Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫,

আদালতে বিয়ের নামে প্রতারণা

শরিফ রুবেল

অক্টোবর ২১, ২০২০, ০৬:২৯ পিএম


আদালতে বিয়ের নামে প্রতারণা

আদালতে বিয়ে। বর্তমানে আদালতে বিয়ে নামক রেওয়াজের প্রবণতাও বেশি। তবে বিয়ের পর প্রতারিত হলে এর নেই কোনো আইনি প্রতিকার। প্রতিকার চাওয়ার জায়গাও নেই। কারণ কোর্ট ম্যারিজের নামে আইনি কোনো শব্দই নেই। নেই কোনো আইনগত ভিত্তি। নেই প্রতিকার চাওয়ার দালিলিক প্রমাণাদিও।

ফলে আদালতে এফিডেভিট নামক বিয়ের ফাঁদে পড়ে সংসার হারাচ্ছেন হাজারো নারী। কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন। সংসার ফিরে পেতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েও পাচ্ছেন না সমাধান। নোটারি করে আদালতে বিয়ে হয়, সংসারও হয়, কিন্তু কিছুদিন পরই বিয়ের কথা অস্বীকার করার ঘটনাও ঘটছে অহরহ।

ভুক্তভোগী আইন-আদালত করেও আইনি গ্যাঁড়াকলে পড়ে হচ্ছেন ধরাশায়ী। অপরাধীকে দিতে পারছেন না শাস্তি। মূলত তরুণ-তরুণীরা বাবা-মায়ের অমতে পালিয়ে বিয়ে করে আর এর অধিকাংশই নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করে।

ফলে কাবিন রেজিস্ট্রির পরিবর্তে নোটারি বিয়ে অধিকতর শক্তিশালী— এ ভুল ধারণার ফাঁদে পড়ে দাম্পত্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক নারী। আর আইনের ছদ্মাবরণে একশ্রেণির নোটারি পাবলিক এ অবৈধ কাজে সহায়তা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। ফুলে ফেঁপে উঠছেন এসব প্রতারকরা আর প্রতারিত হয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন নারীরা।

অথচ বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ‘কোর্ট ম্যারিজ ও আদালতে বিয়ের’ বিষয়ে কিছুই উল্লেখ নেই, এমনকি এর কোনো অস্তিত্বও নেই। এ বিয়ে থেকে বিরত থাকতে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনাও দেয় হচ্ছে।

তবুও কমছে না নোটারি বিয়ে। ২০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে কিংবা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে গিয়ে হলফনামা করাকে বিয়ে বলে অভিহিত করা হলেও এফিডেভিট বা হলফনামা শুধুই একটি ঘোষণাপত্র হিসেবেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তাদের দাবি, আদালতে শুধু তালাকই হয়, বিয়ে হয় না।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যেহেতু তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আদালতে বিয়ের প্রবণতা বেশি তাই এ বিষয়টা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে এর একটা বিধিমালা করা উচিত। আর চাইলে বর্তমান আইনেও এটা সংযোজন করে দেয়া সম্ভব। তাহলে বিয়ের পরে কেউ অস্বীকার করার সুযোগ কম পাবে আর অস্বীকার করলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। কোর্ট ম্যারিজের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করে প্রচার-প্রচারণা চালানোর তাগিদও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সব চেয়ে বেশি এফিডেভিট বিয়ে সম্পন্ন হয় পল্টন, নীলক্ষেত, ফার্মগেট ও ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের আশপাশের নোটারি পাবলিক করা হয় এমন সাইনবোর্ড সম্বলিত দোকানগুলোতে। সেখানে ২০০ টাকার স্ট্যাম্পে নোটারি শেষে ভুয়া সিলমোহর দিয়ে স্ট্যাম্পিং করারও অভিযোগ রয়েছে। কোর্ট ম্যারিজ নাম হলেও এসব বিয়ে কোর্ট পর্যন্তও যায় না। এফিডেভিড শেষে দেয়া হয় না বিয়ের কোনো প্রমাণপত্রও।

