Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

ইয়াবা অভিযান ব্যর্থ কেন?

নুর হাকিম আনোয়ার, টেকনাফ

ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১, ০৭:৫০ পিএম


ইয়াবা অভিযান ব্যর্থ কেন?

দেশে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। মিয়ানমার থেকে বানের স্রোতের মতো আসছে ইয়াবার চালান। এসব চালানে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে পুরো যুবসমাজ। এই চালান আসা রুখতে সরকারের পক্ষে মাদকবিরোধী অভিযানে সফল হওয়া আসলেই অত্যন্ত সুকঠিন। তবুও মাদক-নির্মূল অভিযান দেশে একটি জনপ্রিয় দাবি বলে সরকারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন ঘোষণা দিয়েছেন— সরকার মাদকের বিরুদ্ধে অলআউট যুদ্ধে নেমেছে। কিন্তু মাদকের বিরুদ্ধে এই অলআউট যুদ্ধের কী অবস্থা বাস্তবে দেখা যাচ্ছে? কারাগারে থাকা সাবেক ওসি প্রদীপের অভিযানের পর থেকে টেকনাফে আর  তেমন কোনো অভিযান  চোখে পড়েনি। সমপ্রতি  কে বা কারা টেকনাফ সীমান্তের অলিগলিতে দেয়ালে লেখা ‘ইয়াবা অভিযান ব্যর্থ কেন’? অভিযান সফল হচ্ছে না কেন? টেকনাফ সি বিচ সড়কের বাইতুস শরফ মাদ্রাসা, ব্রাক অফিস, মেরিন ড্রাইভ সড়কের  দেয়ালে লাল রঙ দিয়ে এসব লেখা হয়েছে। একাধিক বাসিন্দারা জানান, কয়েকদিন আগে রাতের আঁধারে সড়কের বিভিন্ন স্থান ও দেয়ালে লাল রঙ দিয়ে লেখা হয়েছে। তবে কে লিখেছে,  তা কেউ বলতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে অনেকের মনে নানা কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। সড়কগুলোতে গাড়ি চলছে, চলছে মিনি টমটমসহ অন্য যানবাহন। যারাই এ পথ দিয়ে চলাচল করছেন, তারা লেখার দিকে অন্তত একবার হলেও তাকাচ্ছেন। কয়েকজন পথচারী ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। সেখানে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।

মো. কামাল নামে একজন লিখেছেন, ওসি প্রদীপ থাকাকালে  যে অভিযান হয়েছিল। এরপর থেকে কোনো অভিযান হয়নি। খুচরা বাদাম  বিক্রির  মতো এখন ইয়াবা বিক্রি হয়। নতুন ব্যবসায়ীর সংখ্যাও আরো বেড়েছে। তাই এটি সময়োপযোগী বার্তা। ওয়াজেদ নামে আরেকজন লিখেছেন, আত্মসর্মপণ করা ইয়াবা ব্যবসায়ীরা জামিনে আসার পর থেকে তাদেরকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছেন না, অন্যান্য ব্যবসায়ীরা। তারেক সাগর লিখেছেন, টেকনাফ সদরের বরইতলী ও লম্বরি এলাকা দিয়ে বস্তা বস্তা ইয়াবা খালাস হয়। টেকনাফ সীমান্তের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইয়াবার লেনদেন হয় হ্নীলা ও হোয়াইক্যং এলাকায়। সেদিকে নজর দেয়া দরকার।

রুশি লিখেছেন, সাবেক ওসি প্রদীপের আমলে পালিয়ে  যাওয়া ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এলাকায় এসে ফের ইয়াবা আনছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। কামাল লিখেছেন, গরুর ফার্ম, মুরগির ফার্ম, টমটম বিক্রির দোকান, শোরুম, গ্যাসের দোকান, মাছ ধরার ট্রলার ব্যবসায় জড়িয়েছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। মোজাম্মেল হক লিখেছেন, সরকারের মাদকবিরোধী অভিযান ব্যর্থ হচ্ছে নানা কারণেই। যেমন অভিযান শুরুর আগেই অভিযানের খবর ফাঁস করে দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে যে অভিযানের সাথে জড়িত সদস্যদের একাংশ দায়ী তা নতুন করে বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে সমাজের মধ্যে যদি নীতিহীনতা ব্যাপক আকার ধারণ করে, তখন এমনটি হওয়ারই কথা। বর্তমানে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, নীতিহীনতা ও সংকীর্ণ স্বার্থপরতা যে ভাবে ঢুকে পড়েছে, তাতে এমনটা হওয়া মোটেই আশ্চর্জনক নয়।

