Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

স্বামীর বাড়িতে ১৭ বছর লুকিয়ে রেখেছিলেন প্রেমিককে!

আমার সংবাদ ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১, ০৮:১৫ এএম


স্বামীর বাড়িতে ১৭ বছর লুকিয়ে রেখেছিলেন প্রেমিককে!

ভালোবাসার মানুশকে পাওয়ার জন্য কতো মানুষ কতো রকম পরিক্ষায় দিয়েছেন। লায়লা-মাজনু, শিরি-ফরহাদের অমর প্রেম কাহিনীও শুনেছেন। কিন্তু ১৭ বছর ধরে প্রেমিককে ঘরে লুকিয়ে রাখার গল্পও শুনেছেন কখনও। বিস্ময়কর হলেও এ ঘটনা সত্য। স্বামীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে একই বাড়িতে নিজের প্রেমিককে ১৭ বছর লুকিয়ে রেখেছিলেন ডলি অস্ট্রেইস।

১৮৮০ সালে জার্মানির একটি দরিদ্র পরিবারে জন্ম ডলি অস্ট্রেইসের। ২০ বছর বয়সে ফ্রেড উইলিয়াম অস্ট্রেইস নামের একজন ধনী টেক্সটাইল মালিকের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। 

তবে সুখ থাকলেও স্বামী মদ্যপ হওয়ায় দাম্পত্য জীবনে শান্তি ছিল না ডলির। তবে ১৯১৩ সালে ডলির জীবনের নতুন প্রেমের আবির্ভাব হয়। সেলাই মেশিন ঠিক করার জন্য ফ্রেডের কারখানা থেকে সানহুবার নামে ১৭ বছরের একজন মিস্ত্রী বাড়িতে আসে। প্রথম দেখাতেই সানহুবারকে ভালো লেগে যায় ডলির।  

৩৩ বছর বয়সী ডলি সব রকম চেষ্টা করে যুবক সানহুবার আকর্ষিত করার জন্য। অতঃপর তিনি সফলও হন। সেদিন থেকেই তাদের সম্পর্ক শুরু হয়। 

প্রথম দিকে তারা হোটেলে দেখা করলেও পারিপার্শিক সমস্যার কথা চিন্তা করে পরে তারা ফ্রেডের বাসাতেই তারা শারীরিক সম্পর্ক নিয়মিত চালাবেন। তবে ১৯১৩ সালে আমেরিকা আজকের মতো ছিল না। তাইতো ডলির প্রতিবেশীরা বিষয়টি নজরে রাখেন। তারা বরাবরই ডলি এবং অটোর সম্পর্ক সন্দেহের চোখে দেখতেন। এমনকি তাদের প্রতিবেশী ফ্রেডকে জানিয়ে দিয়েছিলেন ডলি এবং সানহুবারের সম্পর্ককে।

এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য ডলি সানহুবারকে তার চাকরি ছেড়ে দিতে বলেন। অতঃপর সানহুবারকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ডলি তার বাড়ির চিলেকোঠায় লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেন।

ডলির স্বামী কখনোই চিলেকোঠায় যেত না। ফ্রেডের চিলেকোঠায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে এভাবেই লুকিয়ে ছিলেন সানহুবার। 

এদিকে ফ্রেডেরও সন্দেহ হতে থাকে। কেননা তিনি চিলেকোঠা থেকে অদ্ভুত সব শব্দ শুনতে পেতেন। এমনকি রাতের বেলায় তার বেডরুমের বারান্দায় ছায়াও দেখতে পেতেন। এসব ভুতুড়ে ঘটনা দেখে সে বছর ফ্রেড লস এঞ্জেলসে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ডলিও সম্মতি জানান। 

তবে তার একটি শর্ত ছিল। নতুন বাসায় চিলেকোঠা থাকতে হবে। এদিকে ডলি সানোয়ারকে আগে সেখানে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ডলি ও ফ্রেড দম্পতি নতুন বাসায় যাওয়ার আগেই সানহুবার সেখানে নিজের ঘর গুছিয়ে নিয়ে বসবাস শুরু করেন।

লস অ্যাঞ্জেলসে যাওয়ার পর ফ্রেড ও ডলির মধ্যকার দাম্পত্য সম্পর্ক আরো খারাপ হতে থাকে। তারা যেন দিনকে দিন একে অন্যের শত্রু হয়ে যাচ্ছিলেন। এদিকে ফ্রেড আরো বেশি মদ্যপান করা শুরু করেন। এমনকি ফ্রেডের ব্যবহার ও দিনকে দিন হিংস্র হতে থাকে।

২২শে আগস্ট ১৯২২ সালে তাদের মধ্যে প্রচুর ঝগড়া হয়। তাদের দুজনের মধ্যে এতটাই তর্ক হচ্ছিল যে, ডলির প্রাণনাশের আশঙ্কায় তার প্রেমিক চিলেকোঠা থেকে ফ্রেডের অস্ত্র নিয়ে দুজনের মধ্যে এগিয়ে আসেন। তিনি সরাসরি ফ্রেডের বুকে তিন রাউন্ড গুলি ছোড়েন। সঙ্গে সঙ্গেই মারা যান ফ্রেড

