মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি

দগ্ধ আরও দুজনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২৫, ১০:৫৭ পিএম
দগ্ধ আরও দুজনের মৃত্যু
  • আজ খুলছে না মাইলস্টোন, যা জানাল কর্তৃপক্ষ
  • বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে ছাড়পত্র পেল দগ্ধ দুই শিক্ষার্থী 
  • মানসিক আঘাতগ্রস্তদের চিকিৎসার তদারকির জন্য কমিটি গঠন

রাজধানীর উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজন ওই স্কুলের শিক্ষার্থী জারিফ ফারহান (১৩)। সে মাইলস্টোনের সপ্তম শ্রেণির ইংলিশ ভার্সনে পড়তো। আর অন্যজনের নাম মাসুমা (৩২)। তিনি ওই স্কুলে অফিস সহায়ক হিসেবে কাজ করতেন বলে জানা গেছে। 

জারিফ গতকাল শনিবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এর কিছুক্ষণ পরই মাসুমার মৃত্যুর তথ্যও জানানো হয়। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি জানান, জারিফের শ্বাসনালীসহ শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। ক্রিটিক্যাল অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে ছিল সে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। 

অন্যদিকে মাসুমার শরীরের ৯০ শতাংশ বার্ন ইনজুরি ছিল বলেও জানান এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, এ নিয়ে বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ইনস্টিটিউটে ১৭ জনের মৃত্যু হলো। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত এই দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যু ৩৫ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃত জারিফের বাবা মো. হাবিবুর রহমান জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর সদর উপজেলার শ্রীপুর এলাকায়। তার দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে জারিফ ছিল ছোট। পরিবার নিয়ে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর, ৫ নম্বর রোডে থাকেন।

আজ খুলছে না মাইলস্টোন, যা জানাল কর্তৃপক্ষ

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার পর থেকে বন্ধ রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছুটি আরও দুই দিন বাড়ানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে আজ রোববার থেকে শিক্ষা কার্যক্রম চলার কথা ছিল। গতকাল শনিবার স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন করে রবি ও সোমবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত সোমবার জানানো হবে।

গত ২১ জুলাই দুপুরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয় মাইলস্টোনের একটি ভবনে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের প্রায় সবাই শিশু। আর আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। মর্মান্তিক এ ঘটনার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আজ থেকে সীমিত পরিসরে ক্লাস শুরু করার কথা জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।

মাইলস্টোনের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল গণমাধ্যমকে জানান, রোববার (আজ) থেকে ক্লাস শুরু হচ্ছে না। প্রথম তিন দিন ছুটি ঘোষণা হয়েছিল, পরে তা আরও দুই দিন বাড়ানো হয়েছে। রবি ও সোমবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। খোলার বিষয়ে সোমবার সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে ছাড়পত্র পেল দগ্ধ দুই শিক্ষার্থী 

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ দুই শিক্ষার্থীকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গতকাল শনিবার দুপুরে তাদের হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়া হয়। 

গতকাল শনিবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন। 

তিনি বলেন, সকালে মাসুমা বেগম (৩৬) ও জারিফ ফারহান (১৩) নামে পরপর দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় দুজনকে আজ ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এরা হলো- স্কুলটির শিক্ষার্থী আয়ান খান (১২) এবং রাফসি (১২)। 

তিনি বলেন, এখন ৩৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে ৪ জন, যাদেরকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সিবিআর ক্যাটাগরিতে, অর্থাৎ এদের চাইতে একটু কম গুরুতর অবস্থায় রয়েছে ৯ জন। বাকিরা অন্যান্য ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহে আরও অন্তত ১০ জনকে পর্যায়ক্রমে ছাড়পত্র দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান ইনস্টিটিউটের পরিচালক। উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান ২১ জুলাই দুপুরে বিধ্বস্ত হয়। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক স্থানীয়দের সহায়তায় বিভিন্ন বাহিনী উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয়। রাত পর্যন্ত চলে অভিযান। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়। রাতেই ২০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়, যাদের মধ্যে বিমানটির পাইলট তৌকির ইসলামও ছিলেন। ওই দুর্ঘটনায় ২২ জুলাই একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়। 

মানসিক আঘাতগ্রস্তদের চিকিৎসার তদারকির জন্য কমিটি গঠন

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মানসিকভাবে ক্ষতি বা আঘাতগ্রস্তদের চিকিৎসার তদারকির জন্য ১৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) ডা. মো. মাহবুবুর রহমানকে সভাপতি ও সহকারী অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রিস্ট) ডা. মোহাম্মদ জুবায়ের মিয়াকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। 

গত বুধবার হাসপাতালের পরিচালক এ কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি তদারকি করবেন। 

কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রিস্ট) ডা. মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, ড. নিয়াজ মোহাম্মদ খান (সাইকিয়াট্রিস্ট), সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইফুল নাহার (সাইকিয়াট্রিস্ট), ডা. জিনাত লায়লা, সহযোগী অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রিস্ট) ড. মো. জহির উদ্দিন, ডা. জেবুন নাহার (সাইকিয়াট্রিস্ট), ডা. মো. তৈয়ুবুর রহমান রয়েল (সাইকিয়াট্রিস্ট), ড. আনিকা বাসারাত (সাইকিয়াট্রিস্ট), মোহাম্মদ জামাল হোসেন (সাইকিয়াট্রিস্ট) সোশ্যাল ওয়ার্কার, জেসমিন আক্তার (সেবা তত্ত্বাবধায়ক) ও আবুল কালাম আজাদ (ওয়ার্ড মাস্টার)। 

কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জুবায়ের মিয়া জানান, ওই ঘটনায় এক শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে।