Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ইসলামে নারীর মর্যাদা

মুফতী মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল

জানুয়ারি ২৮, ২০২১, ০৮:০০ পিএম


ইসলামে নারীর মর্যাদা

ইসলাম নারী জাতিকে এক করুণ অমানবিক অবস্থা থেকে উদ্ধার করে তাদেরকে মানুষ হিসাবে যথাযোগ্য অধিকার এবং সম্মানজনক মর্যাদা নিশ্চিত করেছে। পবিত্র কোরআনে নারীদের অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে, “আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের ওপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও নিয়ম অনুযায়ী পুরুষদের ওপর অধিকার রয়েছে। আর নারীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে, আর আল্লাহ হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ, (সূরা বাকারা, ২২৮)।

ইসলামের মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ‘নিসা’ অর্থাৎ ‘মহিলা’ শব্দটি ৫৭ বার এবং ‘ইমরাআহ’ অর্থাৎ ‘নারী’ শব্দটি ২৬ বার উল্লেখ হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ‘নিসা’ তথা ‘মহিলা’ শিরোনামে নারীর অধিকার ও কর্তব্যসংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র বৃহৎ সূরাও রয়েছে। এছাড়া কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। দিয়েছে নারীর জান-মালের নিরাপত্তা ও সর্বোচ্চ সম্মান।

ইসলামপূর্ব যুগে নারী জাতির কোন মর্যাদাই ছিল না। প্রাচীন আরবে লজ্জা-শরমে, মনের কষ্টে কন্যা শিশুদেরকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। তাছাড়া পৃথিবীর সর্বত্রই কন্যাসন্তান হলে পরিবারের সকলের মুখ কালো হয়ে যেত। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- “যখন তাদের কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তাদের মুখ কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনোস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে, না তাকে মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে। শুনে রাখো, তাদের ফায়সালা খুবই নিকৃষ্ট।” (সূরা নাহল, ৫৮)। অত্র আয়াতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করলে খুশি হওয়া উচিত। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “যখন কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হয় তখন আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের প্রেরণ করেন। তারা এসে বলে-পরিবারের সকলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। অতঃপর তারা তাদের বাহু দিয়ে কন্যা সন্তানটিকে আবেষ্টন করে এবং তার মাথায় হাত রেখে বলে-এক অবলা হতে আর এক অবলা বের হয়েছে। যে ব্যক্তি এর রক্ষণাবেক্ষণে মনোযোগী হবে সে কেয়ামত পর্যন্ত সাহায্য পাবে”। রাসূল (স.) আরো বলেন, কারো কন্যাসন্তান ভূমিষ্ট হলে সে যদি তাকে পুঁতে না ফেলে, তাকে যদি সে অপমাণিত না করে এবং তাকে উপেক্ষা করে যদি সে পুত্রসন্তানের পক্ষপাতিত্ব না করে, তাহলে আল্লাহপাক তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন” (আবু দাউদ)। অন্য হাদীসে এসছে- ‘মেয়েশিশু বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক’। ‘যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যাসন্তান থাকবে; আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়’ (আবু দাউদ, ৪৪৮১)।

মা হিসেবে ইসলাম নারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবীর (সা.) দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবারও তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’ ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবার তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার পিতা, (বুখারি, ৫৫১৪)।

রাসূলের (স.) আগমনের পূর্বে ধন-সম্পত্তিতে নারীদের কোন উত্তরাধিকার স্বীকৃত ছিল না। ইসলামই মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তির হকদার পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও প্রধান করে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- “পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে। অল্প হোক কিংবা বেশি হোক, এ অংশ নির্ধারিত” (সূরা নিসা, ৭)।

আল্লাহ তায়ালা খুব স্পষ্ট করে বলেছেন- মূল মানুষ হচ্ছে ‘রূহ’, যাকে আমরা ‘আত্মা’ বলি। মূল মানুষ কিন্তু শরীর নয়। দেহ তো কবরে পচে যাবে। আমরা যারা ইসলামে বিশ্বাস করি তারা জানি, মূল মানুষ হলো ‘রূহ’। আল্লাহ সব মানুষকে, তার রূহকে একত্রে সৃষ্টি করেন, একই রকম করে সৃষ্টি করেন এবং একটিই প্রশ্ন করেন। আল্লাহর প্রশ্নের উত্তরও নারী-পুরুষ সবাই একই দিয়েছিলেন। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- স্মরণ করো, তোমাদের প্রতিপালক আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের বংশধরকে বের করেন এবং তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং বলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?’ তারা বলে, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই তুমি আমাদের প্রতিপালক। আমরা এর সাক্ষ্য দিচ্ছি।’ ‘এটা এ জন্য যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন না বলো, আমরা তো এ বিষয়ে জানতাম না’ (সূরা আরাফ, ১৭২)। তার মানে হচ্ছে, আল্লাহর সাথে একটি পয়েন্টে সব নারী ও পুরুষের একটি চুক্তি হলো- ‘আপনি আমাদের প্রভু, আমরা আপনাকে মেনে চলব।

প্রভাষক (আরবী), চাটখিল কামিল মাদরাসা, নোয়াখালী

ibrahim010187@gmail.com

আমারসংবাদ/জেআই