Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

নৌপথ উন্নয়নে বহুমুখী উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২১, ০৯:১০ পিএম


নৌপথ উন্নয়নে বহুমুখী উদ্যোগ
  • খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে ৪৯১টি নদী চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩১৩টি নদীতে কাজ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড আর ১৭৮টি নদীতে কাজ করবে বিআইডব্লিউটিএ

দীর্ঘদিন ধরেই দেশের নৌ-পথ কমে যাওয়ার ফলে নৌপথ বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। যার বাস্তবায়ন করছে যৌথভাবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সম্প্রতি আমার সংবাদকে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক। সড়কপথ সম্প্রসারণের পাশাপাশি নৌপথ বাড়াতেও সরকারের এ উদ্যোগের বাস্তবায়ন চলছে বলেই জানিয়েছেন তিনি।

চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, ‘নৌপথ বাড়ানো এবং এর উন্নয়নে কাজ করছে বিআইডব্লিউটিএ। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় মিলে একটি খসড়া মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছি। যেখানে ৪৯১টি নদী চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩১৩টি নদীতে কাজ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড আর ১৭৮টি নদীতে কাজ করবে বিআইডব্লিউটিএ। আমাদের টার্গেট হচ্ছে আগামী চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে নৌপথের পরিমাণ ১০ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করা। আমরা গত কয়েক বছরে অলরেডি দুই হাজার কিলোমিটার কাজ করে এখন প্রায় সাড়ে চার হাজার কিলোমিটারেও উন্নীত করেছি।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা আরও একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি, কিছু কিছু জায়গায় আগে যেগুলো দ্বিতীয় শ্রেণির নদী ছিলো সেগুলোকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার চেষ্টাও করছি। এখানে আমাদের একটা সমস্যাও রয়েছে, যেমন বিভিন্ন জায়গায় ইতোমধ্যে ব্রিজ তৈরি হয়ে গেছে। যেগুলোর ঠিকমতো ক্লিয়ারেন্স নেই। এ জন্য প্রথম শ্রেণির নৌপথ করতে হলে গভীরতা যেরকম লাগে একই সাথে চওড়া (হরাইজন্টাল ক্লিয়ারেন্স) এবং ভার্টিকেল ক্লিয়ারেন্সটাও গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে আমরা মাঝে মাঝে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছি। তবে কেবিনেট সচিব এ নিয়ে মিটিং করে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দিয়েছেন এবং পুরনো ব্রিজ যেগুলো হয়ে গেছে, সেগুলো যেহেতু আর ভাঙা যাবে না, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অনুশাসন দিয়েছেন যে, ব্রিজ তৈরি করতে হলে আগে নৌপথের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সেটা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে হোক আর বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকেই হোক। খেয়াল রাখতে হবে, নৌপথে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে কি-না। এলজিইডিসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরই এখন উচ্চতা কত হবে, হরাইজন্টাল এবং আন্তঃপিলারের দূরত্ব কতটুকু হবে সে জন্য আমাদের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্সও নিচ্ছে।

বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীর তীর থেকে ইতোমধ্যে প্রায় ১২ হাজার ৩৯৬টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং ৩৭২ দশমিক ১২ একর জমি উদ্ধার করেছে বিআইডব্লিউটিএ। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরভূমি থেকেও প্রায় দুই হাজার ৭৭৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও ১৯৪ একর জমি উদ্ধার করেছে সংস্থাটি। উচ্ছেদের পর পুনর্দখল রোধে বিআইডব্লিউটিএর দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা আছে কি-না এমন প্রশ্নে কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, পুনর্দখল রোধে ঢাকার চারপাশ নিয়ে এখন আমরা কাজ করছি। সারা দেশেই এ কাজটা করবো।  ঢাকা-নারাণগঞ্জ জেলায় ও মুন্সীগঞ্জের যে পাঁচটি নদী রয়েছে সেগুলোতে আমরা পুনর্দখল রোধে সীমানা পিলার বসাচ্ছি, উভয় তীরে ওয়ার্কওয়ে তৈরি করে দিচ্ছি, আরসিসি স্টেপস, বসার বেঞ্চ, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিরও বাস্তবায়ন করছি। এরপর পর্যায়ক্রমে বনায়নও করা হবে। ইকোপার্কও তৈরি করবো যেনো পুনরায় আর দখল করার সুযোগ না থাকে।’  নদী খননের চলমান প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, ‘আমাদের অনেকগুলো প্রকল্পই চলমান রয়েছে। বর্তমানেও ৫৩ নদীর একটি প্রকল্প চলমান। সেখানে প্রথম পর্যায়ে ২৪টি নদীর খনন কাজ প্রায় শেষের দিকে এবং এটা আগামী অর্থবছরেই শেষ হয়ে যাবে। এ ছাড়াও চারটি নদীর আরেকটি প্রকল্প আছে। ১২টি নদীর প্রকল্প আমরা শেষ করলাম চলতি অর্থবছরে। গোমতী, ঘাগট নদী তথা সব মিলিয়ে ১৭৮টি নদীতেই আমরা ধীরে ধীরে প্রকল্প সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি এবং ইতোমধ্যেই কিছু প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনেও জমা দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটা প্রকল্পই পাস হলে আমরা কাজ করবো।’ নৌপথ উন্নয়নের সাথেই এটা সংশ্লিষ্ট। এ ছাড়াও বিআইডব্লিউটিএ নৌপথ তৈরি, নৌপথের নাব্য রক্ষা, ঘাট সুবিধা, অভ্যন্তরীণ বন্দর সুবিধা, রুলস অ্যান্ড রেজ্যুলেশনের তদারকিসহ কোথাও কোনো নৌ দুর্ঘটনা ঘটলে সেগুলোতে উদ্ধার অভিযানের সমন্বয়ের পাশাপাশি নিয়মিত কাজগুলোও করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।  

এদিকে সম্প্রতি নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সংসদে বলেছিলেন, ‘সরকার নৌপথের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে গোটা নৌ-যোগাযোগ খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।’ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘১৯৬০ সালের আগে দেশের নৌপথের দৈর্ঘ্য ছিলো ২৪ হাজার কিলোমিটার। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্টদের অযত্ন, অবহেলা এবং নদীকে অবজ্ঞা, যথাযথ পরিকল্পনা এবং তদারকির অভাব ও প্রকৃতির পরিবর্তনে নৌপথের দৈর্ঘ্য ছয় হাজার কিলোমিটারে নেমে আসে।’ তিনি আরও জানান, ‘আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলে সমুদ্রগামী ছয়টি বড় জাহাজ করার পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাঙ্কার, দুটি মাদার প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাঙ্কার ও কয়লা পরিবহন উপযোগী দুটি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার। এ ছাড়া সমুদ্রগামী আরও চারটি নতুন সেলুলার কন্টেইনার জাহাজ কেনারও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।’

আমারসংবাদ/জেআই