Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

নতুন ধান উঠলেও চড়া চালের দাম

জাহাঙ্গীর আলম

নভেম্বর ৩০, ২০২০, ০৬:০০ পিএম


নতুন ধান উঠলেও চড়া চালের দাম

‘আগের হাটে অতিতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে এক হাজার ৭০ টাকা মণ ধান বিক্রি হয়েছে। বেশি দামে ভালোই লাগছিল। তাড়াহুড়ো করে ক্ষেত থেকে ধান তুলে মাড়াই করা হয়েছে। কিন্তু গত শনিবার দেখি হঠাৎ করে দাম কমে গেছে।

সরবরাহ বেশি হওয়ায় প্রতি মণ হাজার টাকার বেশি নিতে চায় না আড়ৎদাররা’— এভাবেই দাম কমার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার এনামুল হক।

কিন্তু রাজধানীর চালের পাইকারি বাজার কৃষিমার্কেটের শাপলা রাইস এজেন্সির মাঈনুদ্দিন জানান উল্টো কথা। বর্তমানে সব চালের দাম চড়া। নতুন ধান উঠলেও প্রতি বস্তায় বেড়েছে ১০০ টাকা। মোটা চাল এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। অবস্থা যা তাতে দাম কমবে না বলে জানান তিনি।

রাইস মিলমালিক থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ীরাও বলছেন একই কথা, কমবে না চালের দাম। গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষক থেকে চাল ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করে বাস্তবে ধান-চালের এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সারা দেশে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। করোনার কোনো ছাপ পড়েনি ক্ষেত-খামারে। ধান কাটা থেকে শুরু করে মাড়াই পর্যন্ত কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।

ইতোমধ্যে সমগ্র উত্তরবঙ্গ, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলার ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ প্রায় শেষ। গত সপ্তাহে ১১০০ টাকা পর্যন্ত মণ ধান বিক্রি হয়েছে। কষ্টের ফলানো ফসলের বাড়তি দামে কৃষকের মনে হাসি ফুটে উঠে।

যারা মাঠের ধান মাড়াই করতে পারেননি তাদেরও মনে আনন্দ উঁকি দিতে থাকে বেশি দামের আশায়। কারণ বোরো ধানের দাম হাজার টাকা মণ হয়। তার ধারা আমনে পড়ে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তায় ১১০০ টাকা মণ বিক্রি হয়। কিন্তু এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই কমে গেছে ধানের দাম।

দিনাজপুর জেলার কাহারোল থানার তাহির জানান, এবার বোরোর চেয়ে আমন ধানের দাম বেশি। খুবই ভালো লাগছে। দুই মণের বস্তা ২২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে জিরা ধানের দাম আরও একটু বেশি। বস্তা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের এই ধানের ফসল একটু কম হওয়ায় দামও বেশি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধান ভাঙা, আড়ৎদার খরচ, রাস্তা খরচসহ ঢাকার আড়তে পৌঁছাতে প্রতি কেজিতে দুই টাকা ব্যয় হয়। দুই মণ ধানে কম-বেশি চাল হয় ৫০ কেজি। ঢাকায় পৌঁছে ৪৬ টাকা কেজি দাম পড়ে। কিন্তু সেই চাল ঢাকার বাজারে পাইকারি ও খুচরাপর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা।

জানতে চাইলে শাপলার মাঈনুদ্দীন আমার সংবাদকে বলেন, এখনো বাজারে মোটা চাল পাওয়া যায় না। তাই বিক্রিও করতে পারছি না। ২৮ চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা এবং মিনিকেট ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা। যা এক সপ্তাহ কম দামে বিক্রি করা হয়। প্রতি বস্তা চালের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার বেশি দামে ধান কেনায় চালের দামও বাড়তি। তাই চালের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।

তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে সরকার ত্রাণ দেয়ায় বোরো ধানের পর থেকে শুরু করে আমন উঠলেও মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দোকানে রাখতে পারছি না।   

