Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪,

পদোন্নতি পেয়ে শিক্ষকরা হবেন শিক্ষা অফিসার-পরিচালক

জানুয়ারি ১৪, ২০২১, ০৪:৩৫ এএম


পদোন্নতি পেয়ে শিক্ষকরা হবেন শিক্ষা অফিসার-পরিচালক

শিক্ষকদের মর্যাদার আসন অক্ষুন্ন রাখতে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। অনেক প্রতিক্ষিত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিধিতে পরিবর্তন আসছে। এতে করে একজন সহকারী শিক্ষক তার নিজ পদ থেকে প্রধান শিক্ষক, সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী পরিচালক, এমনকি সর্বোচ্চ পরিচালক পর্যন্ত পদোন্নতি পাবেন। 

বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮৫’ সংশোধন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সংশোধিত চূড়ান্ত খসড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিচালক প্রশাসন ক্যাডার থেকে হয়। এই নিয়োগ বিধির আওতায় এই প্রথম প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন থেকে হবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম আমার সংবাদকে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়াতে যা যা প্রয়োজন আমরা নিবো। শিক্ষকরা সম্মানিত ব্যক্তি, যাতে নিষ্ঠার সাথে তার পেশা চালিয়ে যেতে পারেন সে ব্যবস্থার জন্য আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি। 

তিনি বলেন, আমরা ১৯৮৫ সালের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছি। মন্ত্রণালয়ে খসড়া নিয়োগ বিধিমালা পাঠানো হয়েছে বলে জানান মহাপরিচালক।

বেতন গ্রেড নিয়ে অসন্তোষ দীর্ঘদিনের এরপর সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকের বিভাগীয় পদন্নোতি নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকরা সোচ্চার  হয়ে ওঠেন। 

শিক্ষকদের পক্ষ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত আবেদনও জানানো হয়। এই ঘটনার পর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ১৯৮৫ সালের আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়।  সংশোধন খসড়ায় সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের পরিচালক পর্যন্ত পদোন্নতির বিধান রাখা হয়। 

এদিকে শিক্ষকরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮৫’ -এর অধীনে প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির বিধান ছিল। প্রধান শিক্ষকরা সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি পেতেন। 

এতে সহকারী শিক্ষকরাও নির্দিষ্ট সময়ে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির সুযোগ পেতেন। কিন্তু ১৯৯৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর বিধিমালাটি সংশোধনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি রহিত করা হয়। ফলে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির বিধান থাকলেও পদোন্নতির সুযোগ হারিয়ে যায়। 

এবার প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির বিধানও যুক্ত হচ্ছে। ফলে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকরা নির্ধারিত নিয়মে পদোন্নতি পাবেন। আগের নিয়মে উপজেলা শিক্ষা অফিসার পর্যন্ত পদোন্নতির সুযোগ থাকলেও এবার তা বাড়িয়ে পরিচালক পর্যন্ত করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব ও সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতির বিধান যুক্ত করতে হবে খসড়া নীতিমালায়।

এই ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ বিভাগীয় পদোন্নতি এবং ৩০ শতাংশ উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি দিতে হবে। অনূর্ধ্ব ৪৫ বছরের বয়সের কোনও বাধা রাখা যাবে না।  কারণ একজন সহকারী শিক্ষকের প্রধান শিক্ষক হতেই ৪৫ বছর লেগে যায়, তাহলে ঊর্ধ্বতন থানা/উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতিতে অনূর্ধ্ব ৪৫ বছর শর্ত জুড়ে দিলে কোনও সহকারী শিক্ষক ওই পদে যেতে পারবেন না।

শিক্ষকদের পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে : শিক্ষকরাই আলোকিত মানুষ এবং শিক্ষিত সমাজ বিনির্মাণের কারিগর উল্লেখ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন বলেছেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের আর সারা জীবন একই পদে চাকুরী করতে হবে না, তাদের পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন  চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে যা অচিরেই অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। 

প্রতিমন্ত্রী গতকাল রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা পিটিআইয়ে ঢাকা জেলার নতুন নিয়োগকৃত শিক্ষকদের দু’দিনব্যাপী ওরিন্টেশন কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এ কোর্সে ২০৯জন  শিক্ষক অংশগ্রহণ করেছেন। 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, দক্ষ মানবসম্পদই পারে উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গঠন করতে। আর সুশিক্ষিত দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার কারিগর হলো শিক্ষক সমাজ। শিক্ষকদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য সরকার দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। 

এছাড়া তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পদোন্নতিসহ উন্নত বেতন স্কেল দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার ঘোষিত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার মূল চালিকা শক্তি আজকের শিশুরা। তাদেরকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে শিক্ষকদের। শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের ভূমিকা হবে নিজ সন্তানের মতো। 

বর্তমান সরকার শিক্ষার সংস্কার, সম্প্রসারণ ও মান উন্নয়নে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে বলেন, নবনিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকগণকে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য চাকরির শুরুতে ইনডাকশন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাকুরিকালীন দায়িত্ব এবং পাঠদান কার্যক্রম সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা প্রদান করা হচ্ছে। মার্কার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ, উত্তরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়ন এবং প্রশ্নপত্র কিভাবে প্রণয়ন করতে হয় সে বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

অন-লাইন পদ্ধতিতে শিক্ষকদের বদলী প্রক্রিয়া চলমান আছে যা অবিলম্বে কার্যকর হবে। গণিত অলিম্পিয়ার্ড কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের গাণিতিক দক্ষতা বৃদ্ধির সম্ভাব্যতা যাচাই শীর্ষক প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং শিক্ষকদের ব্রিটিশ কাউন্সিলে বিদেশি প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে ইংরেজি শিক্ষা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১টি করে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টির কার্যক্রম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেল ১১ এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১৩ গ্রেডে উন্নিত করা হয়েছে। 

শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ারোধ ও পুষ্টিমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে  উপবৃত্তি প্রদান ও স্কুল ফিডিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রতিমন্ত্রী  বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীতে সারা বিশ্বে শিক্ষাব্যবস্থা যখন স্থবির হয়ে পরেছে তখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কার্যক্রমের সুবিধা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘ঘরে বসে শিখি’ অনুষ্ঠান এবং বাংলাদেশ বেতার ও কমিউনিটি রেডিওয়ের মাধ্যমে পাঠদান সম্প্রচার করা হচ্ছে। 

তাছাড়া  শিশুরা ছোটবেলা থেকে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারছে; যা ভবিষ্যতে আইটি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনগোষ্ঠি গড়ে তুলতে সহায়ক হিসাবে কাজ করবে। নতুন নিয়োগকৃত শিক্ষকদের দু’দিনব্যাপী ওরিন্টেশন কোর্সের উদ্বোধনী দিনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মোহাম্মদ মনসুরুল আলম এবং অতিরিক্ত মহাপরিচালক আতাউর রহমান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোঃ সোহেল আহমেদ ও ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার আলীয়া ফেরদৌসী বক্তৃতা করেন। ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক মোঃ ইফতেখার হোসেন ভূঁইয়া অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

আমারসংবাদ/এআই