্বাচন, গণভোট বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে অনড়।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোকেই নিতে হবে। আমরা কোনোভাবেই চাপ দিতে পারি না।’ কমিশন দলগুলোর সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা করবে।

প্রথমে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে অনড় থাকলেও বিএনপি এখন আলোচনায় যেতে আগ্রহী। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধান বের করা সম্ভব। আমরা সেই আলোচনায় অংশ নেব।’

এনসিপি ও জামায়াত বলছে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। তারা কমিশনের স্বাক্ষরিত সনদ গণভোট বা গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে বাস্তবায়নের তাগিদ দিচ্ছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন খসড়ায় উল্লেখ করেছে, জনগণের সর্বজনীন ইচ্ছার পরিপ্রেক্ষিতে সনদ প্রণয়ন করা হয়েছে। তাই সনদ প্রচলিত আইন বা আদালতের রায়ের ওপর প্রাধান্য পাবে। এ ছাড়া, সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রাখা হচ্ছে না।

জুলাই সনদের সর্বোচ্চ আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য কমিশন ইতিমধ্যেই সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি প্যানেল গঠন করেছে। অধ্যাপক রিয়াজ বলেন, ‘সাবেক বিচারপতি, আইনের শিক্ষক ও সিনিয়র আইনজীবীদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। সেই মতামতের ভিত্তিতে তারা একটি অপশন দেবেন।’

বিশেষজ্ঞ প্যানেল জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে পরামর্শ দেবেন, যা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তুলে ধরা হবে। এই বৈঠক আগামী ২৫ আগস্টের পরে অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা বৈঠকে যাব। তারা কি প্রস্তাব দেয়, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কোনো বিকল্প আসে কি না সেটিও দেখা হবে।’

জুলাই সনদকে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় আইনি ভিত্তি দিতে হবে এটাই এনসিপি ও জামায়াতের অবস্থান। এনসিপি সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘গণপরিষদ নির্বাচনই আমাদের সমাধান। আইনি ভিত্তি না দিলে কঠোর আন্দোলনেও নামতে পারি।’

জুলাই সনদ নিয়ে বিএনপির অবস্থান এখন কৌশলী। কমিশনের খসড়ায় বলা হয়েছে, নির্বাচিত সংসদ দুই বছরের মধ্যে প্রস্তাব ও সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিশন ও পরবর্তীতে ঐকমত্য কমিশন গঠন করে। দুই পর্বের আলোচনায় ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো হয়।

প্রথম পর্বের আলোচনায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন, জেলা সমন্বয় কাউন্সিল, তথ্য অধিকার আইন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ, সচিবালয়, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস, আইনজীবীদের আচরণবিধি, গণহত্যা ও ভোট জালিয়াতি তদন্ত কমিশন গঠনসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা ছিল।

দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় ২০টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১১টি বিষয়ে ঐকমত্য, ৯টি বিষয়ে ভিন্নমত থাকে। অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ একটি রাজনৈতিক ডকুমেন্ট। এটি ঐকমত্যের ভিত্তিতেই তৈরি।’

কমিশন বলছে, খসড়ায় যেসব বিষয়ে দল একমত নয়, সেগুলো নোট অব ডিসেন্ট আকারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

জেএইচআর