Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ইউরোপের যে ৫টি দেশ সবচেয়ে গরীব

আমার সংবাদ ডেস্ক

অক্টোবর ২০, ২০২০, ০৮:৩০ এএম


ইউরোপের যে ৫টি দেশ সবচেয়ে গরীব

শিরোনাম দেখে আপনি কি অবাক হয়েছেন ? হ্যা! অবাক তো একটু হওয়ারই ছিল। কেননা ইউরোপ অর্থনীতির তালিকায় বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ একটি দেশ। তবে কেন আজকের শিরোনাম ইউরোপের সবচেয়ে গরীব ৫টি দেশ। জি ! ইউরোপের এমন পাঁচটি দেশ রয়েছে যারা ইউরোপের অন্য দেশ ও দেশের অর্থনীতির তুলনায় গরিব। তাই আমরা জানার চেষ্টা করবো যে কেন এই পাঁচটি দেশকে আমরা গবির দেশ বলবো।

নাম্বার ফাইভ : বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা বলকান উপদ্বীপে অবস্থিত একটি দেশ। দেশটির সীমান্তবর্তী দেশগুলো হলো সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং মন্টিনিগ্রো। এছাড়াও আড্রিয়াটিক সাগরে বসনিয়ার প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ তটরেখা আছে। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় $২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় প্রায় $৬০০০ মার্কিন ডলার। এটি ইউরোপের দরিদ্রতম দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি পুনর্নির্মাণ এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের দ্বৈত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বসনিয়া। যদিও এই দেশটি একসময় সমৃদ্ধ ছিল, তবে ১৯৯০ এর দশকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বসনিয়ার অর্থনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন দেখা দেয়। এই সময়ের মধ্যে দেশটির জিডিপি ৬০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে যদিও বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার অর্থনীতি ধীরে ধীরে চাঙ্গা হচ্ছে, কিন্তু বাণিজ্য ঘাটতি এবং ৩৮.৭ শতাংশ উচ্চ বেকারত্বের হার বর্তমানে দেশটির উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নাম্বার ফোর : আলবেনিয়া
আলবেনিয়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপীয় দেশ। দেশটি কসোভো, উত্তর ম্যাসেডোনিয়া, গ্রীস এবং মন্টিনিগ্রো দ্বারা পরিবেষ্টিত। এছাড়াও দেশটির আর্দ্রিয়াটিক এবং আইওনিয়ান সাগরে তটরেখা আছে। যদিও আলবেনিয়া ইউরোপের অন্যতম দরিদ্র দেশ, তবে দেশের অর্থনীতি ক্রমাগত উন্নতি করছে। বর্তমানে দেশটির মোট জিডিপি প্রায় $১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় প্রায় $৫,২৬১ মার্কিন ডলার। ৯০ এর দশকের গোড়ার দিক থেকে, দেশটি কমিউনিস্ট নীতি থেকে গণতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতি ব্যবস্থায় ধীরে ধীরে রূপান্তর শুরু করে। সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদ দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশকে সাহায্য করছে।

নাম্বার থ্রি : কসোভো
ইউরোপের দরিদ্রতম দেশগুলির মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে কসোভো। এটি মধ্য বলকান উপদ্বীপে অবস্থিত একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। এটি একটি বিতর্কিত অঞ্চল এবং আংশিক স্বীকৃত রাষ্ট্র। কসোভোতে একটি রূপান্তর অর্থনীতি বিদ্যমান এবং এটি যুগোস্লাভিয়ার প্রাক্তন দরিদ্রতম প্রদেশ। ১৯৯০ এর দশকে বেশ কয়েকটি দুর্বল অর্থনৈতিক সংস্কার, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিলুপ্তি, বৈদেশিক বিনিয়োগ হ্রাসের ফলে কসোভোর ইতিমধ্যেই দুর্বল অর্থনীতি আরো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। ২০০৮ সালে স্বাধীনতার ঘোষণার পরে কসোভোর অর্থনীতি ধীরে ধীরে উন্নতি করছে কিন্তু তবুও এই অঞ্চলের বিতর্কিত অবস্থা দেশটির দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশের পথে বাধা হিসাবে কাজ করে। বর্তমানে দেশটির মোট জিডিপি প্রায় $৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় প্রায় $৪,৪৪৭ মার্কিন ডলার।

নাম্বার টু : মলদোভা
মলদোভা হলো পূর্ব ইউরোপীয় স্থলবেষ্টিত দেশ, যা ইউক্রেন এবং রোমানিয়ার সীমান্তবর্তী। কিশিনেউ মলদোভার রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর। মলদোভা ইউরোপের দ্বিতীয় দরিদ্রতম দেশ। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরে দেশটি অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। সে সময় রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং দুর্বল প্রশাসনিক ক্ষমতার কারনে মলদোভান অর্থনীতি শক্তির ঘাটতি এবং বাণিজ্যিক বাধার মুখোমুখি হয়েছিল। নবগঠিত মলদোভিয়ান সরকারের প্রধান লক্ষ্য ছিল অর্থনীতিতে স্থিতিশীল হওয়া এবং দেশের আর্থিক অবস্থা পুনরুদ্ধার করা। এ লক্ষে দেশটির সরকার অনেকগুলো নীতিমালা প্রণয়ন করে। এইসব নীতিমালা বাস্তবায়নের সাথে সাথে মলদোভার অর্থনীতি আস্তে আস্তে উন্নতির মুখ দেখছে। দেশটির বর্তমান মোট জিডিপি প্রায় $১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু আয় প্রায় $৩,৩৯৮ মার্কিন ডলার।

নাম্বার ওয়ান : ইউক্রেন
ইউক্রেনীয় অর্থনীতি সোভিয়েত ইউনিয়ন থাকাকালে ইউনিয়নের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ছিল। ইউনিয়নটি বিলুপ্ত হওয়ার পরে, স্বাধীন ইউক্রেন পরিকল্পিত অর্থনীতি থেকে বাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ করে, যা দেশের একটি বড় অংশকে দারিদ্র্যে ডুবিয়ে দেয়। এরফলে ইউক্রেনের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়েছিল এবং দেশের মানুষ শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছিল। সেসময় দেশটির গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষজন কৃষিকাজে মন দেয়, ফলাফল স্বরূপ দেশে অন্তত খাদ্যের ঘাটতি পূরণ হয়। ১৯৯৯ সালের মধ্যে ইউক্রেনের জিডিপি ১৯৯১ সালে যা ছিল তার চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ অর্থনীতি আবারো ২০০৮ সালে একটি বড় ধাক্কা খায়। তারপর থেকে দেশটি অর্থনৈতিকভাবে ক্রমাগত উন্নতি করলেও দুর্নীতি, অনুন্নত অবকাঠামো ও পরিবহন ব্যবস্থা দেশটির উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাত্র $৩,২২০ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয় নিয়ে বর্তমানে এটি ইউরোপ মহাদেশের সবচেয়ে দরিদ্রতম দেশ।