ফলে বিয়ের কয়েক মাস পরে স্বামী বিয়ে অস্বীকার করলে বিয়ে হয়েছে এটা প্রমাণ করাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে ভুক্তভোগী নারীদের। অথচ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে নোটারি পাবলিক এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে পড়াতে বা নিবন্ধন করা যাবে না এ বিষয়টি জনসাধারণকে ব্যাপকভাবে অবহিতকরণের জন্য নির্দেশ দেয়া হলেও থামছে না নোটারি বিয়ে।

জানা যায়, বর্তমানে বিশেষ কয়েক শ্রেণির নারী-পুরুষের মধ্যে এ রকম বিয়ের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তার মধ্যে পোশাক শ্রমিক, প্রেমঘটিত তরুণ-তরুণী। তারা এটাও ভাবেন, শুধু এফিডেভিট করে বিয়ে করলে বন্ধন শক্ত হয়। কাজী অফিসে বিয়ের জন্য বিরাট অঙ্কের ফিস দিতে হয় বলে কোর্ট ম্যারিজকে অধিকতর গুরুত্বসহকারে বেছে নেন নিম্নবিত্ত শ্রেণির নারী-পুরুষরা।

এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে সম্পাদন করে একাধিক বিয়ের কথা গোপন করা যায় বলেও এদিকে বেশি ঝুঁকছেন বিবাহিতরা। আবার মেয়ের অভিভাবককে জিম্মি করে টাকা আদায় কিংবা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্যও এফিডেভিটের মাধ্যমে ভুয়া বিয়ের দলিল তৈরি করা হচ্ছে।

এ দলিল তৈরি করা খুব সহজেই সম্ভব এবং এসব ক্ষেত্রে হলফনামা প্রার্থীকে নোটারি পাবলিকের কাছে হাজির হতে হয় না বলেই বাড়ছে এই ভুয়া বিয়ের সংখ্যা। আদালতে বিয়ে  প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ১৮ বছরের কম বয়সি মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা থেকে রক্ষার জন্য আসামি পক্ষের এ রকম হলফনামা তৈরির প্রবণতা দেখা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানকালে নোটারাইজড বিয়ের প্রবণতা বেশি, তবে এটা কোনো বিয়ের মধ্যে পড়ে না। এটা শুধুই একটা মৌখিক বিয়ে হিসেবেই ধরা হয়। এমন বিয়ে করে কেউ প্রতারিত হলে আইনি প্রতিকারও চাওয়ার সুযোগ থাকে না। অনেক আদালতে বিয়ে সম্পর্কে  অজ্ঞ।

এ বিয়ে সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানার কারণে পরবর্তী সময়ে অনেক আইনি ঝামেলার মধ্যেও পড়তে হয়। অনেক সময় প্রেমিক-প্রেমিকা আদালতপাড়ায় আইনজীবীর চেম্বারে গিয়ে বলেন তারা এমন নামমাত্র বিয়ে করতে চান।

অনেক আইনজীবীও এ বিয়ের বিষয়টি ব্যাখ্যা না দিয়ে বিয়ের একটি হলফনামা সম্পন্ন করে দেন। কিন্তু কোর্ট ম্যারিজ বলতে আসলে কী বোঝায়? আইনে কোর্ট ম্যারিজ বলে কোনো বিধান নেই। এটি একটি লোকমুখে প্রচলিত শব্দ। সুতরাং কোর্ট ম্যারিজ করার পরে কাজির কাছে গিয়ে নিকাহ রেজিস্ট্রি বাধ্যতামূলক।

