Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

সুমি একজন নারীবাদী মেয়ে

মে ৮, ২০২১, ০২:২০ পিএম


সুমি একজন নারীবাদী মেয়ে

সুমি একজন নারীবাদী মেয়ে। ফেসবুকে সে নারীদের সমঅধিকার নিয়ে লেখালেখি করে। তার ২০ হাজার ফলোয়ার। সে মনে করে, নারীদের পুরুষের মতই চলাফেরা করা উচিত। তাই সে বাসায় লুঙ্গি ও সেন্ডো গেঞ্জি পরে থাকে। মাঝেমধ্যে সে লুঙ্গি উচিয়ে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করে। তবে দুই পায়ের উরু ভিজে যায় বলে তখন তাকে গোসল করতে হয়।

একদিন ফেসবুকে এক ছেলেকে সে দেখেছে সেন্ডো গেঞ্জি পরে পিক আপ্লোড দিতে। এই দেখে সে স্ট্যাটাস দিল, ছেলেরা পারলে মেয়েরা পারবে না কেন? কমেন্টে সবাই সহমত পোষণ করল। দুই ঘন্টা পর সুমি সেন্ডো গেঞ্জি পরা পিক আপ্লোড দিল। কিন্তু কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড এর অজুহাত দেখিয়ে ফেসবুক ছবিটি সরিয়ে ফেলে। এইজন্য সুমি মার্ক জাকারবার্গকে 'চিফ মেন্টালিটির পুরুষ' বলে স্ট্যাটাসে গালি দেয়।

সুমি আজ নিউমার্কেট যাবে। তার পরনে জিন্সের পেন্ট ও টি শার্ট। সে লোকাল বাসে উঠেছে। বাসে সিট খালি নেই। বাসের সামনের দিকে বসা এক ভদ্রলোককে সুমি জিজ্ঞেস করল, "মহিলাদের সিটে বসছেন কেন?" ভদ্রলোক কথা না বাড়িয়ে সিট ছেড়ে দিল। এখন সুমি বসে আছে আর ঐ ভদ্রলোক তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।

বাস স্টপেজে আস্তে আস্তে যাচ্ছে। লোকজন ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠছে–নামছে। এমতাবস্থায় পিছন থেকে ধাক্কা খেয়ে ভদ্রলোক সুমির হাতের উপর পরে গেল। সুমি প্রতিবাদী ও সোচ্চার হয়ে উঠলো ;

- আপনাদের মত পুরুষদের জন্যই মেয়েরা ঘর থেকে বের হতে পারে না।
- স্যরি।
- শুধু স্যরি বললে হবে না। আপনাকে পায়ে ধরে মাফ চাইতে হবে।
- কিসব উল্টাপাল্টা বকছেন?
- আমি উল্টাপাল্টা বকছি না। দাড়ান, আপনার একটা ছবি তুলি। আপনি জানেন না আমি কে। আমি অন্যসব মেয়েদের মত না যে সহজে ছেড়ে দিবো।
- আপনি নারীবাদী?
- হ্যাঁ।
- সমঅধিকার নিয়ে কথা বলেন?
- হ্যাঁ।
- তাহলে আপনার নারীবাদ সিট থেকে উঠে দেখান। দাঁড়িয়ে দেখাইলে সবাই দেখবে। ঐটা আমার সিট। আপনি পরে আসছেন। সমঅধিকার অনুযায়ী সিটে আমি বসব। 

এখন ভদ্রলোক বসে আছেন আর সুমি তার পাশে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। বাসে দাঁড়িয়েই সে স্ট্যাটাস দিল, "লোকাল বাস এখন পটেনশিয়াল রেপিস্টে ভর্তি। নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়। " কমেন্টে সবাই সহমত পোষণ করল।
.
রিফাত অনেকদিন ধরেই সুমির লিস্টে আছে। সে নারীর অধিকার নিয়ে সুমির পোস্টে কমেন্ট করে। সব বিষয়েই সে সুমির সাথে সহমত পোষণ করে। তাই সুমিরও রিফাতকে ভালো লাগে।

একদিন সুমি রিফাতকে বলল, "যেহেতু আমাদের মানসিকতায় মিল আছে, চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি।" রিফাত অনেক ভেবেচিন্তে দেখল প্রস্তাবটা খারাপ না। যেহেতু নারীবাদী মেয়ে, নিশ্চয় দেনমোহর চাইবে না। কয়েকদিন খাওয়াদাওয়া করে ইজিলি ছেড়ে দেওয়া যাবে।

সুমি ও রিফাত কাজী অফিসে বসে আছে। সুমি জিজ্ঞেস করল, দেনমোহর কত হবে?

- কিসের দেনমোহর?
- বিয়ে করবে, দেনমোহর দিবে না?
- আমি তো তোমার কাছে দেনমোহর চাই নাই?
- তুমি বর, তোমার কিসের দেনমোহর? 
- তুমি না সমঅধিকারের কথা বলো? তাহলে দেনমোহর চাইছো কেন?
- এইসব বললে হবে না। কাবিন ২০ লাখ টাকা দিতে হবে।
- আশ্চর্য! টাকা দিয়ে আমি নারী রেখে নারীবাদী বিয়ে করবো কেন?