এনামুল হক জানান, রাজশাহীর তানোরের চৌবাড়িয়াহাট, নওগাঁর নিয়ামতপুরের খড়িবাড়িসহ বিভিন্ন হাটে এক সপ্তাহও থাকলো না ১১০০ টাকা মণ ধানের দাম। গত শনিবার এক হাজার ৭০ টাকা মণ দরে ধান নেবে বলেও নেয়নি আড়ৎদার। বাধ্য হয়ে এক হাজার ২৫ টাকা মণ বিক্রি করতে হয়েছে।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোলের রিয়াজ জানান, নভেম্বরের প্রথম সপ্তায় ধান উঠা শুরু হলে ১১০০ টাকা মণ বিক্রি হয়। কিন্তু সবার ঘরে ধান না উঠতেই কমতে শুরু করে ধানের দাম। গত শনিবার ১০২০ থেকে ১০৩০ টাকা মণ ধান বিক্রি করতে হয়েছে।

এর ফলে সব কৃষক বাড়তি দামে ধান বিক্রির সুযোগ পাচ্ছে না। এ দৃশ্য শুধু ওই কৃষকের নয়, সমগ্র উত্তরবঙ্গের সাথে সারা দেশের একই চিত্র। হঠাৎ করে কমে গেছে ধানের দাম। কিন্তু বাড়ছে চালের দাম।

দেশের বিভিন্ন জেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলনে ভোক্তারা কম দামে চাল কেনার স্বপ্ন দেখলেও পাল্টে গেছে দৃশ্য। কারণ রাজধানীর সবচেয়ে বড় চালের মোকাম কৃষিমার্কেটসহ বিভিন্ন বাজারে বেড়ে গেছে চালের দাম।

শাপলা রাইস এজেন্সির শিপন বলেন, মোটা চাল পাইকারি বিক্রি হয় ৪০ টাকা কেজি। ২৮ চাল ৪৮ টাকা এবং মিনিকেট ৫৫ টাকা। রাজধানীতে পাইকারি বাজারের মতো খুচরা বাজারেও বাড়ছে চালের দাম।

মোহাম্মদপুরের জনতা মার্কেটের খুচরা ব্যবসায়ী আক্তার এ প্রতিবেদককে বলেন, মোটা চাল ৪৫ টাকা কেজি, ২৮ চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা এবং মিনিকেট ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার চাল কেনায় আমনের ভরা মৌসুমেও কমছে না চালের দাম। অবস্থা যা মনে হচ্ছে কমবে না চালের দাম।  

সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী এ প্রতিবেদককে জানান, সরকার এবার ১০৪০ টাকা মণ ধানের দাম নির্ধারণ করেছে।

তারচেয়েও বেশি দামে ১১৩০ টাকা মণ ধান বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষক লাভবান হচ্ছে। সরকারের সাথে চুক্তি না হওয়ায় মিলাররা বাজারে ধান কিনছে না। তারপরও এ বাড়তি দাম। কিনতে শুরু করলে আরও বাড়বে দাম।

দেশে বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে অনেক ধানের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। তাই উৎপাদনও কম হবে। এ জন্য বোরোর মতোই আমনের ভরা মৌসুমেও কমছে না ধানের দাম। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় ভিন্ন চিত্র। বোরোতে বাড়লেও আমনের আগমনে কমে ধানের দাম। তাতে চালের দামও কমে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে জয়পুরহাটের এই রাইস মিলমালিক বলেন, এলাকাতেই ৪২ টাকা কেজি মোটা চাল। কিভাবে সরকারকে ৩৭ টাকা কেজি দেবো। লোকসান করে ব্যবসা করা যাবে না। তাই সরকারকে চাল নিতে হলে কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বাড়াতে হবে। তবেই চাল দেয়ার জন্য চুক্তি করবো। খাদ্য মন্ত্রণালয়কে এটা বলে দিয়েছি।

আমারসংবাদ/এআই