Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ধার দেয়া দানের চেয়েও বেশি ফজিলত

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

জানুয়ারি ২৪, ২০২১, ০৭:৩৫ পিএম


ধার দেয়া দানের চেয়েও বেশি ফজিলত
  • ঋণের আরবি প্রতিশব্দ কর্জ। এর বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে দেনা, ধার, হাওলাত ইত্যাদি। ইসলামের পরিভাষায়, ‘ঋণ হলো শুধু সহযোগিতার জন্য অন্যকে কোনো অর্থ-সম্পদ দেওয়া, যেন গ্রহীতা এর মাধ্যমে উপকৃত হয়, পরে দাতাকে সেই সম্পদ কিংবা তার অনুরূপ ফেরত দেয়া।’
  • ইসলামে ঋণ আদান-প্রদান করা বৈধ। এটি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। রাসূল (সা.) নিজেই ঋণ গ্রহণ করেছিলেন।

পৃথিবীতে সবার অর্থনৈতিক অবস্থা সব সময় অনুকূল থাকে না। কখনো কখনো সমস্যা ও প্রয়োজন মানুষকে ঋণ করতে বাধ্য করে। তাই বাধ্য হয়ে অন্যের সহযোগিতার মুখাপেক্ষী হতে হয়। তাই জীবন চলার পথে ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ইসলাম এ বিষয়ে মানুষকে উৎকৃষ্ট পদ্ধতি ও দিকনির্দেশনা দিয়েছে। মহান আল্লাহ মানবজাতিকে ঋণ গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছেন, তেমনি যথাসময়ে ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। এখানে বিপদগ্রস্তকে ঋণ দেওয়ার প্রতিদান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

ঋণের আরবি প্রতিশব্দ কর্জ। এর বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে দেনা, ধার, হাওলাত ইত্যাদি। ইসলামের পরিভাষায়, ‘ঋণ হলো শুধুমাত্র সহযোগিতার জন্য অন্যকে কোনো অর্থ-সম্পদ দেওয়া, যেন গ্রহীতা এর মাধ্যমে উপকৃত হয়, পরে দাতাকে সেই সম্পদ কিংবা তার অনুরূপ ফেরত দেওয়া।’

ইসলামে ঋণ আদান-প্রদান করা বৈধ। এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। রাসুল (সা.) নিজেই ঋণ গ্রহণ করেছিলেন। ঋণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। এবং তাঁর উম্মতকে ঋণমুক্তির দোয়া শিখিয়েছেন। এমনকি রাসুল (সা.) অমুসলিমের কাছ থেকেও ঋণ গ্রহণ করেছেন। সুতরাং ইসলাম মুসলমানদের বিপদে-আপদে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে অন্যের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছে। পাশাপাশি সঠিক সময়ে তা পরিশোধ করার প্রতি কঠোর নির্দেশও দিয়েছে।

ঋণ গ্রহণে সতর্কতা : তবে মুমিনদের ঋণের ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকা জরুরি। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির মৃত্যু হবে অহংকার, খিয়ানত এবং ঋণ থেকে মুক্ত হয়ে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৫৭২)

অর্থাৎ ঋণগ্রস্ত হয়ে মারা গেলে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তা ছাড়া রাসুল (সা.) মৃত ব্যক্তির সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টনের আগে মৃতের ঋণ পরিশোধ করার ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়েছেন। কেননা আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া ব্যক্তিও তার ঋণের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ২২৪৯৩)

ঋণ দেওয়ার ফজিলত : কোরআন ও হাদিসে ঋণ বলতে ‘কর্জে হাসানা’ বোঝানো হয়েছে। আর কর্জে হাসানা প্রদানে বিশেষ পুণ্যের কথা বর্ণিত হয়েছে।