তিনি আরো লিখেছেন, মিলে মিশে মাদক ব্যবসা করছেন জনপ্রতিনিধিরা। অর্থাৎ যারা জনগণের ভোটে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, তারাই যদি তাদের প্রতি জনগণের আস্থা ও সমর্থনের এমন অপব্যবহারের পথে যান, তাহলে জনগণের আর ভরসা থাকে কোথায়? নুরুল বশর নামে একজন লিখেছেন, মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িত চুনোপুটিরা মাঝে মধ্যে ধরা পড়লেও এর সাথে যুক্ত রাঘববোয়ালরা তথা গডফাদাররা খুব কমই ধরা পড়ে। কারণ তারা সমাজে খুবই উচ্চ পর্যায়ের লোক। মাদকের তালিকায়  দেড় শতাধিক রাজনীতিক ও পুলিশ সদস্যের নাম। রাষ্ট্র ও সরকারে রয়েছে তাদের বিরাট প্রভাব। সেই প্রভাবকে পাশ কাটিয়ে তাদের গায়ে হাত দেয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। মৌলভি ছৈয়দ লিখেছেন, মাদকবিরোধী অভিযানে দেশি-বিদেশি কোনো কর্তৃপক্ষের সাহায্যে সফল হবে এ দুরাশা বাদ দিয়ে বরং নিজ নিজ জায়গা থেকে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে এবং তাদেরকে ঘৃণা করতে হবে। এছাড়া আলেমকে মাদকের টাকা হারাম সম্পর্কে বয়ান করতে হবে। মাদকের ক্ষতিকর দিকসমূহ তুলে ধরে জনগণ যদি নিজ নিজ অবস্থানে থেকে মাদকবিরোধী সর্বাত্মক অভিযানে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি, তাহলে মাদকবিরোধী অভিযান সফল হওয়া অনেকটাই সম্ভব হবে।

পারভেজ লিখেছেন, দুঃখের ব্যাপার— মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন ধর্মীয় আলেম ও রাজনীতিবিদরা। যাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা তারা এলাকাকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, তারাই যদি সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থে মাদক ব্যবসার মতো সমাজবিরোধী কাজে সক্রিয় হতে পারেন এবং তাতে যদি দলীয় ও উপদলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেন, তবে তাদের কাছে থেকে মাদকবিরোধী অভিযানের মতো একটি দুঃসাহসী অভিযান সফল হওয়ার আশা কোথায়?

নুর উদ্দীন সোহাগ লিখেছেন, নারকেল, আম, জুতা, মাছ, মোবাইল ফোন সেট ও পায়ুপথে করেও পাচার হচ্ছে ইয়াবা।’ এই যদি হয় বাস্তব পরিস্থিতি, তা হলে মাদক নির্মূল অভিযান যে ব্যর্থ হতে বাধ্য, তা একরকম জোর করেই বলা যেতে পারে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে রীতিমতো বোকা বানিয়েছে সক্রিয় ইয়াবা ব্যবসারীরা। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা অভাবী মানুষকে টার্গেট করে একের পর এক ইয়াবার চালান পৌঁছাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।  ইসমাইল লিখেছেন, এমনিতে মাদকবিরোধী অভিযানে সংশ্লিষ্টদের মধ্যেই রয়েছে নানা দুর্বলতা। ফলে অধিকাংশ মাদক ব্যবসায়ী মাদকবিরোধী অভিযান চলার মধ্যেই  বহাল তবিয়তে অবস্থান করছেন। অভিযান চলাকালে তাদের গায়ে সামান্যতম টোকা দেয়ার সাহস পাচ্ছে না। মো. আয়ুব লিখেছেন ইয়াবা ব্যবসা যে হারাম ব্যবসা তা আলেমরা বলে না বরং তারা টাকা পেলে মারহাবা বলে। আরো বেশি টাকা দিলে মসজিদ, মাদরাসা, স্কুলের সভাপতির পদে বসিয়ে দেয়। এই হচ্ছে টেকনাফের অবস্থা। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, পুলিশের অভিযান ব্যর্থ, আমাদের মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আমারসংবাদ/জেআই