জানুয়ারি ১১, ২০২১, ০৯:০৫ পিএম
সিংহ নদীর গর্জন থেমেছে সেই কবে। নামের সাথে কাজের মিল নেই নদীর। সিংহের গর্জনের জন্য যে নদীর নাম হয়েছিল সেই নদী এখন মরা জীবজন্তুর গোরস্তান! নদী দখল করে ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে হাজারো স্থাপনা। উপজেলার কোন্ডা থেকে তেঘরিয়া, বাস্তা, শাক্তা, রুহিতপুর হয়ে কলাতিয়া ইউনিয়নের খাড়াকান্দী এসে ধলেশ্বরীতে এবং রুহিতপুর, রামেরকান্দা, শাক্তা, শিকারিটোলা, আটিবাজার হয়ে বুড়িগঙ্গায় মিলিত হওয়ার আগে নানাভাবে পথ হারিয়েছে নদীটি। নদীতে ঘরবাড়ি, মসজিদ-মাদ্রসা, মার্কেট থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ ও দলীয় কার্যালয়ও নির্মাণ করা হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের এক ইঞ্চি মাটিও প্রভাবশালীদের দখলে থাকবে না— প্রশাসনের এমন ঘোষণার পরও থেমে নেই দখলদারিত্বের। একদিকে উদ্ধার তো অন্যদিকে দখল। এ যেনো প্রশাসনের সাথে প্রভাবশালীদের চোর পুলিশ খেলা। ইতোমধ্যেই কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএর উদ্যোগে পরিচালিত হয়েছে বহু উচ্ছেদ অভিযান। শুভাঢ্যা খালের পর পরবর্তী টার্গেট যখন সিংহ নদী ঠিক তখনই নদীর মোহনার খাড়াকান্দী অংশে চলছে মাটি ভরাট করে বাড়ি নির্মাণের কাজ।
সরেজমিন দেখা গেছে, খাড়াকান্দী মাদ্রাসা বাজার থেকে নতুন চর খাড়াকান্দী গ্রামে যাওয়ার পথে খাড়াকান্দী ব্রিজের পশ্চিম পাশে নদীর মাঝ বরাবর দুটি ভিটি তৈরি করে বাড়ি নির্মাণ করছেন স্থানীয় সিরাজুল ইসলামের ছেলে আরফান। তার স্বজনদের দাবি, জমিটি রেকর্ডি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন। জমির মালিক স্থানীয় সফি মাঝির কাছ থেকে কিনে মাটি ফেলছেন আরফান। জায়গার দাবিদার আরফানের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
খাড়াকান্দী গ্রামের আশি ঊর্ধ্ব আবদুল আজিজ বলেন, সিংহ নদীর গর্জনে ঘুম ভাঙতো নদী পাড়ের মানুষের! অন্য সব নদীর তুলনায় প্রশস্ত কম হলেও খরস্রোতা গভীর নদীতে চলতো বিশাল বিশাল পালতোলা নৌকা। কেরানীগঞ্জের বুক চিরে বয়ে চলা সিংহ নদীকে ঘিরেই চলতো এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা। মাছ ধরা থেকে শুরু করে জমিতে সেচ ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহূত হতো এই নদীর পানি। এই নদীতে নৌকা চালিয়ে জীবন চালাতো শত শত পরিবার। প্রতিটি ঘাটে বাঁধা থাকতো ছোট-বড় নৌকা। গাড়ির পরিবর্তে নৌকাই ছিলো মানুষের চলাচলের মাধ্যম। এই নদী ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা রাজেন্দ্রপুর, বিক্রমপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, খুলনা এমনকি ভারতের সঙ্গেও যোগাযোগের মাধ্যম ছিলো। কিন্তু এসব এখন ইতিহাস।
স্থানীয়দের দাবি, এটা সরকারি জমি। এই নদী দিয়ে দুই যুগ আগেও বড় বড় স্টিমার চলতো। প্রচুর স্রোত ছিলো নদীতে। ২০১৯ সালের বন্যায়ও এখানে স্রোত ছিলো অনেক। কিন্তু বন্যা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই এখানে মাটি ফেলে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছে প্রভাবশালীরা। এভাবে চলতে থাকলে সিংহ নদীতে কোনো পানি প্রবেশ করতে পারবে না। আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কামরুল হাসান বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত সরকারি জমি উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছি। এরই মধ্যে আমরা প্রায় ১০০ একর সরকারি খাস বাজার উদ্ধার করেছি। শুভাঢ্যা খাল, কলাতিয়া খাল, সিংহ নদীসহ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময় সফল অভিযান চালিয়েছি। সিংহ নদীর মোহনা কোনো মতেই ভরাট করতে দেয়া হবে না। অভিযোগ পেলে আগেই ব্যবস্থা নেয়া হতো। ব্যক্তি যত প্রভাবশালীই হোক কারো দখলে কোনো সরকারি জমি থাকবে না। আমরা এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।
আমারসংবাদ/জেআই