আদালতে এফিডেভিট বিয়ের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী সিরাজ প্রমাণিক বলেন, কোর্ট ম্যারিজ আমাদের সমাজের মনুষ্য সৃষ্ট একটি শব্দ ছাড়া আর কিছু নয়। প্রচলিত অর্থে এফিডেভিট বলতে সাধারণত হলফনামার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ের ঘোষণা দেয়াকেই বোঝানো হয়ে থাকে। বর্তমান আইন অনুযায়ী বিয়ে নিবন্ধন করার দায়িত্ব মূলত বরের। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিয়ে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।

অন্যথায় কাজি ও পাত্রের দুই বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় ধরনের সাজার বিধান রাখা হয়েছে। আদালতে বিয়ে স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই প্রভাবমুক্ত সম্মতির প্রমাণ বহন করে।

ফলে পরবর্তীতে কন্যার পরিবারের পক্ষ থেকে অপহরণ বা অন্য কোনো ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে বরপক্ষের জন্য ঢাল হিসেবে কাজ করতে পারে। স্ত্রীর দেনমোহর ও ভরণপোষণ আদায়ের জন্য কাবিননামার প্রয়োজন হয়। সন্তানের বৈধ পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য কাবিননামার প্রয়োজন হয়। কাবিননামা ছাড়া শুধু বিয়ের হলফনামা সম্পন্ন করা হলে বৈবাহিক অধিকার আদায় দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও নারী অধিকারে সোচ্চার ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আমার সংবাদকে বলেন, কোর্ট ম্যারিজ বলতে কিছু নেই। এটা শুধু গ্রামের মানুষ মৌখিকভাবে বলে থাকে। এর কোনো নীতিমালা ও বিধিমালা কিছুই নেই। সে জন্যই কেউ প্রতারিত হলে প্রতিকারও চাওয়া যায় না। আদালতে বিয়ে স্বীকৃত কোনো বিয়ে না।

তবে যদি কেউ আদালতে এফিডিভিট করেও থাকে তাহলে পরবর্তিতে কাজি অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রি করে নিলে আর কোনো ঝুঁকি থাকে না। আমি মনে করি, যে বা যারে এটাকে বিয়ে বলে সংসার শুরু করেন, তারা অপরাধ করছেন। এটাও শাস্তিযোগ্য। আইন অনুযায়ী আদালেত শুধু তালাক হয়, বিয়ে হয় না।

একটি কাবিনবিহীন বিয়ে প্রমাণে একটি কেইস স্টাডি : মমতাজ বেগম ও আনোয়ার হোসেন ভালোবেসে বিয়ে করেন। দুজন স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঘর-সংসার করতে শুরু করেন। কিন্তু তাদের মধ্যে বিয়ের কোনো কাবিননামা রেজিস্ট্রি হয়নি। একপর্যায়ে আনোয়ার হোসেন মমতাজ বেগমের কাছে যৌতুক দাবি করে নির্যাতন করে এবং যৌতুক না পাওয়ায় মমতাজ বেগমকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। মমতাজ বেগম তার ভরণপোষণ এবং দেনমোহর চেয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা ঠুকে দেন। কিন্তু বিধিবাম, আনোয়ার হোসেন মমতাজ বেগমের সঙ্গে তার বিয়েকে অস্বীকার করে আদালতে জবাব দাখিল করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এদিকে মমতাজ বেগমও দাবি করেন, তাদের মধ্যে মুসলিম আইন অনুযায়ী বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে এবং তারা দীর্ঘদিন স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই একত্রে বসবাস করছেন। মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে পারিবারিক আদালত আদেশ দেন, তাদের মধ্যে বিয়ের অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে। পারিবারিক আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ আনোয়ার হোসেন ১৯৯৬ সালে হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন দায়ের করেন।

হাইকোর্ট বিভাগের একটি একক বেঞ্চ ১৯৯৯ সালে পারিবারিক আদালতের আদেশটি খারিজ করে দেন। ফলে পার পেয়ে যায় আনোয়ার। হাইকোর্ট বিভাগ তার রায়ে বলেন, তাদের মধ্যে কোনো প্রকার কাবিননামা সম্পন্ন হয়নি, যা বিয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং মমতাজ বেগম তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

