Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪,

পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণে সামাজিক সচেতনতা বেড়েছে

মাহমুদুল হাসান

জানুয়ারি ১২, ২০২১, ১০:২৫ পিএম


পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণে সামাজিক সচেতনতা বেড়েছে

‘দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’। প্রচার-প্রচারণায় পরিচিত একটি স্ল্লোগান। দুই দশক আগে এই স্ল্লোগান বাস্তবায়নে সরকারকে হিমশিম খেতে হয়েছে। কিন্তু সময় পাল্টেছে। ট্যাবু ও গোঁড়ামিতে পূর্ণ এসব বিষয় নিয়ে মানুষ এখন খোলামেলা আলোচনা করে। কেননা, শিক্ষার হার বাড়ছে। ফলে সমাজে গোঁড়ামি কমেছে। সচেতনতা বেড়েছে। দম্পতিরা এখন দুই সন্তানের বেশি নিতে চাইছেন না। তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী হচ্ছেন। আগে নারী ও পুরুষরা যেকোনো পদ্ধতি গ্রহণ করতে তাদের মধ্যে এক ধরনের লজ্জা কাজ করতো।

এখন মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। যে কারণে নারী ও পুরুষরা সরকারি ক্লিনিকে গিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করছেন। আগে যেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে পদ্ধতি গ্রহণের বিষয়ে বোঝাতেন, এখন মানুষ পদ্ধতি গ্রহণ করার জন্য ক্লিনিকে নিজে থেকে আসছেন। এসব চিত্র প্রমাণ করে, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

গ্রামের মানুষ আগে মনে করতো, সন্তান বেশি হলে তাদের কাজে গতি আসবে। এখন তারা বুঝতে পেরেছে, একটি বা দু’টি সন্তান হলে তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি নিশ্চিত করা অনেক সহজ হবে। সন্তান শিক্ষিত ও সুনাগরিক হলে বাবা-মাকে অনেক বেশি সহায়তা করতে পারে। এসব সম্ভব হয়েছে বর্তমান সরকারের নানামুখী জনসচেতনতামূলক পদক্ষেপের কারণে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সামান্য শিক্ষা, পারিবারিক সচেতনতা আর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টায় এ পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। অধিদপ্তরের কিছু সীমাব্ধতা রয়েছে। কিন্তু তবুও পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। এই অগ্রগতি ধরে রাখতে পারলে আমাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় যে ২ শতাংশের নিচে প্রজনন হার কমিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ সেটা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। এ ছাড়াও এসব সূচকের উন্নয়নে সব শ্রেণিপেশার মানুষকে যুক্ত করারও পরামর্শ এসেছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, স্বাধীনতার পর গত পাঁচ দশকে দেশে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহীতার হার অন্তত ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৮ সালে পরিচালিত এক জরিপের তথ্য মতে, ১৯৭৫ সালে যেখানে পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার ছিলো ৭ দশমিক ৭ শতাংশের নিচে, সেই সংখ্যা ২০১৭ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩ দশমিক ১ শতাংশের বেশিতে। গত ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯-এর জুন পর্যন্ত এক অর্থবছরে পরিবার পরিকল্পনার সাফল্য এসেছে।

সেখানে দেখা গেছে, দেশের প্রায় পৌনে সাত লাখ নারী-পুরুষ স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে এক লাখ ৩৩ হাজার ৩৫ জন নারী-পুরুষ স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। বাকি পাঁচ লাখ ৪২ হাজার ৪৩ জন নারী ও পুরুষ দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য থেকে আরো জানা গেছে,  ১৯৭৫ সালে দেশে গড় প্রজনন হার ছিলো ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। সেই হার ২০১১ সালে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৩ শতাংশে। বর্তমানে প্রজনন হার বা মহিলা প্রতি গড় সন্তান জন্মদানের হার ২ দশমিক ৭ শতাংশ। বর্তমানে প্রজননক্ষম সকল দম্পতি পরিবার পরিকল্পনার কোনো না কোনো পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যে স্বাস্থ্য-বিষয়ক এক গ্লোবাল সামিটের প্রতিশ্রুত বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।

ইতোমধ্যে দেশের নারী-পুরুষকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। গেলো দুই বছর আগের বছর থেকে বিয়েপূর্ব কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সভা সেমিনার, পথনাট্য, চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। দেশের তৈরি পোশাক খাতে বড় ভূমিকা রাখছেন আমাদের অদম্য নারীরা। তাদের মধ্যে সচেতনতা গড়তে পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে অধিদপ্তর। সেই সাথে ইতোমধ্যে নগরীর বস্তিবাসীকে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে সচেতনতা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, ‘বর্তমান সরকারের নানামুখী সচেতনতামূলক কর্মসূচির কারণে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। একই সঙ্গে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের হার বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে দক্ষ সেবাদানকারীর মাধ্যমে নিরাপদ প্রসবের হার ২৩ ভাগ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৭ ভাগ ও গর্ভ, প্রসব ও প্রসব-পরবর্তী সেবা গ্রহণের হার ১৯ ভাগ থেকে ৪৩ ভাগ হয়েছে। দেশে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের হার ৬২ ভাগ হয়েছে। মাতৃমৃত্যু হার আগের তুলনায় ৫০ ভাগ কমেছে।

আমারসংবাদ/জেআই