আমার সংবাদ ডেস্ক
জানুয়ারি ২১, ২০২১, ১১:৪০ এএম
জার্মানির হ্যামলিন শহর যখন ইঁদুরের অত্যাচারে অতিষ্ট সেই সময় আবির্ভাব হয় এক বাঁশিওয়ালার। বাঁশি বাজিয়ে সব ইঁদুরকে উধাও করে দেন তিনি। তবে প্রত্যাশিত পারিশ্রমিক না পাওয়ায় রাগ করে হ্যামলিনের শিশুদের তার বাঁশির মায়ায় মুগ্ধ করে উধাও হয়ে গেছিলেন। এই গল্প তো ছোট থেকে বড় সবারই জানা। তবে এক এক লেখক এক এক ভাবে উপস্থাপন করেছেন এই একই গল্পকে।
কিন্তু এই গল্প আসলেও কতোটুকু সত্য, না পুরোটাই কাল্পনিক তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।
গ্রিম ভাইদের মূল কাহিনীতে একটি ভৌতিক এবং রহস্যজনক চরিত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে বাঁশিওয়ালাকে। অন্যদিকে, প্রসিদ্ধ ইংরাজি সাহিত্যের কবি রবার্ট ব্রাউনিং ও এই উপকথার চরিত্রটিকে নিয়ে একটি কবিতা রচনা করেন অন্যভাবে।
হ্যামলিন শহরের পর্যটন শিল্পের অধিকাংশই সেই বাঁশিওয়ালার রূপকথার ইঁদুর, বাঁশি, পোশাক ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। এছাড়াও স্থানীয় রেস্তোরাঁয় ইঁদুরের লেজের চিহ্ন সম্বলিত থালা, বেকারিতে ইঁদুর আকৃতির পাঁউরুটি, স্যুভেনিরের দোকানগুলোতে পাইপার টিশার্ট, মগ, ইঁদুর ইত্যাদি দেখতে ও কিনতে পারেন দর্শকরা।
হ্যামলিনের জাদুঘরে একটি লাইট এন্ড সাউন্ড উপস্থাপনা হয়। এছাড়াও গ্রীষ্মকালে খোলা আকাশের নীচে অভিনেতারা সেই বিখ্যাত গল্পকে নাটকের মাধ্যমে উপস্থাপিত করেন।
তবে আমাদের কাছে মজার গল্প হলেও হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার এই গল্প আজও হ্যামলিনের বাসিন্দাদের আতঙ্কিত করে কিছু ক্ষেত্রে। এখনো বাবা মায়েরা সন্তানের বিপদের আশঙ্কা করে শঙ্কিত হন।
জানা যায়, এক ঘটনা সত্যিই ঘটেছিল। ১৬০২ সালে এই শহরের অসংখ্য শিশু চিরতরে নিখোঁজ হয়ে গেছিলো। এর আগে ১২৮৪ সালে এমন শিশু নিখোঁজ হবার ঘটনা ঘটে। তবে ঐতিহাসিকদের মতে হ্যামলিন শহরের কর্মকর্তারা এমন ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটার পরেও কেনো নির্দিষ্ট তারিখে শিশু নিখোঁজের ঘটনা ঘটে তা আড়ালেই রাখতে চান।
এই শিশু নিখোঁজের ঘটনা কী সত্যিই এমন কোনো বাঁশিওয়ালার আগমন নাকি আরো গভীর কিছু যা প্রকাশে বিপদের সম্ভাবনা অনেক বেশি? সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও ধোঁয়াশায়।
তবে একথা স্পষ্ট যে এই উপকথাকে ঘিরে অসংখ্য সাহিত্য সৃষ্টি তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক নয়, বরং হ্যামলিন শহরে তথা জার্মানিতে বহুবার অভিশাপ হয়েই নেমে এসেছে বাঁশির সুর।
এখনও জার্মানি গেলে দেখা মিলবে হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই এই বাঁশিওয়ালার সুর অভিশাপ নয় বরং বিনোদনের কেন্দ্র। মাইকেল বয়ার গত ২৬ বছর ধরে অভিনয়ের মাধ্যমে হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার চরিত্রকে প্রাণদান করে চলেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই পর্যটকদের মধ্যে তিনি ইনস্টাগ্রামের ছবি তোলার জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। আবার অনেকে তার রামধনু রঙের পোশাক দেখে তাকে সমলিঙ্গ আন্দোলনের সহযোদ্ধাও মনে করেন।
আমারসংবাদ/এডি