হাইকোর্ট বিভাগের এ রায়ের বিরুদ্ধে মমতাজ বেগম লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) দায়ের করেন এবং আপিল মঞ্জুর হয়। আপিল বিভাগে মমতাজ বেগমের পক্ষে ২০০৩ সালে আপিলটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাবেয়া ভূঁইয়া। সিভিল আপিল নাম্ব্বার-১৩৯/২০০৩। তিনি আপিলে দাবি করেন, কাবিননামার অনুপস্থিতিতে বিয়ের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যাবে না এই মর্মে হাইকোর্ট বিভাগের বিবেচনা যুক্তিসঙ্গত নয় এবং তা আইনের সঠিক মর্ম নয়।

অবশেষে ৩১ জুলাই ২০১১ তারিখে আপিল বিভাগ মমতাজ বেগমের পক্ষে রায় দেয়। মমতাজ বেগম বনাম আনোয়ার হোসেন মামলায় আপিল বিভাগের রায়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা মন্তব্য করেছেন, মুসলিম নর ও নারী যদি স্বামী ও স্ত্রীর পরিচয়ে দীর্ঘদিন বসবাস করেন এবং তাদের মধ্যে যদি রেজিস্ট্রিকৃত কাবিননামা না-ও হয়ে থাকে, তাহলেও এখানে বৈধ বিয়ের অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকতে পারে। তারা উভয়ে স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের মধ্যে মুসলিম আইন অনুযায়ী বৈধ বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বলেও গণ্য হতে পারে।

ফলে  মোকদ্দমা থেকে  জানা যায়, কাবিননামা ছাড়া স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করলে বৈধ বিয়ের অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকতে পারে। তবে বিষয়টি, ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। আইনে খারিজও হয়ে যেতে পারে। কারণ এহেন কাবিনবিহীন বিয়ে প্রমাণে গ্রাম্য সহজ-সরল মানুষকে পড়তে হবে নানা ঝক্কি-ঝামেলায়।

আইন কি বলে, কখন এফিডেভিট করা যায় : আইন অনুযায়ী কাবিন রেজিস্ট্রি ও বিয়ের আনুষ্ঠিকতা সম্পন্ন করে বিস্তর ঘোষণার জন্য এফিডেভিট করা যাবে। মুসলিম বিয়ে ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০০৯-এর ২২ (২ ও ৩) ধারা অনুযায়ী, নিকাহ রেজিস্ট্রার স্বয়ং বিয়ে সম্পন্ন করলে, তিনি নিকাহ রেজিস্ট্রারের সংশ্লিষ্ট কলামসমূহ পূরণ করবেন বা নিকাহ রেজিস্ট্রার ব্যতীত অন্য কোনো বিয়ে সম্পন্ন করা হলে, ওই ব্যক্তি যিনি নিকাহ সম্পন্ন করেছেন তিনি বিয়ের ১৫ দিনের মধ্যে ওই এলাকার নিকাহ রেজিস্ট্রারকে বিষয়টি অবহিত করবেন এবং নিকাহ রেজিস্ট্রার কলাম পূরণ-পূর্বক রেজিস্ট্রারে যে সকল ব্যক্তির স্বাক্ষর লাগবে তাদের স্বাক্ষর গ্রহণ করবেন।

এরপর এফিডেভিট করা যায়, যার আইনগত মূল্য রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে লাইসেন্সবিহীন কাজীর কাছে বিয়ে রেজিস্ট্রি করলে এর কোনো আইনত মূল্য নেই। ব্যাখ্যা : নিকাহ রেজিস্ট্রার’ Muslim Marriages and Divorces (Registration) Act, ১৯৭৪-এর অধীন লাইসেন্সপ্রাপ্ত নিকার? রেজিস্ট্রার Christian Marriage Act, 1872, Special  Marriage Act, ১৮৭২ ও হিন্দু বিয়ে নিবন্ধন আইন-২০১২ এর অধীন নিয়োগপ্রাপ্ত নিকাহ রেজিস্ট্রার।