ঋণ দানের সওয়াব : কাউকে নেকির আশায় বা সহযোগিতার জন্য কর্জে হাসানা প্রদান করা আল্লাহর পথে দান-সদকা করার সমতুল্য। এমনকি ঋণ দানকে দান-সদকার চেয়েও বেশি মর্যাদাপূর্ণ বলা হয়েছে। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করে তার দরজায় একটি লেখা দেখতে পেল যে সদকার নেকি ১০ গুণ বৃদ্ধি করা হয় এবং ঋণ দানের নেকি ১৮ গুণ বৃদ্ধি করা হয়।’ (সিলসিলা সহিহাহ, হাদিস : ৩৪০৭)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক ঋণই সদকাস্বরূপ।’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩২৮৫)

অক্ষম ঋণগ্রহীতাকে ছাড় দেওয়া : সমাজে যেমন কিছু লোক আছে, যারা সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও ঋণ শোধ করতে ঢিলেমি করে, আবার এমন লোকও আছে যারা নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম। এ ধরনের ব্যক্তিকে ইসলাম অতিরিক্ত সময় দিতে উদ্বুদ্ধ করে। যারা অক্ষম ঋণগ্রহীতাকে অবকাশ দেয়, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের মহা পুরস্কার। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি অভাবী হয়, তাহলে তাকে সচ্ছল হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও। আর যদি ঋণ মাফ করে দাও, তাহলে সেটা তোমাদের জন্য আরো উত্তম, যদি তোমরা তা জানতে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮০) ঋণদাতা যদি অক্ষম ঋণীকে দেনা পরিশোধে ছাড় দেন, তাহলে তিনি এর মাধ্যমে আল্লাহর পথে দান করার নেকি অর্জন করেন।

বুরাইদা আল-আসলামি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (ঋণগ্রস্ত) অভাবী ব্যক্তিকে অবকাশ দেবে, সে দান-খয়রাত করার সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সময় বাড়িয়ে দেবে, সেও প্রতিদিন দান-খয়রাত করার নেকি লাভ করবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪১৮) রাসুল (সা.) ওই পাওনাদার ব্যক্তির জন্য রহমতের দোয়া করেছেন, যে অভাবী ঋণগ্রহীতার প্রতি সহনশীল হয়। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যে বান্দা ক্রয়-বিক্রয়ের সময় উদারচিত্ত হয় এবং (ঋণের) পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে সহনশীল হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২০৩)

যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য অক্ষম ঋণী ব্যক্তির প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করে অথবা তার ঋণ মাফ করে দেয়, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের তাঁর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অভাবী ঋণগ্রস্তকে সুযোগ দেবে অথবা ঋণ মাফ করে দেয়, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাকে তাঁর আরশের ছায়ায় আশ্রয় প্রদান করবেন। যেদিন তাঁর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৩০৬; সুনানে দারেমি, হাদিস : ২৬৩০)

কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা লাভ করার অন্যতম উপায় হলো অভাবী ও দরিদ্র ঋণগ্রস্তদের ঋণ মাফ করে দেওয়া। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এক লোকের হিসাব গ্রহণ করা হয়, কিন্তু তার মধ্যে কোনো ধরনের ভালো আমল পাওয়া যায়নি। কিন্তু সে মানুষের সঙ্গে লেনদেন করত এবং সে ছিল সচ্ছল। তাই দরিদ্র লোকদের মাফ করে দেওয়ার জন্য সে তার কর্মচারীদের নির্দেশ দিত। রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ (ফেরেশতাদের) বলেন, ‘এ ব্যাপারে (অর্থাৎ তাকে ক্ষমা করার ব্যাপারে) আমি তার চেয়ে অধিক যোগ্য। একে ক্ষমা করে দাও।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫৬১; তিরমিজি, হাদিস : ১৩০৭) অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি এটা চায় যে আল্লাহ তাকে কিয়ামত দিবসের দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি দিক, সে যেন অক্ষম ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির সহজ ব্যবস্থা করে কিংবা ঋণ মওকুফ করে দেয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫৬৩) মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

আমারসংবাদ/জেআই