রমজানের বিদায়ে মুমিন হৃদয় ব্যথিত

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৪, ১০:২৩ এএম
রমজানের বিদায়ে মুমিন হৃদয় ব্যথিত

মহান  আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নেয়ামত প্রাপ্তির ওপর শোকর আদায় করা যেমনি সুন্নত, তেমনি মহান আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত, রুখসত বা বিদায়ের ওপর আপসোস করাও সুন্নত। পবিত্র কোরআনে ১২টি মাসের মধ্যে কেবল রমজান মাসের নামই জিকির করা হয়েছে, অন্য কোনো মাস নয়।

যেমন- ‘শাহারু রামাদানাল্লাজী উনযিলা ফীহিল কোরান’ (সুরা-বাকারা)- আরবিতে বাকি যে ১১টি মাস রয়েছে, তাতে শুধু নির্দ্দিষ্ট তারিখেই ইবাদত-বন্দেগি করা হয়। 

এদিকে মহররমের ১০ তারিখ আশুরা, রজব মাসের ২৭ তারিখ মিরাজ, শাবান মাসের ১৪ তারিখ শবেবরাত, জিলহজ্ব মাসের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ তারিখ হজ ও কোরবানি ইত্যাদি। কিন্তু মাহে রমজানে এরূপ কোনো নির্দ্দিষ্ট দিন-রাত বা মুহূর্ত নেই বরং রমজানের চাঁদ উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং রমজান মাস বিদায় হওয়ার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর ইবাদতে অতিবাহিত হয়।

 রমজান মাসে রোজাদার বান্দা যখন নিদ্রা যায়, তখন যদিও তার জিকির বন্ধ থাকে, তবুও তার প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসে তাসবিহর প্রতিদান দেওয়া হয়। হযরত আনাস (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে নবীয়ে পাক (সা.) ইরশাদ ফরমান- রমজান মাস যখন শুরু হয় তখন জিব্রাইল আমিনের নেতৃত্বে হাজার-হাজার ফেরেশ্তা পৃথিবীর জমিনে তাশরিফ আনেন এবং বান্দার অবস্থা অবলোকন করার জন্য দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন : ফেরেশতারা! তোমরা আমার কাছে আমার বান্দাদের অবস্থা পেশ করো। তখন ফেরেশতারা বলবে, হে আল্লাহ! আমরা দেখেছি তোমার বান্দাদের কেউ রোজা অবস্থায় আছে, কেউ তারাবির নামাজের মধ্যে আছে, কেউ ইফতারির মধ্যে আছে, কেউবা সাহরির মধ্যে আছে, কেউবা কোরআন তেলাওয়াতরত আছে, আবার কেউবা দুনিয়ার স্বাভাবিক জীবন ত্যাগ করে তোমার সন্তুষ্টির জন্য ইতিকাফ পালন করছে। 

ফেরেশতাদের কাছে এ বিবরণ শুনে আল্লাহ গৌরব করে বলবেন, ফেরেশতারা! তোমরা তো বলেছিলে, আল্লাহ! আপনি ইনসান কেন বানাবেন? তারা তো দুনিয়ায় ফাসাদ সৃষ্টি করবে (সুরা বাকারা-৩০) 

অথচ তোমরাই এখন সাক্ষী দিচ্ছ, আমার বান্দারা আমারই ইবাদতে মশগুল আছে। এখন তোমরাই বলে দাও আমি আমার ওই বান্দাদের কী প্রতিদান দেব। ফেরেশতারা তখন লজ্জিত হয়ে বলবে, আপনি তাদের পরিপূর্ণ প্রতিদান দিয়ে দিন। তখন আল্লাহ পাঁচটি কসম করে বলবেন- বান্দা! আমি তোমাদের রোজাগুলোর পরিপূর্ণ প্রতিদান দিয়ে দিলাম। যাও! তোমরা ফিরে যাও! আমি তোমাদের মাফ করে দিলাম, এমনকি তোমাদের গুনাহগুলোকে নেকিতে পরিণত করে দিলাম। (বায়হাকি, মুসলিম)।

হযরত জাবের (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে হুজুর (সা.) ইরশাদ ফরমান, যখন মাহে রমজানের বিদায়ী মুহূর্ত হয়, তখন আসমান জমীন এবং ফেরেশতারা আল্লাহর দরবারে অকাতরে কাঁদতে থাকে। 

কারণ রমজান আরম্ভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ আসমানের দরজা, জান্নাতের দরজা এবং রিজিকের দরজাগুলো খুলে দিয়েছেন। আসমানের ফেরেশতারা তখন এই বলে কাঁদতে থাকে যে- আল-বিদা, আল-বিদা, ইয়া শাহ্ রু রামাদান, আল-বিদা আল-বিদা ইয়া শাহ্ রুল কোরআন...। 

লেখক: ধর্ম ও সমাজ সচেতন লেখক, চেয়ারম্যান -গাউছিয়া ইসলামিক মিশন, কুমিল্লা।

 

বিআরইউ