Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

বদলেছে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ২২, ২০২০, ০৬:২০ পিএম


বদলেছে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা

প্রান্তিক মানুষ ঘরের কাছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পাবে। প্রয়োজন অনুপাতে ওষুধ পাবে। এমন স্বপ্ন দেখতেন বঙ্গবন্ধু। তাকে হত্যার মধ্যদিয়ে সেই স্বপ্ন অঙ্কুরে বিনষ্টের চেষ্টা হয়। কিন্তু স্বপ্ন অধরা রয়ে যায়নি।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পিতার স্বপ্ন পূরণে নিরলস কাজ করছেন। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে শুরু হয় পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পরিকল্পনা। তার মধ্যে অন্যতম কমিউনিটি ক্লিনিক। শুরুতেই বঙ্গবন্ধু যে মাটিতে ঘুমিয়ে আছেন সেখানেই তার স্বপ্নের ক্লিনিক চালু হয়।

২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় প্রথম কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই থেকে গত ২০ বছরে সারা দেশে প্রায় ১৩ হাজার ৮৪২টির বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তত তিনটি করে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে।

অর্থাৎ প্রায় ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি করে প্রাথমিক কমিউনিটি ক্লিনিক। এসব ক্লিনিকে প্রায় ২৮ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টিবিষয়ক সহায়তা এবং অন্যান্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। এ উদ্যোগের কারণে গত ১২ বছরে অসংখ্য পুরস্কার ও পদকে ভূষিত হয়েছেন।

স্বাস্থ্যসেবা খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী যত পুরস্কার অর্জন করেছেন তার অধিকাংশই স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের মাধ্যমেই অর্জন হয়েছে। গতকাল রোববার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ারের (সিবিএইচসি) উদ্যোগে আয়োজিত ইন্ডিভিজ্যুয়াল হেলথ আইডি কার্ড বিতরণ এবং হেলথ আউটকাম পরিমাপ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তার মধ্যে ইন্ডিভিজ্যুয়াল হেলথ আইডি কার্ড বিতরণ অন্যতম। এই আইডি কার্ডের মাধ্যমে সকল নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো। কমিউনিটি ক্লিনিক বাদ দিয়ে দেশে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন চিন্তা করা যাবে না। স্বাস্থ্য খাতের প্রাথমিকপর্যায়ের যত উন্নয়ন তা শুধু কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমেই অর্জিত হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে তিনটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।

গত ১২ বছরে বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের জন্য প্রধানমন্ত্রী নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুরস্কার অর্জন করেছেন স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে। দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকের অনেকগুলো এখন পুরনো হয়ে গেছে। সেগুলোকে নতুন করে তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেখানে চারটি করে কক্ষ থাকবে যা থাকবে সম্পূর্ণ টাইলসকৃত।

মন্ত্রী বলেন, জনসংখ্যার হিসাব বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের ঘাটতি থাকতে পারে। কিন্তু সেই হিসাবে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। কেননা আমাদের দেশে ওষুধের কোনো ঘাটতি নেই। বর্তমানে সংক্রমণের হার বেড়ে গেছে। বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ স্বাস্থ্যবিধি না মানা। আমরা মানছি না বলেই সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে গত ১২ বছরে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীতে টানেলসহ অসংখ্য মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তার মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক উল্লেখযোগ্য।

প্রান্তিকের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি ক্লিনিকের কারণে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের জন্য প্রশংসা রয়েছে। আমরা বলতে পারি, কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুগযুগ ধরে বেঁচে থাকবেন।

তিনি বলেন, ইন্ডিভিজ্যুয়াল হেলথ আইডি কার্ডের মাধ্যমে এখন থেকে প্রান্তিকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। আমরা যে বিনামূল্যে ২৮ ধরনের ওষুধ দিচ্ছি সেগুলো কোথায় যাচ্ছে সবকিছু সঠিকভাবে জানা যাবে। জনসাধারণকে সম্পৃক্ত না করে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে না বলে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, উন্নত বিশ্বে হেলথ কার্ড ও হেলথ ইন্স্যুরেন্সের প্রচলন রয়েছে। দেশে শুরু হলো ইন্ডিভিজ্যুয়াল হেলথ আইডি কার্ড বিতরণ। এর মধ্যদিয়ে স্বাস্থ্যসেবায় নতুন অধ্যয়ের সূচনা হলো।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান। পুষ্টি এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান সহজ থেকে সহজতর হচ্ছে। ইন্ডিভিজ্যুয়াল হেলথ আইডি কার্ডের মাধ্যমে এখন থেকে নিয়মিত নজরদারি করা যাবে যে, সবাই সেবা পাচ্ছে কি-না। ফলে নিশ্চিত করা সহজ হবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি।

কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ সাপোর্ট ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, স্বাস্থ্য খাতে যে পরিমাণ ইতিবাচক কাজ হয়, অজ্ঞাত কারণে গণমাধ্যমে তা প্রচার পাচ্ছে না।

যেমন- ভ্যাকসিন সম্পর্কে আমি ব্যক্তিগতভাবে যেটা জানি, মাননীয় মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে এগিয়ে নিচ্ছেন, কোথাও কোনো শূন্যতা নেই। কিন্তু জনসাধারণের কাছে তা যথাযথভাবে পৌঁছায় না। আর্ম ফোর্সেসের সঙ্গে ওয়েবিনারে একটি আলোচনায় অংশ নিয়েছিলাম।

আমার কাছ থেকে কিছু প্রশ্নোত্তর শুনে তারা অবাক হয়ে বললেন, আমরা তো এসব জানি না। তাই আমি অনুরোধ করবো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আপনারা যে সফলভাবে কাজগুলো করেছেন, তা বারবার গণমাধ্যমকে অবহিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানাতে হবে।

কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ারের (সিবিএইচসি) লাইন ডাইরেক্টর  ডা. সহদেব চন্দ্র রাজবংশী বলেন, সারা দেশে ১৩ হাজার ৮৪২টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। ইতোমধ্যে ১১ জেলার ২৩ উপজেলায় ইন্ডিভিজ্যুয়াল হেলথ আইডি কার্ড বিতরণ করা শুরু হয়েছে। আগামীতে সব কমিউনিটি ক্লিনিকে এই কার্ড বিতরণ করা হবে। সে লক্ষ্যে কাজ অব্যাহত রয়েছে।

আমারসংবাদ/এআই