Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই, ২০২৫,

ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিকার

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০, ০৬:৪২ পিএম


ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিকার

ক্যান্সার একটি কালান্তর ব্যাধি বা কর্কটরোগ অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজন সংক্রান্ত রোগসমূহের সমষ্টি। এখনো পর্যন্ত এই রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার রোগ সহজে ধরা পড়ে না, ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোনো চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয় না। বাস্তবিক অর্থে এখনো পর্যন্ত ক্যান্সারের চিকিৎসায় পুরোপুরি কার্যকর কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। ক্যান্সার সারানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এই রোগ সারানোর সম্ভাবনা অনেকাংশ বেড়ে যায়। ২০০ প্রকারেরও বেশি ক্যান্সার রয়েছে। প্রত্যেক ক্যান্সারই আলাদা আলাদা এবং এদের চিকিৎসা পদ্ধতিও আলাদা। বর্তমানে ক্যান্সার নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে এবং এ সম্পর্কে নতুন নতুন অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

ক্যান্সার নামটা ভয়ঙ্কর সৃষ্টিকারী। ভয়াবহতা সম্বন্ধে নতুন করে কিছু না বললেও চলে। বর্তমান সমাজে, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে এই ভয়ঙ্কর রোগে জীবন দান করেনি এমন লোক পাওয়া যাবে না। যুদ্ধ, প্লাবন ও দুর্ভিক্ষ, সমাজজীবনে সাময়িকভাবে আসে আবার চলে যায়।

এই বিধ্বংসী রোগ ক্রমাগত মানবসমাজকে ধ্বংসের দিগে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমার চেয়ে আরও বড় বড় মনীষী এর ধ্বংসলীলার বিবরণ দিয়েছেন। গত দুই যুগে এ রোগে যত রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন, কোনো যুদ্ধেও এত লোক জীবন দেয়নি।

এই রোগে মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও জীবননাশের কোনো হিসাব নেই। রাখা সম্ভবও নয়। অসহায় মানুষ অনবরত আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে, এই রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে। এই রোগের উৎপত্তি ও কারণ সম্বন্ধে অজ্ঞতা এবং চিকিৎসা পদ্ধতি সম্বন্ধেও অজ্ঞতা।

ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার বা মানুষকে রক্ষা করার একমাত্র পথ হলো রোগের কারণগুলো বিশ্লেষণ করা। আজকের বিষয় হলো ক্যান্সার নিরাময়। এই বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট হোমিও গবেষক ডা. এম এ মাজেদ।

তিনি বলেন, সাধারণ লোকে বলে ক্যান্সারের নাই অ্যান্সার। অর্থাৎ এ রোগের কোনো চিকিৎসা নাই।বাংলাদেশে  ক্যান্সার রোগী আছেন প্রায় ১৫ লাখ। আর তাদের মধ্যে প্রতিবছর মারা যান দেড় লাখ। বিশ্বে প্রতি বছর এক কোটি ৪০ লাখ আক্রান্ত ও ৮২ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্যে ৩০ বছর থেকে ৬৯ বছর বয়সি শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ রোগীর অকাল মৃত্যু হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ক্যান্সার আক্রান্তদের অকাল মৃত্যুরোধে দ্রুত রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা শুরুর ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। মানব দেহে যত রকম জটিল ও কঠিন রোগ আছে ক্যান্সার তার অন্যতম। মানুষের শরীরটা একটি চলমান ফ্যাক্টরি।

মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তৈরি করে শরীরের ভেতর ও বাইরে যে সব অঙ্গ-প্রতঙ্গ দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকটির নিদিষ্ট কাজ নির্ধারণ করে রেখেছেন। আমাদের নিত্যদিনের চলাফেরা ও খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির নির্দিষ্ট জীবন আচরণে অনিয়ম হলেই আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি।

বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। আমরা মানুষ বহুকোষী প্রাণী। অসংখ্য কোষের সমন্বয়ে মানবদেহ গঠিত হয়। প্রতিটি কোষের একটি নির্ধারিত আয়ুষ্কাল আছে। কোষ বিভাজনের মাধ্যমে শরীরে নতুন কোষ সৃষ্টি হয়। কিন্তু এটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে হলে শরীরে মাংসের দলা বা চাকা সৃষ্টি হয়।

এটিই টিউমার নামে পরিচিত। অনেক ক্ষেত্রে টিউমার ক্ষতিকর হয় না। কেবল ফুলে থাকে, এটি ‘বেনাইন টিউমার’ নামে পরিচিত। ক্ষতিকর টিউমারগুলো ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার নামে পরিচিত। শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত বা লসিকানালীর মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়ে অকাল মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। ক্যান্সার কোনোভাবেই সংক্রামক নয়, অর্থাৎ একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হয় না।

