Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

মোতাহার হোসেন, ঢাবি

ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১, ০৭:৫০ পিএম


চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

আগামীকাল ২১ ফেব্রুয়ারি। অবিস্মরণীয় একটি দিন। বাঙালির প্রেরণার অন্যতম উৎস। এ দিনটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, এখন বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। জাতির জীবনে শোকাবহ, গৌরবোজ্জ্বল, অহঙ্কারে মহিমান্বিত চিরভাস্বর এ দিনটি। ১৯৫২ সালের এই দিনে ভাষার মান রক্ষার্থে তাজা রক্ত দিতে হয়েছিল রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত ও সফিউরদের। সেদিন তাদের রক্তের বিনিময়ে শৃঙ্খলযুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা ও মায়ের ভাষা। বছর ঘুরে যখন এ দিনটি আসে তখন চোখে আঙুল দিয়ে প্রকৃতি স্মরণ করিয়ে দেয় সেদিনের কথা। প্রতি বছর এই দিনকে স্মরণ করার জন্য দলে দলে মানুষ শহীদ মিনারে আসে। আজ দিবাগত রাত অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার বেদিতে ফুল দিয়ে শুরু হবে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। তারপর দিনভর চলবে শহীদ বেদিতে শিশু-যুবা আর বৃদ্ধদের ফুল দিয়ে শহীদদের স্মরণ। করোনা সারা বিশ্বের ন্যায় যখন এদেশকেও করে দিয়েছে টালমাটাল তারপরও থেমে থাকেনি মহান একুশে উদযাপন। বাঙালির রক্তের সাথে মিশে যাওয়া অমর একুশ এবার আগের মতো বড় পরিসরে না হলেও সীমিত পরিসরে এ দিনটি শ্রদ্ধার সাথে পালন হবে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে।

প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেও এবার তারা আসছেন না। তাদের পক্ষে প্রতিনিধি পাঠাবেন বলে জানা গেছে। দেশের এই দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি না এলেও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যারা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষকরা, ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতারা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

আগামীকালের ভাষা দিবসকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে শহীদ মিনারকেন্দ্রিক অনেক কাজ সম্পন্ন করেছে অমর একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি। বাকি কাজ আজ সন্ধ্যার মধ্যে শেষ হবে বলে তারা জানিয়েছে। গতকাল শুক্রবার শহীদ মিনার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সৌন্দর্য বাড়াতে শহীদ মিনারসহ আশপাশ এলাকায় দেয়ালে রং করা হচ্ছে। শহীদ মিনারের চারপাশে বাতি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া বেশকদিন ধরে মূল বেদিসহ সংলগ্ন এলাকা ঝাড়ু দিয়ে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করার কাজও চলছে পুরোদমে। ঘোষণা মঞ্চের কাজও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে, রাস্তা ও দেয়ালের রঙের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। আজ সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আয়োজক কমিটি জানিয়েছে।

এদিকে মহান ভাষা দিবসকে সামনে রেখে দেয়াল লিখনে ব্যস্ত সময় কাটছে চারুকলার শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এবার দেয়াল লিখন ও আলপনা আঁকার জন্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম হলেও চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে দেয়াল লিখনের কাজ করে চলেছেন বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে। তারা শহীদ মিনারের সামনের রাস্তার দেয়ালে ভাষা আন্দোলনের নানা গান, কবিতা ও স্লোগান দেয়ালে লিখছেন। গতকাল শুক্রবার থেকে আল্পনা আঁকার কাজ শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে চারুকলা অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাসলিমা রহমান নওশিন বলেন, ‘আমরা এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ৬০-৭০ জন কাজ করছি। এবছর করোনার কারণে তুলনামূলক কম। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ। এর মাধ্যমে আমরা শহীদদের প্রতি বিশেষ সম্মান জানাতে পারছি। আমি এ কাজে গর্ববোধ করি।’

এবার করোনার কারণে আয়োজন সীমিত হলেও নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা। করোনা বিবেচনায় যতদূর সম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে সবাই মাস্ক পরে শহীদ বেদিতে ফুল দিতে বলা হয়েছে। আগত লোকজনের জন্য হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে।