এরপর এই ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ডলি এবং সানহুবার একটি ঘটনা সাজান। ডলি সানহুবারকে বলেন তাকে ঘরে আটকে রাখতে যাতে সবাই ভাবে আততায়ী ফ্রেডকে গুলি করে ডলিকে আটকে রেখে চলে গিয়েছে। সানহুবার ডলির কথা মতো সব কাজ করেন। সঙ্গে ফ্রেডের হাত থেকে ডায়মন্ডের আংটি ও চেনটি সানহুবার নিয়ে যান চিলেকোঠায়। প্রেমিক চিলেকোঠায় দৌড়ে পালাতেই ডলি চিৎকার করে কান্না করতে থাকেন। উচ্চস্বরে চিৎকার শুনে তার প্রতিবেশীরা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে ফোন দেন। পুলিশ এসে ডলিকে উদ্ধার করেন। পুলিশ বা প্রতিবেশীরা কেউই ডলিকে সন্দেহ করেননি। কারণ সে তো বন্দী অবস্থায় ছিল।

এদিকে পুলিশ খুনিকে খোঁজা শুরু করে আর ডলি আড়ালেই রয়ে যায়। অন্যদিকে ডলি তার স্বামীর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের সম্পদের মালিক হয়ে যান। তিনি ভাবেন এখন তো আর সানহুবারকে দিনের-পর-দিন চিলেকোঠায় লুকিয়ে রাখতে হবে না। কারণ এখন থেকে তো সে ডলির সঙ্গে থাকতে পারবে।এই ভেবে ডলি তো মহাখুশি। 

তবে এরই মাঝে ডলি তার আইনজীবী হারম্যান সাফেরওর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এদিকে ডলি হঠাৎ একদিন একটি ভুল করে ফেলেন। তিনি তার স্বামীর হিরার আংটি তার প্রেমিক হারম্যানকে দেখিয়ে দেন। তিনি বলেন, এই ঘড়ি তিনি গদির নিচে পেয়েছেন। তাই পুলিশকে বলার দরকার নেই। 

এরপর ১৯২৩ সালে ডলি আবারও আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পরলে তাকেও তার স্বামীর খুনের ব্যাপারে সব বলে ফেলেন।

তবে এর কিছুদিন পরেই তার স্বামীর সম্পর্ক বেশ জটিল আকার ধারণ করে। এরপর পুলিশ ফ্রেডের আসল খুনের ব্যাপারে জানতে পেরে যান। যার ফলে পুলিশ ডলিকে এরেস্ট করে নেন। তবে তারা কিছুতেই বুঝতে পারছিল না ডলি তার নিজেকে কীভাবে ঘরে আটকে রাখতে পারে। যার কারণে নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ না থাকায় ডলিকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। 

কিন্তু সে সময় ডলি আরেকটি ভুল করে বসেন। তিনি হারম্যানকে সানহুবারের ঘর থেকে খাবার আনতে পাঠান।  ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অন্য কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলতে না পারায় সানহুবার  হারম্যানকে দেখে খুশি হয়। কিন্তু হারম্যান সানহুবারকে দেখামাত্রই চিলেকোঠা থেকে বের করে দেয়। 

এ ঘটনার পর সানহুবার ভয়ে প্রাণ বাঁচিয়ে কানাডায় চলে যান। ১৯৩০ সালের দিকে হারম্যান ও ডলির সম্পর্ক বেশ খারাপ দিকে চলে গেলে হারম্যান পুলিশকে সব কিছু বলে দেয় কারণ তাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গিয়েছে ততদিনে।

এদিকে লস এঞ্জেলেস ফিরে এসেছিলেন সানহুবার। তখনই তার কাছ থেকে সেই রাইফেল উদ্ধার করে পুলিশ। তখন ডলিকেও গ্রেফতার করা হয়। পহেলা জুলাই ফ্রেডকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয় ডলি ও সানহুবার। তবে এই ধরনের অপরাধে সীমাবদ্ধতা ছিল সাত বছর। ফ্রেডের মৃত্যুর পর চার বছর কেটে যায় তাই সানহুবারকে শাস্তির বিধান বাদ দেয়া হয়েছিল। এরপর ডলিও খালাস পেয়ে যান। 

তবে এতো কিছুর পর আবারও নতুন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যান ডলি।  তারা বিয়ে করে নেন। দীর্ঘ ৩০ বছর তার একসঙ্গে ছিলেন। ১৯৬১ সালে ডলি মারা যায়। 

এদিকে সানহুবার লস অ্যাঞ্জেলস ছেড়ে চলে যান। তবে তার এই ঘটনা জানাজানির পর লস এঞ্জেলসের সবাই তাকে ব্যাটম্যান বলেই চিনতেন।

তবে ডলি অন্যজনের সঙ্গে ঘর করলেও সানহুবার কিন্তু জেল থেকে বেরিয়েও শান্তি পাননি। আজীবন খুনীর অপবাদ নিয়েই বেঁচেছেন।

আমারসংবাদ/এডি