ক্যান্সার কি : বিশ্বের সমস্ত প্রাণীর শরীর অসংখ্য ছোট ছোট কোষের মাধ্যমে তৈরি। এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায়। এই পুরনো কোষগুলোর জায়গায় নতুন কোষ এসে জায়গা করে নেয়। সাধারণভাবে কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমতো বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়।

সাধারণভাবে বলতে গেলে যখন এই কোষগুলো কোনো কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখনই ত্বকের নিচে মাংসের দলা অথবা চাকা দেখা যায়। একেই টিউমার বলে। এই টিউমার বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যান্সার বলে।

বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনক্ষম হয়ে বৃদ্ধি পাওয়া কলাকে নিওপ্লাসিয়া (টিউমার) বলে এবং সেই রকম ক্রিয়াযুক্ত কোষকে নিওপ্লাস্টিক কোষ বলে। নিওপ্লাস্টিক কোষ আশপাশের কলাকে ভেদ করতে না পারলে তাকে বলে নিরীহ বা বিনাইন টিউমার।

বিনাইন টিউমার ক্যান্সার নয়। নিওপ্লাসিয়া কলা ভেদক ক্ষমতা সম্পন্ন হলে তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার এবং তার অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনক্ষম ভেদক ক্ষমতাযুক্ত কোষগুলোকে ক্যান্সার কোষ বলে। অনেক ক্যান্সার প্রথমে বিনাইন টিউমার হিসাবে শুরু হয়, পরে তার মধ্যেকার কিছু কোষ পরিবর্তিত (ট্রান্সফর্মেসন) হয়ে ম্যালিগন্যান্ট (অর্থাৎ ভেদক ক্ষমতাযুক্ত) হয়ে যায়।

তবে বিনাইন টিউমার ক্যান্সারে পরিবর্তিত হবেই তার কোনো স্থিরতা নেই। কিছু বিনাইন টিউমার সদৃশ ব্যাধি আছে যাতে ক্যান্সার হওয়া অবশ্যম্ভাবী, এদের প্রি-ক্যান্সার বলে। নামে বিনাইন অর্থাৎ নিরীহ হলেও বিনাইন টিউমারও চাপ দিয়ে আশপাশের কলার ক্ষতি করতে পারে।

মেটাস্ট্যাসিস হলো ক্যান্সারের একটি পর্যায়, যাতে ক্যান্সার কোষগুলো অন্যান্য কলাকে ভেদ করে ও রক্ত, লসিকাতন্ত্র  ইত্যাদির মাধ্যমে দূরবর্তী কলায় ছড়িয়ে যায়। স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর যদি আমরা ধূমপান করি তাহলে অন্যথায় এটি নাও হতে পারে।

ক্যান্সার আক্রান্তের প্রথম লক্ষণগুলো খেয়াল করতে হবে : দীর্ঘস্থায়ী আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে ক্লান্তিবোধ করেন অথবা অবসাদে ভোগেন তবে সেটা অনেক রোগেরই কারণ হতে পারে, হতে পারে ক্যান্সারও। মলাশয়ের ক্যান্সার বা রক্তে ক্যান্সার হলে সাধারণত এমন উপসর্গ দেখা যায়। তাই, আপনি যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ক্লান্তিবোধ করেন অথবা দীর্ঘসময় ধরে ক্লান্ত থাকেন, অবিলম্বে চিকিৎসাসেবা নিন।

আকস্মিক ওজন হ্রাস : কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ করেই দ্রুতগতিতে যদি ওজন হারাতে থাকেন, তবে ভাবনার কারণ আছে। অনেক ক্যান্সারই সাধারণত হুট করে ওজন কমিয়ে ফেলে। তাই শরীরের ওজনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে সবসময়।  প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসাসেবায় রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।

দীর্ঘদিনের ব্যথা : দৃশ্যত কোনো কারণ (যেমন জখম-আঘাত) ছাড়া যদি আপনি দীর্ঘদিন ধরে শরীরের কোনো স্থানে ব্যথায় ভোগেন, তবে তাতে ওষুধও কাজ না করলে এ নিয়ে ভাবনার কারণ আছে। শরীরের কোনো জায়গায় ব্যথা করছে তার ওপর নির্ভর করছে রোগী ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত নাকি ডিম্বাশয়, পায়ুপথ বা মলাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত।

অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ড : আপনি যদি শরীরের কোনো অংশে অস্বাভাবিক কোনো মাংসপিণ্ড দেখতে পান অথবা মাংস জমাট হতে দেখেন কিংবা এ ধরনের পরিবর্তন বুঝতে পারেন, তবে এটা তেমন কিছুরই লক্ষণ, যা আপনার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। এমনকি আপনার শরীরে কোনো পরিবর্তন স্বাভাবিক মনে হলেও পর্যবেক্ষণ করুন, এরপর অন্তত চিকিৎসককে জানান।

