Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বই দেখবেন কি, দেখবেন বইয়ের মলাট 

জাহিদ আহসান

জানুয়ারি ৫, ২০২১, ০৯:৩০ এএম


বই দেখবেন কি, দেখবেন বইয়ের মলাট 

কুদ্দুস ডামগাতী এ সময়ের জনপ্রিয় লেখক। একাধারে কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী, উপস্থাপক, মডেল, আবৃত্তিকার। প্রতি বছর তার বই বের হবার আগেই কয়েক হাজার কপি সেল হয়ে যায়। বইমেলা উপলক্ষ্যে বই বের হলে সে বই বাংলাবাজার থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে আসবার সময় পথেই সব বিক্রি হয়ে যায়।

তো, লেখক কুদ্দুস ডামগাতীর নতুন বই আসছে তার প্রেমিকার দাদির ৪৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে। হিস্ট্রিকাল থ্রিলার। বইটির নামের চারটি সংস্করণ রয়েছে:-
                 ১.আইচার তলে তুফান উঠছে।
                 ২.তুফান উঠছে আইচার তলে।
                 ৩.উঠছে তুফান আইচার তলে।
                 ৪.তলে উঠছে তুফান আইচার।

শুধু নামেই নয়, প্রচ্ছদেও নিয়ে আসছেন ভিন্নতা। সেইম ডিজাইনের মধ্যে ভিন্ন কালার। চার রংয়ে আসছে প্রচ্ছদ—ফেরোজা, মৌসুমী, পিংক, শাবানা।

পাঠকের সুবিধার্থে একটি থ্রিলার ভিডিও বানানো হয়েছে। যেটার গুণগত মান 'কেজিএফ' এর থেকে মোটেই কম না। স্বয়ং লেখকের স্পন্সরে এই বইয়ের কাহিনী অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিতব্য—আগাম অবগত করা হলো ঘোষণা। পোস্টার সেঁটে দেয়া হয়েছে শহরের সব গুরুত্বপূর্ণ দেয়ালে। দক্ষ শিল্পীর রং-তুলিতে বইয়ের নামের ছাপ পড়েছে অলিতে-গলিতে। সাথে উল্লেখিত বই পাবার সকল অনলাইন, অফলাইন ঠিকানা। ঢাকার মোড়ে মোড়ে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সমেত অভিজ্ঞ সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে এনাউন্সমেন্ট তৈরীর কাজ প্রায় সম্পন্ন। বাজানো হবে মৌচাক, শাহবাগ, খিলগাঁও, মালিবাগ, মিরপুর, দুয়ারিপাড়া, এয়ারপোর্ট, উত্তরা, জেলখানার মোড়, নাজিরাবাজার, বাড্ডা, বাংলাবাজার। 

বই লেখা শুরু করবার আগেই প্রি-অর্ডারের ঘোষণা দেয়া হলো। সাথে লোভনীয় অফার। প্রথম অর্ডারকৃত ১০০ জন পাবেন ইন্টার কন্টিনেন্টালে লেখকের সাথে ডিনারের সুযোগ। পরবর্তী ৫০০ জন নারীর জন্য রয়েছে প্রচ্ছদের সাথে ম্যাচ করে শাড়ী (ছায়া-ব্লাউজ সহ)। আর পরবর্তী ৫০০ জন ছেলেকে দেয়া হবে বইয়ের প্রচ্ছদ সম্বলিত পাঞ্জাবি-পাজামা (আন্ডারওয়্যার সহ)। 

বই ছেপে বের হতেই ভয়ংকর সুন্দরী সব মডেলদের নিয়ে এসে বইয়ের সাথে ফটোশুটিং করানো হলো। সেগুলো প্রচারিত হলো লেখকের রিয়েল ৬টি এবং ১৫টি ফেইকসহ মোট ২১টি আইডি দিয়ে। সাথে লেখকের কিছু ভাই-ব্রাদারও একযোগে পোস্ট করলো৷ চুক্তি ছিলো— এক পোস্টের বিনিময়ে এক প্লেট কাচ্চি। বই বিক্রি শেষে লেখক সবাইকে নিয়ে ট্যুর দিবেন সেন্টমার্টিন। কিছু মডেল নিজের চমকপ্রদ ফিগারের প্রদর্শনীও দিলো, সাথে ফ্রি তে বই প্রচার। 

প্রি-অর্ডারের একমাস শেষে দেখা গেলো বই বিক্রি হয়েছে ১১২টি। পাঠকের প্রবল চাহিদার কারণে আরো এক সপ্তাহ সময় বাড়লো। এক সপ্তাহ শেষে সর্বমোট বই সেল গিয়ে দাঁড়ালো ১১৯ এ। এরপর বন্ধ করা হলো প্রি-অর্ডার। তিনমাস বই বেচাকেনা চললো প্রকাশনী, লাইব্রেরী, মার্কেট অনলাইন বুকশপ ইত্যাদি জায়গায়। তাতে আরো ৭টি বই কিনে পাঠক ধন্য হলো। 

কুদ্দুস ডামগাতী ফেসবুক লাইভে ভক্তকুলকে জানিয়ে দিলেন বইটির তিনটি সংস্করণ অলরেডি শেষ হয়ে গেছে। নতুন সংস্করণ বইমেলার আগে আসবে না। পাঠক বইমেলায় স্টল থেকে সরাসরি বই নিতে পারবেন। 

