নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১, ০৮:০০ পিএম
সরকার ও সরকারি সেবার বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চলাচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী সংঘবদ্ধচক্র। সংঘবদ্ধ অপপ্রচার রোধ ও এ বিষয়ে আইনগত প্রতিকার চেয়ে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার সিএমএম কোর্টে মামলা করেছে সরকারের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’। গত কয়েক দিন ধরে সারা দেশে অন্তত তিন লাখ লিফলেট বিতরণ করেছে একটি সংঘবদ্ধচক্র। এ কাজে তারা সরাসরি নিয়োজিত করেছে ১০ হাজারের বেশি কর্মীকে। বিষয়টি রোধ করতে অজ্ঞাতনামা সহস্রাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছে ‘নগদ’। মামলার নম্বর ২৪৯/২১। মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের মতো করে বিভিন্ন কৌশলে এবং খুবই গোপনীয়তার সঙ্গে দেশব্যাপী সরকারবিরোধী ও সরকারি সেবার বিরুদ্ধে এসব লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। লিফলেটগুলোতে সরকারকে সরাসরি হেয় করা হয়েছে। লিফলেটগুলোর সঙ্গে সম্প্রতি আল জাজিরা টেলিভিশনের প্রচারিত বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনের বাংলা কপিজুড়ে দেয়া হয়েছে, যা এরইমধ্যে উচ্চ আদালত দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। একইসঙ্গে সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনী এবং ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’কে হেয় করতে বিভিন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড মিডিয়ার প্রতিবেদনের কপিও এতে সুকৌশলে জুড়ে দিয়েছে চক্রটি।
এদিকে গত বুধবার উচ্চ আদালতও ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটারসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে কাতারভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভিশনের তথ্য চিত্রটি অপসারণের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা দেশে বিতরণ করা এ ধরনের উস্কানিমূলক লিফলেট জনগণকে বিভ্রান্ত করে উস্কানি দেয়া এবং দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, যা মূলত নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনগুলোর কর্মপ্রক্রিয়ার অংশ। প্রক্রিয়ার সঙ্গে দেশি-বিদেশি একটি কুচক্রীমহল জড়িত বলেও তথ্য পেয়েছে সংস্থাগুলো। রাজধানী ও বাইরে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে একটি আর্থিক কোম্পানি তাদের ডিস্ট্রিবিউটরদের মাধ্যমে এসব লিফলেট বিতরণ করিয়েছে। পরে ডিস্ট্রিবিউটরদের কর্মীরা বিভিন্ন এজেন্ট পয়েন্টে গিয়ে এজেন্টদের হাতে হাতে এসব লিফলেট দিয়ে এসেছেন। বিভিন্ন এজেন্ট পয়েন্টে থাকা সিসি ক্যামেরায় যা ধরা পড়েছে।
লিফলেট বিতরণের এ সংক্রান্ত বেশকিছু ভিডিও এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় কোনো একটি কোম্পানির লোকেরা এসব লিফলেট বিতরণের দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন ভিডিওতে পারস্পরিক কথোপকথন থেকেও দেশি-বিদেশি অংশীদারিত্বে পরিচালিত আর্থিক কোম্পানিটির নাম চলে এসেছে। ‘নগদ’-এর পক্ষ থেকে মামলা করার খবর নিশ্চিত করলেও তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটি এর এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি কোম্পানি হওয়ায় সরকার ও সরকারি সেবার বিষয়ে কেউ চক্রান্ত করলে ‘নগদ’ সে বিষয়ে সব সময়ই তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। তাছাড়া মাত্র দুবছরের মধ্যেই যেহেতু ‘নগদ’-এর সুনাম দেশ ও দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে, সুতরাং অনেকেই হয়তো এখন এটি আর সহ্য করতে না পেরেও চক্রান্তে নেমে পড়েছেন।
কোম্পানির আরেকটি সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে ‘নগদ’ যখন ব্যবসায়িকভাবে অনেক ভালো করছে, একের পর এক নতুন নতুন সেবা নিয়ে এসে বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করছে তখন প্রতিহিংসার কারণে একটি চক্র নানাভাবে ‘নগদ’-এর নামে ভুয়া খবর রটিয়ে গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করার কৌশল নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে চক্রান্তের মাধ্যমে তাদের অগ্রযাত্রা রোধ করার হীন প্রচেষ্টা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন তারা। এ চক্রান্ত মোকাবিলার জন্য যেকোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যেহেতু আইনগত প্রতিকার চাইতে পারে ‘নগদ’ও ঠিক একই কারণে মামলা করেছে বলেও জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সূত্র। অন্য একটি সূত্র বলছে, বহুদিন থেকে দেশি-বিদেশি শক্তিশালী সংঘবদ্ধ চক্রটি নানাভাবে দেশের অভ্যন্তরের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। তাসনিম খলিল নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশিকেও চক্রান্তের অন্যতম হোতা হিসেবে এরইমধ্যে সরকারের বিভিন্ন পক্ষ থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রবাসে থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে তিনি সরকার ও সরকারি সেবার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। আল জাজিরার তথ্যচিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়ায়ও এ তাসনিম খলিল সরাসরি অংশ নিয়েছেন। তাসনিম খলিলও দেশের ভেতরের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিও এ হীন প্রচেষ্টার সঙ্গে নানাভাবে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত হয়ে বিদেশি মদতপুষ্ট আর্থিক কোম্পানিটিও এ সুযোগে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে বলে ধারণা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।
আমারসংবাদ/জেআই