রিফাত উঠে চলে গেল। সুমি সেখানে বসেই রিফাতকে ফেইসবুক থেকে আনফ্রেন্ড করে দিল।

দশ বছর পর...
সুমির বিয়ে হয়নি। এই দশ বছরে অনেকেই সুমিকে আশ্বাস দিয়েছে বিয়ে করবে। কিন্তু সবাই সেক্স মিটিয়ে চলে গেছে। তাদের চলে যাবার সময় সুমি শুধু একটা কথাই বলেছে, "তোদের মত পুরুষদের জন্যই মেয়েরা ঘর থেকে বের হতে পারে না। "

[দুই]
নারীবাদী সুমির বিয়ে হয়েছে। নাটকীয় বিয়ে বলা যায়। আরিফ নামের এক ভদ্রলোক প্রি-প্ল্যান অনুযায়ী সুমির সাথে সেক্স করতে আসে। সুমি জানতো, অন্যদের মত আরিফও তাকে খেয়ে চলে যাবে। তাই সে রুমে আগে থেকেই একটা সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রাখে। আর রুমের বাইরে বিয়ের জন্য কাজী–স্বাক্ষী–উকিল বাবা সহ সবকিছু রেডি করা ছিল। আরিফ সাহেব রুমে ঢুকলেন আর কিছুক্ষণ পর তার বিয়ের কার্যক্রম শুরু হল।

আরিফ সাহেব বিরাট ডিপ্রেশনে ভুগছেন। সুমিকে বিয়ে করায় তার আগের বউ চলে গেছে। সেই বউ আবার আরেকজনকে বিয়ে করেছে। মনে হয় সে এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল। তারমধ্যে চারদিক থেকে শুনতে হচ্ছে, " ছিঃ আরিফ! তুমি শেষ পর্যন্ত একটা নারীবাদীকে বিয়ে করলে?" 

ঘরেও তার শান্তি নেই। সংসারের সব কাজ সুমি দুইভাগে ভাগ করে দিয়েছে। অফিস থেকে ফেরার পর রাতের রান্নাটা তাকেই করতে হয়। কাপড় ধুয়া থেকে শুরু করে ঘর ঝাড়ু দেওয়া, বাথরুম পরিষ্কার করা সবকিছুই এখন আরিফ সাহেব করেন। অবশ্য প্রতিশোধ হিসেবে তিনি সুমির টুথব্রাশ দিয়ে বাথরুমের কমোড পরিষ্কার করে থাকেন।

কাপড়চোপড় নিয়েও হয়েছে ঝামেলা। আরিফ সাহেবের শার্ট, পেন্ট, লুঙ্গিগুলো এখন সুমির দখলে। সুমিকে লুঙ্গি পরা অবস্থায় খুবই বিশ্রি লাগে। আরিফ সাহেবের মনে হয়, ঘরে একটা হিজড়া হাটাহাটি করছে।

সুমির আজ আবারও বমি হয়েছে। সে আগে আরো কয়েকবার প্রেগন্যান্ট হয়েছিল, কিন্তু একইসাথে আরিফ সাহেব প্রেগন্যান্ট হয়নি বলে সে বাচ্চা নষ্ট করে দিয়েছিল। দুইজন একইসাথে সেক্স করার পর সে প্রেগন্যান্ট হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আরিফ সাহেবের কিছুই হচ্ছে না, এটা সুমি মেনে নিতে পারছে না। সুমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলো, "শুধু মেয়েরা কেন বাচ্চা নিবে? পুরুষদেরকেও বাচ্চা নিতে হবে।" কমেন্টে সবাই সহমত পোষণ করলো।

সুমি তার ও আরিফের প্রেগন্যান্সি টেস্ট করালো। প্রেগন্যান্সি টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে সে ডাক্তারের কাছে গেল। ডাক্তার সুমিকে বললেন, "কংগ্রাচুলেশনস! আপনি মা হতে চলেছেন।"

– আর আমার স্বামী?
– উনি বাবা হতে চলেছেন।
– উনি মা হবেন না?
– মানে?
– এই রিপোর্টটা দেখে বলুনতো সে প্রেগন্যান্ট কি না।
– আমার মনে হয় আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন। আমি গাইনোকোলজিষ্ট। আপনি বরং একজন সাইক্রিয়াটিষ্টের কাছে যান।

সাইক্রিয়াটিষ্টের কাছে গিয়েও সুমির উপকার হল না। ডাক্তারকে তার পাগল মনে হল।

১০ মাস পর...
সুমির ছেলে হয়েছে। কিন্তু সে বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে দিচ্ছে না। তার বিশ্বাস, সমঅধিকার ক্ষুন্ন করে সে বাচ্চা জন্ম দিয়েছে, এবার বাচ্চাকে খাওয়ানোর দায়িত্ব তার বাবার। আরিফ সাহেব বিপদে পড়ে গেলেন। তিনি জানেন তার বুক থেকে দুধ বের হবে না, তারপরেও কয়েকবার ট্রাই করলেন। শেষে উপায় না পেয়ে বাজার থেকে গরুর দুধ ও লেকটোজেন নিয়ে আসলেন।

৭ বছর পর...
আরিফ সাহেব ছেলের নাম রেখেছেন শুভ। শুভ প্রথম শ্রেণীতে পড়ে। সে সুমিকে 'বাবা' বলে ডাকে। তার দুইটা বাবা। কিন্তু মা নেই। তার স্কুলের বন্ধুরা প্রায়ই তাদের মায়ের কথা বলে। কিন্তু শুভ বুঝতে পারে না এই 'মা' জিনিসটা আসলে কি !

লেখক: 
-ইমরান মাহমুদ ইমন

আমারসংবাদ/এআই