ডিসেম্বর ২, ২০২০, ০৬:৫০ পিএম
দেশে করোনার সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর থেকে এ ভাইরাসে কেউ মা হারিয়েছেন, কেউ বাবা, কেউ ভাই-বোন, কেউ স্বামী বা স্ত্রী। অনেকের অনেক আপনজন হারানোর পরও দেশের মানুষকে এ ব্যাপারে তেমন সচেতন হতে দেখা যায়নি।
বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, মাস্ক ব্যবহারে এই ভাইরাসের সংক্রমণ কমবে। পাশাপাশি প্রয়োজন অন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। কিন্তু রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, অফিস আদালতে অনেকেই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি, অনেকে বিরত থাকছেন মাস্ক পরা থেকে। অথচ মাস্ক না পরা একজন করোনা ভাইরাস বহনকারী রোগী থেকে আক্রান্ত হতে পারে অসংখ্য সুস্থ মানুষ।
আবার তাদের থেকে আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে পরিবারের অন্য সদস্যদের। সম্প্রতি করোনার টিকা নিয়ে একের পর এক সুখবর পাওয়া গেলেও আবিষ্কৃত সেসব টিকার সুফল উন্নয়নশীল দেশের মানুষ কতদিনে পাবে, তা অনিশ্চিত।
কারণ ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকা যে বিশেষ ব্যবস্থায় পরিবহন ও সংরক্ষণ করতে হবে, তা অনেক দেশেই দুর্লভ। অর্থাৎ এ দুই কোম্পানির টিকা ব্যবহার করতে হলে তা ক্রয় করার পরও পরিবহন ও সংরক্ষণ বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।
এ খাতে এত অর্থ বরাদ্দ করা অনেক দেশের পক্ষেই সম্ভব নয়। করোনার টিকা তৈরির দৌড়ে সামনে থাকা আরও বেশকটি কোম্পানির নাম শোনা গেলেও সেসব টিকা কতদিন পর আমাদের দেশে এসে পৌঁছাবে, তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
এসব বিবেচনায় নিয়ে করোনা মোকাবিলায় মাস্ক পরিধানসহ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টিতে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সমপ্রতি সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এ বিষয়ে কঠোর হয়েছে, যা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে এত পদক্ষেপ নেয়ার পর এখনো অনেকে নানা অজুহাতে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে উদাসিনতা প্রদর্শন করে চলেছে।
যারা মাস্ক ব্যবহার করছেন না, তারা নিজের পাশাপাশি আশপাশের মানুষকেও ঝুঁকিতে ফেলছেন। টিকা হাতে পাওয়ার আগে মাস্কই করোনা মোকাবিলার বড় ঢাল। অধিকাংশ মানুষ মাস্ক সঙ্গে থাকা সত্ত্বেও তা পরিধান করতে চান না।
এ অবস্থায় মাস্ক ব্যবহারে নগরবাসীকে সচেতন করতে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি, যাদের সাধারণভাবে অগ্রসর নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাদের মধ্যেও অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে উদাসীন।
এ পরিস্থিতিতে শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতেও নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ। আমাদের দেশে করোনা শুরু হয়েছিল গরমকালে। তখন মানুষ মাস্ক পরায় অভ্যস্ত ছিল না। অনেকে বলে থাকেন, মাস্ক পরলে অস্বস্তি লাগে। এখন শীতকাল।
তারপরও অনেকে মাস্ক পরায় উদাসীন কেন? বস্তুত এগুলো এক ধরনের অজুহাত। বিশ্বে ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬ কোটি ছাড়িয়েছে এবং মৃত্যু সাড়ে ১৪ লাখ ছাড়িয়েছে। এ তথ্যে করোনার ভয়াবহতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দেশে এখন চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। কার্যকর ও নিরাপদ ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে মাস্কের বিকল্প নেই।
প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মান্য করা নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এ জন্য শুধু মাস্ক পরা নিশ্চিতে কঠোর হলেই চলবে না, জনসচেতনা সৃষ্টিরও পদক্ষেপ নিতে হবে।
আমারসংবাদ/এসটিএম