Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বেড়েছে মৃত্যু নেই সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেম্বর ২৪, ২০২০, ০৬:৫৫ পিএম


বেড়েছে মৃত্যু নেই সতর্কতা

বিশ্ব সমস্যা করোনায় দেশে দেশে সতর্কতা। নেই শুধু বাংলাদেশে। প্রতিদিনই শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শনাক্তের হারও বাড়ছে হু হু করে। আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়েছে। এরপরও মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। মাস্ক পরার যে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে তাও মানছে না কেউ কেউ।

জনসচেতনতা বাড়াতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকার কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তবুও কার্যত অনুসরণ দেখা যাচ্ছে না। মানুষকে মাস্ক পরতে বাধ্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।

তিনি বলেছেন, বিষয়টি বেশি বেশি প্রচার করতে হবে। কারণ মাস্ক না পরলে যত কিছুই করা হোক কাজে আসবে না। নির্দেশনা মানতে কঠোর হচ্ছে সরকার। ৫০০ টাকার জরিমানার স্থলে পাঁচ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।

দেশের চলমান করো পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সংক্রমণ ধরা পড়ার আট মাস ১৬ দিনের মাথায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে চার লাখ ছাড়িয়ে গেলো। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুই হাজার ২৩০ রোগী শনাক্ত হয়েছে; তাতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে চার লাখ ৫১ হাজার ৯৯০ জনে। গত একদিনে ৩২ জনের মৃত্যু হওয়ায় মৃতের মোট সংখ্যা ছয় হাজার ৪৪৮ জনে পৌঁছছে।

গত একদিনে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ২৫ জন, নারী সাতজন। তাদের মধ্যে ৩১ জন হাসপাতালে ও একজন বাড়িতে মারা গেছেন।

মৃতদের মধ্যে ১৯ জনের বয়স ছিলো ৬০ বছরের বেশি, পাঁচজনের ৫১-৬০, সাতজনের ৪১-৫০ এবং একজনের ৩১-৪০ বছর। ২৪ জন ঢাকা বিভাগের, চারজন চট্টগ্রাম বিভাগের, তিনজন রাজশাহী বিভাগের এবং একজন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা। দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ছয় হাজার ৪৪৮ জনের মধ্যে চার হাজার ৯৫৫ জনই পুরুষ এবং এক হাজার ৪৯৩ জন নারী।

মৃতদের মধ্যে তিন হাজার ৪১২ জনের বয়স ছিলো ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া এক হাজার ৬৮৩ জনের ৫১-৬০, ৭৮৬ জনের ৪১-৫০, ৩৪০ জনের ৩১-৪০, ১৪৫ জনের ২১-৩০, ৫১ জনের ১১-২০ এবং ৩১ জনের ১০ বছরের কম।

এর মধ্যে তিন হাজার ৪২২ জন ঢাকা বিভাগের, এক হাজার ২৪২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৩৯৪ জন রাজশাহী বিভাগের, ৪৮৮ জন খুলনা বিভাগের, ২১৫ জন বরিশাল বিভাগের, ২৬৩ জন সিলেট বিভাগের, ২৯২ জন রংপুর বিভাগের এবং ১৩২ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও দুই হাজার ২৬৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত একদিনে। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে তিন লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৭ জন।

শনাক্ত রোগীর সংখ্যার বিচারে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ২৫তম স্থানে আছে; মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৩২তম অবস্থানে। বিশ্বে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে সোয়া পাঁচ কোটি ৯২ লাখ পেরিয়েছে; মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১৩ লাখ ৯৭ হাজার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১১৭টি ল্যাবে ১৫ হাজার ১৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ২৬ লাখ ৮০ হাজার ১৪৯টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮১ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত ৮ মার্চ, তা ২৬ অক্টোবর চার লাখ পেরিয়ে যায়। এরপার ২৯ দিনে এই তালিকায় যুক্ত হলো আরও ৫০ হাজার নাম। এর মধ্যে গত ২ জুলাই চার হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা একদিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত।

প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৪ নভেম্বর তা ছয় হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৩০ জুন একদিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা একদিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক এবং সংস্থাটির উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, যেকোনো সংক্রমণে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারাই বেশি মারা যান। অসংক্রামক ব্যাধিকে মৃত্যুর বড় কারণ হিসেবে দেখছেন তিনি। দেশে ৫০ বছর পার হলেই নানা অসংক্রামক ব্যাধিতে ভুগতে থাকেন অনেকে।

যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হূদরোগ ও দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসতন্ত্রের রোগ আছে, তারাই বেশি কোভিড রোগে মারা যাচ্ছেন। তাই ইউরোপ-আমেরিকায় ৭০-৮০ বছর পার হলে যে ঝুঁকি, এখানে ৫০ পার হলেই সেই ঝুঁকি। তিনি বলেন, দেশে কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তোলা দরকার।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, মাস্ক না পরায় গতকাল কয়েক হাজার মানুষকে জরিমানা করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকায় গতকাল ৩৭টি জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।

এ পরিস্থিতি আরও এক সপ্তাহ দেখা হবে। এরপর আরও শক্ত অবস্থান নেয়া হবে। শক্ত অবস্থানটি কী হবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জরিমানা ৫০০ বা এক হাজারের জায়গায় পাঁচ হাজার টাকা হতে পারে, দেখা যাক।

আমারসংবাদ/এআই