এঞ্জেলিনা শার্লিন এই চমকপ্রদ অফার দেখেই ঝটপট বই অর্ডার করে দিলো। কিন্তু কুদ্দুস ডামগাতীর মত এত বড় লেখকের বইয়ের প্রথম একশ ক্রেতা হওয়া কি চাট্টিখানি কথা? চান্স পেলো না প্রথম ১০০ তে। তার কপালে সেরাটনের লোভনীয় ডিনার নাই, জুটলো শাড়ী। তাতেই সে সন্তুষ্ট। ২৫০ টাকার বই। আর একটা শাড়ীর দাম কম করে হলেও ১০০০-১৫০০ টাকা। পিংক কালার তার খুব পছন্দের। বহুদিন ধরে একটা পিংক শাড়ি কিনতে মন চাচ্ছে। এই উসিলায় সে বাসনা পূরণ হয়ে যাবে। 

পার্সেল হাতে পেয়ে বইয়ের আগে শাড়ির প্যাকেট খুলে শাড়ি পরলো। সে তো আর বই পড়ার মানুষ না। বই আনবক্সড ই রয়ে গেলো। ২৫০ টাকা দিয়ে ১৫০০ টাকার শাড়ী পেয়েছে এতেই সে মহাখুশি। বাসায় ফেলে রেখে কী লাভ! শার্লিন বইটি তার ৩৪তম পড়ুয়া বয়ফ্রেন্ড গোলাম আলী কে গিফট করলো। এবং বললো যে ছবি তুলে দিতে বইয়ের। না পড়ুক, অন্ততঃ চোখের দেখাটা তো দেখবে। 

গোলাম ফেসবুকে সুন্দরী রমণীদের বইয়ের সাথে শাড়ি ম্যাচিং করে ছবি দেখেছে। এবার তার নিজের তোলার স্বাদ জাগলো। বাসায় এসে গোলাম পিংক কালারের শার্ট, পাঞ্জাবি, প্যান্ট, লুঙ্গি কিছুই পেলো না। কিন্তু পিংক কালারের একটা জাঙ্গিয়া পেলো। অগত্যা সে শুধু জাঙ্গিয়া পরে বইয়ের সাথে ছবি তুলে পাঠিয়ে দিলো শার্লিনকে। মনে মনে ভাবলো একের ভিতর দুই। বইয়ের ছবিও দেয়া হলো, নিজের ছবিও দেয়া হলো। উদাম গায়ে শুধু একটা আন্ডারওয়্যার পরা এমন অশ্লীল ছবি ইনবক্সে পেয়ে শার্লিন গোলাম আলীর সাথে ব্রেকাপ করলো এবং ব্লোক করে দিলো। গোলাম আলী তো কেঁদেকুটে শেষ। শালার এই বই তার হট গার্লফ্রেন্ডটা খুইয়ে দিলো। এ বই সে ছুঁয়েও দেখবে না। পড়া তো দূরের কথা।

তবুও যখন শার্লিনের কথা মনে পড়ে কইলজাটা ফেটে যাবার উপক্রম হয় তখন একটু বইটা খুলে দেখে। কথায় আছে—প্রেমিকার বাড়ির কুত্তা দেখলেও শান্তি লাগে। একটু একটু করে পুরো বই যখন শেষ হলো সে দেখলো এটা তো আরেকটা বইয়ের কপি। রাগে শরীরে কাঁপুনি ধরে গেলো গোলাম আলীর। এমনিতেই এই বইয়ের উপর সে ক্ষ্যাপা, আবার এটা আরেকটার কপি। লেখক কুদ্দুস ডামগাতীর উপর সে রেগেমেগে আগুন। শালারব্যাটারে পাইলে এখনই হারবালের সাথে গুলিয়ে খেয়ে ফেলতো।

একদিন এক সাহিত্য আড্ডায় গোলাম ধরলো কুদ্দুস ডামগাতীরে। ডামগাতী সাব বক্তৃতা করছেন। জ্ঞানগর্ভ আলোচনা দিচ্ছেন। গোলাম দাঁড়িয়েই মুখের উপর প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো—আপনার অমুক বইয়ের প্লট তো অমুক বই থেকে চুরি করা। কপি করে বই লেখেন মিয়া! চোর আপনি। 

বেটা কুদ্দুস এতবড় একজন নামীদামি লেখক! আর এই শালা পুঁচকে কোথাকার তার মানইজ্জত খেয়ে দিলো। এত বিশাল এক আড্ডায় সে এমন মানইজ্জত মারা কথা বলে বসলো। যাক, খুব একটা প্যারা নাই। সাউন্ড আর ডেকোরেশনের লোক ছাড়া হলরুমে আর কেউ নাই। কুদ্দুস ডামগাতী মাইক ছেড়ে গোলাম আলীর পাশে এসে বসলো। 

সোহাগের সুরে বললো—ভাই, কি করবো বলেন? প্রি-অর্ডার ঘোষণার পরে এত এত চাহিদা আর পাঠকের চাপ ছিলো যে লেখবার জন্য যে সময় দরকার তার আগেই মার্কেটে বই ছাড়তে হইছে। তাই, একটু কপি পেস্ট করছি। রাগ করিয়েন না৷ বাহিরে ভালো পুরি আর পেয়াজু আছে। চলেন, খেতে খেতে কথা বলি।

লেখকঃ জাহিদ আহসান, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

আমারসংবাদ/কেএস