ত্বকে পরিবর্তন : অনেকেই ত্বকের ক্যান্সারের ব্যাপারে সচেতন নন। ত্বকে অস্বাভাবিক পরিবর্তনই এমন ক্যান্সার শনাক্ত করার সহজ উপায়। তাই ত্বকে অতিরিক্ত তিল বা ফ্রিকেল অথবা আঁচিলের দিকে খেয়াল করুন। যদি এর রং, আকারে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া, ফস্কুড়ি পড়ে যাওয়া এবং রক্তক্ষরণও অন্যান্য ক্যান্সারের উপসর্গ।

* দীর্ঘস্থায়ী কাশি আপনি যদি দেখেন যে ওষুধ সেবনের পরও কাশি সারছেই না, তবে শীতকালীন কাশির চেয়েও এটা বেশি কিছু ধরে নিতে হবে। আর এই কাশির কারণে যদি আপনার বুক, পিঠ বা কাঁধে ব্যথা করে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
 
* মল-মূত্র ত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তনে যদি মল বা মূত্রত্যাগের জন্য ঘন ঘন শৌচাগারে যেতে হয়, তবে এখানে ক্যান্সার নিয়ে ভাবনার কারণ আছে। ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যও মলাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণ। মূত্রত্যাগের সময় অন্ত্রে ব্যথা বা রক্তক্ষরণ মূত্রথলির ক্যান্সারের উপসর্গ।

অকারণে রক্তক্ষরণ : যদি কাশির সময় রক্তক্ষরণ হয়, তবে এটা ক্যান্সারের বড় লক্ষণ। এছাড়া স্ত্রী অঙ্গ (ভ্যাজিনা) বা মলদ্বার থেকে রক্তক্ষরণসহ এ ধরনের অন্যান্য অস্বাভাবিকতাও ক্যান্সারের উপসর্গ।

খাবার গ্রহণে সমস্যা : কেউ খাবার খেলেই যদি নিয়মিত বদহজমে ভোগেন, তবে পেট, কণ্ঠনালী বা গলার ক্যান্সার নিয়ে ভাবনার কারণ আছে। অবশ্য সাধারণত এসব উপসর্গকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। তবু অসুস্থতাকে কখনো এড়িয়ে যেতে নেই।

* অন্যান্য উপসর্গ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপরে উল্লিখিত উপসর্গগুলোকে ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ মনে করা হয়। তবে এর বাইরেও অনেক লক্ষণ আছে ক্যান্সারের। এগুলোর মধ্যে আছে পা ফুলে যাওয়া, শরীরের আকারে বা অনুভূতিতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ইত্যাদি।

সবশেষ কথা হলো, ক্যান্সারের অনেক কারণ বোঝাও যায় না, এমনকি অন্য ক্যান্সারের চিকিৎসার পরবর্তী পরিণতি হিসেবে আরেক ক্যান্সার দেখা দেয়। তাই শরীরের যেকোনো অসুস্থতাকেই গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে হবে। বিশেষ করে বয়স ৩০-৪০ বছর পেরিয়ে গেলে অবশ্যই প্রতি অর্ধবছর বা প্রতিবছর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।

ক্যান্সারের কারণ : জীবনযাপন প্রণালী, পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, ভৌগোলিক অবস্থান, বয়স, বংশানুক্রম ইত্যাদি বিষয় ক্যান্সার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। সাধারণত জীবাণু দ্বারা ক্যান্সার হয় না, তবে পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সারসহ কিছু ক্ষেত্রে জীবাণুর প্রভাব রয়েছে ক্যান্সার সৃষ্টিতে।

ক্যান্সার রোগীদের জন্য কিছু পরামর্শ : রেডিও থেরাপি বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে ক্যান্সার রোগীরা খাদ্যগ্রহণে কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হন, যার মধ্যে সাধারণ সমস্যাগুলো হচ্ছে— ক্ষুধামন্দা, খাদ্যের স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি কমে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, গ্যাস জমে পেট ফুলে থাকা, পেটে ব্যথা, শুষ্ক মুখ, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, বমি বমি ভাব, মুখে ঘা হওয়া, গলা ব্যথা ও ফুলে যাওয়া, বমি, ওজন হ্রাস প্রভৃতি।