বিয়ে রেজিস্ট্রেশন না করার শাস্তি : ৫০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে কিংবা ১৫০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের (প্রথম/দ্বিতীয়/তৃতীয় শ্রেণির) কাছে করা হয়। এফিডেভিট বা হলফনামা শুধু একটি ঘোষণাপত্র।

মুসলিম বিয়ে ও বিচ্ছেদ আইন ১৯৭৪, এর ধারা ৫ অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক সকল বিয়ে আইন অনুযায়ী সকল পদ্ধতি মেনে যথাসময়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। যদি কেউ রেজিস্ট্রেশন না করেন তবে সর্বোচ্চ শাস্তি তিন মাসের কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

রেজিস্ট্রেশন না করলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা : বিয়ে রেজিস্ট্রেশন না করে শুধু হলফনামায় ঘোষণা দিয়ে ঘর-সংসার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। আনুষ্ঠানিক বিয়েতে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয় বলে কোর্ট ম্যারিজকে অধিকতর ভালো মনে করছে অনেকেই।

আবার অনেকেই একাধিক বিয়ের কথা গোপন করার জন্য এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে সম্পাদন করে। দেখা যায় কোনো একপক্ষ অপর পক্ষকে জিম্মি করে টাকা আদায় কিংবা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যও এফিডেভিটের মাধ্যমে ভুয়া বিয়ের দলিল করে থাকে।

এফিডেভিটের মতো দলিল খুব সহজেই তৈরি করা যায় এবং এফিডেভিট বা হলফনামা প্রার্থীকে ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের কাছে হাজির হতে হয় না। ফলে কম বয়সি ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়িয়ে দেয়ার সুযোগ থাকে। সুতরাং রেজিস্ট্রেশন ছাড়া শুধু এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে করতে চাইলে তা বৈধ্য হবেই না, বরং প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনাই অনেক বেশি।

প্রতারণা বন্ধে আইনজীবীদের পরামর্শ : বর-কনের পরিচয় দানকারীর পূর্ণাঙ্গ নাম, ঠিকানা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া শুধু কোর্ট ম্যারিজের নামে এফিডেভিটের বিয়ে বন্ধ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রী বা স্বামী থাকা সত্ত্বেও তা গোপন করে একাধিক বিয়ে করে।

এক্ষেত্রে বিয়ের আগেই ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আইনে নাবালক কিংবা শিশুর বয়স সম্পর্কে সুস্পষ্ট সংজ্ঞা নেই। একাধিক আইনে ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা থাকলেও বিয়ের ক্ষেত্রে ১৮ (মেয়ে) ও ২১ (ছেলে) মেনেই বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। কোনোভাবেই বাল্যবিয়ের মতো আইনবিরোধী কাজ করা যাবে না।

এতে অনেক তথ্য গোপন করতে হয় যা পরবর্তিতে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে এবং প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। কোনোভাবেই অপহরণ ও ভয়-ভীতির মাধ্যমে সৃষ্ট বিয়ে রেজিস্ট্রি করা যাবে না। জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট ও ভোটার আইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি) নম্বর কাবিননামায় উল্লেখ করতে হবে।

বিয়েতে উভয়পক্ষের একাধিক সুস্থ, সবল ব্যক্তি এবং নিকাহ রেজিস্ট্রার ও মৌলভি সাক্ষী হিসেবে থাকতে হবে। বিয়ের ১৫ দিনের মধ্যে বিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। কাবিননামায় দেনমোহর সম্পর্কে বিস্তারিত ও স্পষ্ট বর্ণনা থাকা লাগবে। পক্ষগণ চাইলে আনুষ্ঠানিক বিয়েও রেজিস্ট্রি করার পর এফিডেভিট বা হলফনামা করতে পারেন।

আমারসংবাদ/এআই