Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

বেফাঁস মন্তব্যে বিব্রত আ.লীগ

রফিকুল ইসলাম

জানুয়ারি ১০, ২০২১, ১০:৩০ পিএম


বেফাঁস মন্তব্যে বিব্রত আ.লীগ

গত ৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার এক যুগ পূর্ণ করেছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার এক যুগে বিস্ময়কর উন্নয়নে দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন দলটির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে প্রসংশাও কুড়িয়েছেন তিনি। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যার এসব অর্জন ম্লান করে দিচ্ছেন দলটির দায়িত্বশীল পদে থাকা কিছু নেতা। তাদের একের পর এক  সরকার ও দলের দায়িত্বশীল নেতার বিরুদ্ধে বেফাঁস মন্তব্যে বিব্রত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

তারা বলছেন, দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সমস্যা থাকতে পারে, সেগুলো নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু রাস্তায় মাইক লাগিয়ে বলার কিছু নেই। দলীয় নিয়মের বাইরে কেউ নয়। কেউ যদি দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে গিয়ে নিজেকে আলাদাভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করে তাহলে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তথ্য মতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে নানামুখী দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। গত শনিবার দুপুরে হাইকোর্টের পাশে কদম ফোয়ারার সামনে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে তিনি এসব অভিযোগ করেন। ‘তার (বর্তমান মেয়র) দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলাবাজি, রাঘববোয়ালের মুখে চুনোপুঁটির গল্প মানায় না। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে হলে সর্বপ্রথম নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত করুন। তারপর চুনোপুঁটির দিকে দৃষ্টি দিন। তাপস দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তরিত করেছেন। এই শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং করছেন।

অপরদিকে অর্থের অভাবে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের গরিব কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মেয়র তাপস সিটি কর্পোরেশন আইন ২০০৯, দ্বিতীয় ভাগের দ্বিতীয় অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ৯ (২) (জ) অনুযায়ী মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছে দাবি করেন বলেন সাঈদ খোকন।’ যদিও সাবেক এই মেয়রের বক্তব্যকে ব্যক্তিগত আক্রোশ দাবি করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ‘কেউ যদি ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে কোনো কিছু বলে থাকেন, সেটার জবাব আমি দায়িত্বশীল পদে থেকে দেয়াটা সমীচীন মনে করি না।’

আগামী ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ৬১ পৌরসভায় অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। অনুষ্ঠিতব্য ওই নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী ও দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের আপন ছোট ভাই আবদুল কাদের গত ৩১ ডিসেম্বর সকালে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরভবন চত্বরে নিজ নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণাকালে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এমপিরা পালানোর দরজা খুঁজে পাবেন না’ উল্লেখ্য করেন বলেন, ‘বৃহত্তর নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু চামচা নেতা আছেন, যারা বলেন অমুক নেতা তমুক নেতার নেতৃত্বে বিএনপির দুর্গ ভেঙেছে।

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বৃহত্তর নোয়াখালীতে তিন-চারটা আসন ছাড়া বাকি আসনে আমাদের এমপিরা দরজা খুঁজে পাবে না পালানোর জন্য। এটাই হলো সত্য কথা। সত্য কথা বলতে হবে। আমি সাহস করে সত্য কথা বলছি।’ এরপর থেকেই নিজ কথায় অটুট রয়েছেন তিনি। পৌরসভা নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় ও সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা এবং স্থানীয় এমপিদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলছেন, ‘প্রকাশ্যে দিবালোকে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেন, তারা হচ্ছেন নেতা। টেন্ডারবাজি করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট যারা করেন, তারা হচ্ছেন নেতা। পুলিশের, প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি দিয়ে যারা পাঁচ লাখ টাকা নেন, তারা হচ্ছেন নেতা। গরিব পিয়নের চাকরি দিয়ে তিন লাখ টাকা যারা নেন, তারা হচ্ছেন নেতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকে আমি যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অপরাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলি। আমি যখন নোয়াখালীর ত্যাগী নেতাদের কথা বলি, তখন জাতীয়ভাবে আমাকে বলা হয়— আমি নাকি উন্মাদ পাগল।

১৬ তারিখে আমি প্রমাণ করবো, আমি পাগল না কী? সর্বশেষ গতকাল রোববারও তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এ নেতার এমন বক্তব্যের পর মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। যা নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ। আর এই সকল বক্তব্যে প্রশ্ন তুলছেন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।  গত বছরের ২১ নভেম্বর নিজ দল আওয়ামী লীগকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী দল’ বলে দাবি করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম। তার এমন বক্তব্য তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও এর অংঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। নিজ দল আওয়ামী লীগকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী দল’ বলায় তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেন দলটির জেলা সভাপতি মো. আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল। তারা বহিষ্কারের ওই চিঠিটির অনুলিপি পাঠানো হয়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক বরাবরও।

যদিও অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম  সে সময় এমন বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চান এবং বলেন, ‘মানুষ মাত্রই ভুল করে। আমার বক্তব্যের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি। একই সাথে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকবো বলে অঙ্গীকার করছি।’ আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এই নেতাদের প্রকাশ্যে এমন বক্তব্যে বিব্রত আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।

তারা বলছেন, দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সমস্যা থাকতে পারে। সেগুলো নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু রাস্তায় মাইক লাগিয়ে বলার কিছু নেই। দলীয় নিয়মের বাইরে কেউ নয়। দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে গিয়ে কেউ যদি নিজেকে আলাদাভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করে তাহলে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদিও বিষয়টি নিয়ে প্রাকাশ্য কথা বলতে চান না আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের সকলেরই একটি সীমা-পরিসীমা আছে। নিজেকে বিশেষভাবে প্রকাশ করার কোনো সুযোগ নেই। দলীয় নিয়মের বাইরে কেউ নয়। যদি কেউ দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে গিয়ে নিজেকে আলাদাভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করে তাহলে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেখানে কারো পরিচয় বিবেচ্য বিষয় নয়। তিনি আরও বলেন,  দল বা সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দলীয় কারো কোনো অভিযোগ থাকলে ফোরামে আলোচনা করার সুযোগ আছে। কিন্তু রাস্তায় মাইক লাগিয়ে বলার কিছু নেই।’