এই বিরূপ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হয়ে পড়ে রোগীদের চরম খাদ্য বিতৃষ্ণার কারণে, যা মূলত কেমোথেরাপির ফল। এ জন্য খাদ্য গ্রহণের দুই-তিন ঘণ্টা আগে ও পরে কেমোথেরাপি বন্ধ রাখা বাঞ্ছনীয়। শর্করা এবং চর্বি থেকে ক্যান্সার রোগীরা অনেক শক্তি পাবে। অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা রোগীর জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত কিছু আমিষ।

* জরায়ুর ক্যান্সার, ব্রেস্ট, প্রোস্টেট এবং কোলন ক্যান্সার রোগীদের অতিরিক্ত চর্বিবহুল খাদ্য পরিহার করা দরকার। এ ছাড়াও অতিরিক্ত ক্যালরিবহুল খাদ্য গ্রহণ গলব্লাডার ও  এন্ড্রমেট্রিয়াম ক্যান্সারের জন্য ক্ষতিকর। বেশকিছু খাদ্য আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধী যেমন- আঁশযুক্ত খাবার কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিহত করে।

* পাকস্থলী ও খাদ্যনালীর ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার।

* ভিটামিন-এ ও ক্যারোটিন যুক্ত খাদ্য ফুসফুস, ব্লাডার ও গলনালী ক্যান্সার প্রতিরোধী। ফল ও সবজিতে ক্যান্সার প্রতিরোধী অনেক উপাদান আছে। ডালজাতীয় খাদ্যের মধ্যে সয়াবিন, মসুর, শুকনো সিমের বিচিতে ক্যান্সারবিরোধী উপাদান রয়েছে।

* সয়া খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ বাড়ালে তা ব্রেস্ট এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। লাইকোপেন ও ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- গাঁজর, টমেটো প্রভৃতি ও ভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

সাধারণ কিছু পরামর্শ : যতটুকু সম্ভব খাদ্য গ্রহণের চেষ্টা করা।

* প্রচুর তরল জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা। খাদ্য গ্রহণের মাঝে তরল পানীয় কম গ্রহণ করা। খাদ্য গ্রহণের ৩০ মিনিট আগে বা পরে বেশি করে পানি পান করে নেয়া।

* খাদ্য বা পানীয়ের গন্ধ পছন্দ না হলে সেটি গ্রহণ না করা। মুখ সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখা।

* কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে উষ্ণ তরল গ্রহণ করা। উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা যেমন- শুকনো ফল, মটরশুঁটি, সিমের বিচি, শস্যজাতীয় খাদ্য।
ডায়রিয়া হলে সোডিয়াম ও পটাসিয়ামযুক্ত তরল খাদ্য গ্রহণ করা।

* মুখ শুকিয়ে গেলে বরফের টুকরো বা চুয়িংগাম মুখে রাখা । বমি বমি ভাব থাকলে খুব গরম বা খুব ঠাণ্ডা খাদ্য ও তরল গ্রহণ না করা।

* মুখে ঘা থাকলে তরল পান করার জন্য স্ট্র ব্যবহার করা।এ ছাড়াও মুখে ঘা থাকলে টকজাতীয় ফল, মশলাযুক্ত খাবার, লবণাক্ত খাবার, শক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

* দিনে তিন-চারবার কুলি করলে মুখের ঘা উপশম হবে।

ক্যান্সারের হোমিওপ্রতিকার : মানবজীবনে যত দুরারোগ্য ব্যাধি আছে ক্যান্সার তার মধ্যে  একটি। তবে ধর্মীয় নিয়মনীতি মেনে চললে ও জীবন চলায় স্বাস্থ্যবিধি মানলে এ রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ক্যান্সারের চিকিৎসা করাটা সহজ। শরীরের যে অংশে ক্যান্সার ধরা পড়ে সেখান থেকে ক্যান্সার আক্রান্ত টিস্যু হোমিও ওষুধের মাধ্যমে অপসারণের চিকিৎসা দেয়া হয়।

এ রোগের চিকিৎসা প্রাথমিক অবস্থায় সারাতে না পারলে বিপদ হতে পারে। এ রোগ বেড়ে গিয়ে জটিল ও কঠিন আকার ধারণ করতে পারে। অনেক সময় জীবননাশের সম্ভাবনা দেখা দেয়। একুশ শতকের পৃথিবীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে হোমিও চিকিৎসাও ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে।

উন্নত হয়েছে হোমিও ওষুধের গুণগতমান। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে ওষুধ প্রয়োগ করলে হোমিও চিকিৎসায় দ্রুত সুফল পাওয়া যায়। আশার কথা এই যে, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে পারলে বেশিরভাগ ক্যান্সারেরই  হোমিও চিকিৎসায় কার্যকর। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে আল্লাহর রহমতে হোমিওতে সম্ভব।

লেখক
সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য
স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি
কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান

আমারসংবাদ/এসটিএম