বেলাল হোসেন ও রফিকুল ইসলাম
জানুয়ারি ২১, ২০২১, ০৭:০৫ পিএম
অবশেষে ঘর পাচ্ছে দেশের ছিন্নমূল-দুস্থ, ভূমিহীন ও গৃহহীন ৯ লাখ পরিবার। আগামীকাল শনিবার প্রথম ধাপের ৬৯ হাজার ৯০৪ পরিবারের মাঝে ঘর হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে এই প্রকল্পটির উদ্বোধন করবেন তিনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিটি পরিবারের মাঝে দুটি সেমিপাকা টিনশেড ঘর, একটি বসার ঘর, একটি টয়লেট ও একটি রান্নার ঘর হস্তান্তর করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। সরকারের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে স্বপ্ন পূরণ হবে দেশের অসহায় ভূমিহীন এবং গৃহহীন ৯ লাখ পরিবারের।
সূত্র জানায়, টানা একযুগ রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন সরকার। ক্ষমতার দীর্ঘ সময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে কঠোর পরিশ্রম করছেন দলটির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দূরদর্শী নেতৃত্বেই গ্রামীণ অবকাঠামো, খাদ্য নিরাপত্তা, শান্তি চুক্তি, সমুদ্র বিজয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। দেশে চলমান এমন উন্নয়নের মাঝেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন, মুজিববর্ষে দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। সরকার সব ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দেবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীতে (মুজিববর্ষেই) ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলেন সরকারপ্রধান। মূলত মুজিববর্ষ পালন উপলক্ষে সরকারের একটি বড় কর্মসূচির অংশ হিসেবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। দেশপ্রধানের এমন ঘোষণার পর দেশের ছিন্নমূল-দুস্থ, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের আধাপাকা টিনশেড ঘর নির্মাণ করে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। আগামীকাল শনিবার উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে ভূমিহীন-গৃহহীনদের জন্য নেয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে। জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রঞ্জিৎ কুমার সেন বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর একটি বড় ধরনের মানবিক প্রকল্প। আগামীকাল প্রথম ধাপে ৬৯ হাজার ৯০৪ পরিবারের মাঝে ঘর হস্তান্তর করা হবে। বাকি ধাপগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। তাও দ্রুত শেষ হবে বলে আশা করছি।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারা দেশে প্রায় আট লাখ ৮৫ হাজারের বেশি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে এক লাখ ২৯ হাজার ১৯৭, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৬ হাজার ৩, চট্টগ্রাম বিভাগে এক লাখ ৬১ হাজার ২৯৭, রংপুর বিভাগে এক লাখ ৮৩ হাজার ৮৩৪, রাজশাহী বিভাগে ৯৬ হাজার ৫০৪, খুলনা বিভাগে এক লাখ ৪২ হাজার ৪১১, বরিশাল বিভাগে ৮০ হাজার ৫৮৪ এবং সিলেট বিভাগে ৫৫ হাজার ৬২২টি গৃহহীন পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে জমি ও ঘর নেই এমন পরিবারের পাশাপাশি ১০ শতাংশ জমি আছে কিন্তু বাড়ি নেই এমন পরিবারও রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী (মুজিববর্ষ) উপলক্ষে তালিকায় থাকা ওইসব ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর করে দিচ্ছে সরকার। ২১ জেলার ৩৬ উপজেলায় ৪৪টি প্রকল্পে ৭৪৩টি গ্রামে ব্যারাক নির্মাণের মাধ্যমে তিন হাজার ৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। একই সঙ্গে একক গৃহ ও ব্যারাকে মোট ৬৯ হাজার ৯০৪টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর দেয়ার ঘটনা বিশ্বে এটাই প্রথম। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ২৪ হাজার ৫৩৮টি পরিবারের জন্য মোট বরাদ্দ ৪১৯ দশমিক ৬০ কোটি টাকা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৩৮ হাজার ৫৮৬টি ঘর বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫৯ দশমিক ৮২ কোটি টাকা। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে গুচ্ছগ্রাম দ্বিতীয়পর্যায়ে সিভিআরপি প্রকল্পের আওতায় তিন হাজার ৬৫টি ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। এ খাতে বরাদ্দ ৫২ দশমিক ৪১ কোটি টাকা। অতিরিক্ত পরিবহন বাবদ বরাদ্দ (প্রতিটি ঘরের জন্য চার হাজার টাকা) মোট ২৬ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা। এছাড়া সারা দেশের সব উপজেলায় জ্বালানি বাবদ বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১০ দশমিক ৪০ কোটি টাকা। মোট ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারের ঘরের জন্য বরাদ্দ ১১৬৮ দশমিক ৭১ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প একক গৃহ নির্মাণের সামগ্রিক কার্যক্রম সমন্বয় করছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির মাধ্যমে একক গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে।
তথ্যমতে, ১৯৯৭ সাল থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পের সংখ্যা দুই হাজার ১৭২টি। নির্মিত ব্যারাক সংখ্যা ২২ হাজার ১৬৪টি। ব্যারাকে পুনর্বাসিত ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা এক লাখ ৬৫ হাজার ৬৬৮টি। জমি আছে কিন্তু ঘর তৈরির সামর্থ্য নেই এমন এক লাখ ৫৩ হাজার ৭৮৪ পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের জন্য নির্মিত বিশেষ ডিজাইনের ঘর তৈরি করে দেয়া হয়েছে ৫৮০টি। ২৩ বছরে পুনর্বাসিত পরিবারের সংখ্যা তিন লাখ ২০ হাজার ৫২টি। এর আগে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে কক্সবাজার জেলার খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে নির্মিত পাঁচতলাবিশিষ্ট ২০টি বহুতল ভবনে প্রথম পর্যায়ে ৬০০টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে একটি করে ফ্ল্যাট উপহার দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় পাঁচতলাবিশিষ্ট ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করে চার হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার পুনর্বাসন করা হবে। খুরুশকুল প্রকল্পটি বিশ্বের একক বৃহত্তম জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রী ২৩ জুলাই এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। বাকি ১১৯টি বহুতল ভবন ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ কর্তৃক পৃথক ডিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন, প্রতিটি ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঘর করে দেয়া হবে। তার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আগামী শনিবার প্রথম ধাপের ৬৯ হাজার ঘর হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী। এই কাজের মধ্যদিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। তালিকা অনুযায়ী দেশের আট লাখ ৮৫ হাজার ৫২২ জন গৃহহীন ভূমিহীন পরিবার ঘর পাবে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মধ্যেই এসব ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে।
আমারসংবাদ/জেআই