গতকাল শুক্রবার একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন আয়োজক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখনো টুকিটাকি কিছু কাজ আছে যেগুলো আমাদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না। দূরত্ব বজায় রাখার জন্য যে দাগ দিতে হবে তা আমরা এখন দিতে পারবো না। কারণ এর জন্য রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ করতে হবে। তাই এটা শনিবার বিকাল ৫টার দিকে করবো। আমাদের বেদিতে প্রাথমিক রঙ করা শেষ হয়ে গেছে এবং চূড়ান্ত রঙ শনিবার করতে হবে। কারণ কয়েকদিন আগে রঙ করলে এর ওপর ধুলা-ময়লা পড়ে যায়। ঘোষণা মঞ্চের সামিয়ানা টানানো হয়ে গেছে এখন শুধু টেবিল চেয়ার বসালেই হবে। পাশাপাশি আমাদের রাস্তায় যে ব্যারিকেড দেয়া হয় তাও এখন দিতে পারছি না। কারণ গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটাবে। অতিথিরা কোথায় এসে অপেক্ষা করবে সে জন্য আমরা খেলার মাঠে বসার ব্যবস্থা করবো। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে এবার জিমনেশিয়ামে কোনো ভিড় করতে চাচ্ছি না।’

করোনার কারণে প্রস্ততিতে কোনো প্রভাব পড়ছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোনো সমস্যায় পড়ছি না। সব ধরনের প্রস্তুতি রাখছি। মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে তার প্রটোকল অফিসার ফুল দেবেন বলে চিঠি পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে এখনো কনফার্ম হইনি। স্পিকারের কাছ থেকে চিঠি পেয়েছি। ওনার প্রটোকল অফিসার ওনার পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। যদিও সবার কাছ থেকে এখনো কনফার্মেশন পাইনি, তবে আমরা অথিতিদের অপেক্ষায় থাকবো। এক্ষেত্রে পূর্বের রাষ্ট্রীয় আচার অনুসরণ করা হবে।

নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে আমাদের প্রচুর জনসমাগম হয়েছে। এবার করোনার কারণে আশঙ্কা করছি প্রচুর জনসমাগম হবে না। তারপরও পর্যাপ্ত ভলান্টিয়ার বিএনসিসি রোবার স্কাউটরা থাকবেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে লইনফোর্সমেন্ট এজেন্সি থাকবে, তারাও বিগত বছরগুলোর মতোই প্রস্তুতি নিয়েছে। অনুরোধ করবো— সবাই অবশ্যই মাস্ক পরে যতটুকু সম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। ’

এদিকে কঠোর আইনি নিরাপত্তা থাকবে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে। শহীদ মিনারের চারপাশ বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়া এবং শহীদ মিনারের চারপাশ ও রাস্তায় সিসিটিভি স্থাপনসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টানা কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিজস্ব পোশাক ছাড়াও সাদা পোশাকে নজরদারি করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের সামনে র্যাব, পুলিশ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হবে। যেখানে সিসিটিভির মাধ্যমে সমগ্র এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হবে।’

নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, এবার পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বলতে পারি তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের সদস্যরাও থাকবেন। শহীদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি করা হবে। এজন্য ডিএমপি কন্ট্রোল রুম থেকে তা মনিটরিং করা হবে। পাশাপাশি বোম ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াটসহ অন্যান্য ইউনিটগুলো সক্রিয় থাকবে।’

জঙ্গি কার্যক্রমের ওপর নজরদারি রাখা হচ্ছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণত এ ধরনের দিবসগুলো উপলক্ষে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জঙ্গিরা ছোট ঘটনা ঘটিয়ে হলেও দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। শহীদ দিবস বাঙালির আবেগের একটি বড় জায়গা। এখানে ছোট্ট একটি ঘটনা ঘটাতে পারলেও আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। জঙ্গি কার্যক্রম বা গতিবিধি নজরদারির জন্য আমাদের সাইবার ইউনিটগুলো সক্রিয় রয়েছে। আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি আছে। আমরা মনে করি না। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটানোর সাহস তারা পাবে।’

আমারসংবাদ/জেআই