Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫,

পর্যটকদের মন কাড়ে শুভলং ঝর্ণা

মহুয়া জান্নাত মনি, রাঙ্গামাটি

আগস্ট ২২, ২০২০, ০৬:৩০ পিএম


পর্যটকদের মন কাড়ে শুভলং ঝর্ণা

পাহাড়ের বুক চিরে আছড়ে পড়ছে প্রবহমান সুরূল জলধারা। গুঁড়ি গুঁড়ি জলকনাগুলো আকাশের দিকে উড়ে গিয়ে তৈরি করছে কুয়াশার আভা। স্রোতধারার কলতানে নিক্কণ ধ্বনির উচ্ছ্বাস। শীতলতার পরশ। যেন সবুজ অরণ্যের প্রাণের ছোঁয়া এেঁকছে কেউ। বলছি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপূর্ব নৈসর্গিক সৃষ্টি রাঙ্গামাটির পাহাড়ি ঝর্ণাগুলোর কথা।

সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে এক অন্যরকম রূপ ধারণ করেছে পাহাড়ি ঝর্ণাগুলো। যার টানা প্রতিদিনই স্থানীয় পর্যটকদের ভিড় জমছে ঝর্ণাস্থলে। মন কেড়েছে আশপাশে জেলার পর্যটদেরও। ঝর্ণার আকর্ষণ কভিট-১৯ অর্থাৎ করোনার ভয়কেও যেন ম্লান করেছে সবার মধ্যে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,  রাঙ্গামাটি জেলায় অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড়ি ঝর্ণা থাকলেও নয়নাভিরাম ও বিষ্ময়কর প্রাকৃতিক প্রাচুর্য শুধু রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার শুভলং ইউনিয়ন ও ঘাগড়া ইউনিয়নে দৃশ্যমান।

রাঙ্গামাটি শহর থেকে ৩০-৩৫ কিলোমিটার দূরে বরকল উপজেলার শুভলং ইউনিয়ন। ইঞ্জিনচালিত বোর্ট বা স্পিটবোর্টে যেতে সময় লাগে এক থেকে ২ ঘণ্টা। অপরূপ কাপ্তাই হ্রদে ভাসতে ভাসতে দেখা মিলবে অসংখ্য সবুজ পাহাড়। দুই পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে এসেছে ছোট-বড় অন্তত ৮টি ঝর্ণা। এর মধ্যে মূল অর্থাৎ গিরিনির্ঝর ঝর্ণাটি সত্যিই আকর্ষণীয়।

প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে বর্ষায় জলধারার অবিরাম পতনে সৃষ্ট নিক্কণ ধ্বনিসমেত অপরূপ দৃশ্য না দেখলে কল্পনায়ও সে ছবি আঁকা অসম্ভব। বৃষ্টির প্রবল বর্ষণে যখন পাহাড় ফিরে পায় তার নবে যৌবনা। গিরিনির্ঝর ঝর্ণা তখন ফিরে পায় তার আদিরূপ। অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা এ ঝর্ণা সেজেছে নবরূপে। ঝর্ণা সতেজতায় পাহাড়ি ঝিরিগুলোহয়ে উঠেছে প্রাণচঞ্চল।

সাঁই সাঁই করে ধেয়ে চলে ঝিরির জলরাশি মিলেছে  হ্রদের প্রাণে। বহু আগেই দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতির বিস্তৃতি ঘটেছে রাঙ্গামাটি শুভলং গিরিনির্ঝর ঝর্ণার। পাহাড়ে ঝর্ণার শীতল ও চঞ্চলা জলধারা সকল পর্যটককেই কাছে টানে সহজে। তাই বর্ষা এলেই ঝর্ণা স্পটে ভিড় জমে দেশি-বিদেশি পর্যটকের।

তবে করোনার কারণে এবার বিদেশ কিংবা দেশের অন্য জেলার পর্যটকদের রাঙ্গামাটিতে আগম না থাকলেও ঝর্ণার ভিড় কিন্তু কমেনি। স্থানীয়দের পদাচারণায় মুখর ঝর্ণা স্পটগুলো। যা দেখে হূদয়-মন জুড়ে সৃষ্টি করে শিহরণ। তবে এ ঝর্ণাকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র করা হলেও রক্ষাণাবেক্ষণের অভাবে মরতে শুরু করেছে শুভলং ঝর্ণাটি।

একই দৃশ্য রাঙ্গামাটির ঘাগড়া কলাবান ঝর্ণার। রাঙ্গামাটি কলা বাগান ঝর্ণা। এটি জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়ন অবস্থিত। এ ইউনিয়নের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য পাহাড়ি ছড়া। এ পাহাড়ি ছড়ার একমাত্র উৎপত্তিস্থল ঘাগড়া ঝর্ণাটি। যা সবার কাছে আপাতত ‘কলাবাগান’ ঝর্ণা নামে পরিচিত। এখানে শুধু দেশি-বিদেশি পর্যটক নয়, রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানসহ আশপাশের জেলার স্থানীয়দের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মতো।

কলাবাগান ঝর্ণাস্থল এখন যেন আনন্দ উৎসবের ফোয়ারা। রাঙ্গামাটি শহরে থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে হলেও গাড়ি থেকে নেমে ছড়ার পথে হাঁটতে হয় আরও চার কিলোমিটার। কিছুটা সামনে এগুলেই দেখা মিলে ঝর্ণার স্বচ্ছ জল।

অসংখ্য ছোট-বড় পথরের গা ঘেঁষে ধেয়ে চলেছে স্রোতধারা। এ ঝর্ণার শীতলতায় প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠে পর্যটকরা। দূর হয়ে যায় সকল ক্লান্তি। ঝর্ণার পানিতে গা ভিজিয়ে আনন্দে হারিয়ে যাচ্ছে ভ্রমণপিপাসু নারী-পুরুষ। প্রায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের পদাভারে মুখরিত হয়ে থাকে ঝর্ণা স্পটটি।

রাঙ্গামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, রাঙ্গামাটির বিভিন্ন পাহাড়ে ছাট-বড় অসংখ্য ঝর্ণা রয়েছে। যা সত্যি পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এসব ঝর্ণাগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা খুবই প্রয়োজন। কারণ অপরিকল্পীত বৃক্ষ নিধনের ফলে পাহাড়ের মূল আকর্ষণ শুভলং ঝর্ণাটি আজ মরতে বসেছে। যার কারণে শুষ্ক মৌসুমে শুভলং ঝর্ণায় পর্যটক কমে যায়।

আমারসংবাদ/এসটি