Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

বিশ্ববিদ্যালয়ে হঠাৎ অস্থিরতা

মোতাহার হোসেন, ঢাবি

ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১, ০৬:৫০ পিএম


বিশ্ববিদ্যালয়ে হঠাৎ অস্থিরতা

করোনা মহামারির উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত বছরের মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। দেখতে দেখতে একটি বছর কেটে গেলেও হল ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে এখনো কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে হল খোলার দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে হল খোলার বিষয়ে জানতে চাইলে করোনার দোহাই দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় এড়িয়ে যাচ্ছে। যার কারণে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খোলার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হঠাৎ অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ঘটছে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, গত বছরের মার্চ মাস থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় বছর খানেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থাকার কারণে তারা অস্থির হয়ে পড়েছেন। এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও অনলাইনে চলছে তাদের ক্লাস-পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, অনেক শিক্ষার্থীর আর্থিক অবস্থা সচ্ছল নয়। যার কারণে তাদের অনেকের স্মার্ট ফোন নাই, আবার অনেকের স্মার্ট ফোন থাকলেও নেট কেনার মতো টাকা নাই। আবার অনেকের স্মার্টফোন বা টাকা থাকলেও গ্রামে নেট সমস্যার কারণে ক্লাস করতে পারছেন না কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা বিবেচনায় না নিয়ে অনলাইনে ক্লাস পরীক্ষা চলমান রেখেছে এবং এই অনলাইন ক্লাসের ওপর ভিত্তি করে পরীক্ষা হবে বলে তারা জানিয়েছেন। তবে, প্রশাসনের এই আচরণে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় যখন বন্ধ হয় সে সময় শিক্ষার্থীরা ভেবেছিলো অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আবার হলগুলো খুলে দেয়া হবে। সে সময় অনেকে জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও রেখে যান। তবে দফায় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়তে থাকলে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েন। সময়মতো পরীক্ষা না হওয়ায় একদিকে সেশনজট, অন্যদিকে আর্থিক চাপেও পড়ে যান বহু শিক্ষার্থী। করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই চাকরির নিয়োগ। সামনে বিসিএস, ব্যাংক নিয়োগ, এনএসআই, অডিট নিয়োগের মতো নানা পরীক্ষা চলমান রয়েছে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেমে নেই। অথচ পড়াশোনা করতে নানা সমস্যায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, বাসায় থেকে অনেকের পড়াশোনা নানা কারণে হয় না। আবার অনেকের বইখাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, অনেকে আবার শহরে থেকে পড়াশোনা করতে ভালোবাসে। অনেকের বাসায় থেকে নেটের কারণে ক্লাস করতে সমস্যা হয়। অনেকে আবার প্রতিবেশীর রোষানলে পড়ে বাসা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। যার কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় বা কোনো শহরের আশপাশ বাসা বা মেস ভাড়া করে থাকছেন। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীর আর্থিক অবস্থা দুর্বল হওয়ায় সেখানে থাকতেও নানা সমস্যার সন্মুখীন হতে হচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, করোনায় সারা দেশে যেখানে বিশেষ ব্যবস্থায় চলাচলে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দাবিতে দেশের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন, মানববন্ধন অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে হল খুলে না দিলেও শিক্ষার্থীরা জোরপূর্বক তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেছে— এমন অভিযোগও উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে আন্দোলনে নেমেছেন। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্থানীয়দের সঙ্গে ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাস শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়িয়েছেন। এসব সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হল খোলার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হূদয় মিয়া বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য ক্যাম্পাসের হলগুলো বন্ধ প্রায় এক বছর। সারা দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও হল খোলা নিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা বেশ কিছুদিন বাড়িতে থাকার ফলে ছোট ছোট ঘটনায় এলাকায় ও ক্যাম্পাসের আশপাশের মেসে ছড়িয়ে পড়ছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভাই-বোনেরা। হল না খোলার কারণে অনেক বর্ষের শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। করোনায় অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত পরিবারের সন্তানরাও চাকরি ও পড়াশোনার জন্য স্ব স্ব ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে চাচ্ছে কিন্তু মেস কিংবা বাইরে থাকার ব্যয় সংকুলান করতে পারছে না। তাছাড়া হল না খোলার কারণে নানা সংকটে আছেন শিক্ষার্থীরা।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনার ভ্যাকসিন চলে এসেছে, অনেক লোক ভ্যাকসিন নিয়েছেন। প্রশাসন কোথায় শিক্ষার্থীদের জন্য ভ্যাকসিনেশন ব্যবস্থা করবেন, তারা অসহযোগিতা মূলক আচরণ শুরু করেছে। সারা দেশের সব কিছু খোলা, তারপরও হল খুলে দিতে কিসের এত ভীতি? আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করি, হল বন্ধ রাখা প্রশাসনের অবিবেচনাপ্রসূত ইচ্ছামাত্র, এর পেছনে কোনো যুক্তি কিংবা যৌক্তিকতা নেই। হল খুলে দেয়া সময়ের দাবি। দ্রুততম সময়ে হল খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মেশকাত মিশু বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে হলগুলোই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। করোনা উপেক্ষা করে শত শত শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে চলে এসেছে। হল খোলা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মেসগুলোতে থাকছে। কিন্তু আমার মনে হয়, এতে দীর্ঘদিনের গৃহবন্দি জীবনের একটা ইতি এলেও খুব একটা লাভ হয়নি। শুধু পালিয়ে বেড়ালাম। হলের পরিবেশ আর মেসের পরিবেশে অনেক তফাৎ। এত এত সংখ্যক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে আছি। হলে থাকলে একটা নিরাপত্তা পেতাম। বরিশাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা নৃশংস হামলার শিকার হয়েছে, আমরা অনেকটা তাদের মতো পরিস্থিতিতে আছি। ক্যাম্পাসের বাইরে প্রতিনিয়ত একটা আতঙ্ক কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন সরকারি সিদ্ধান্তের অজুহাত দিয়ে দিন পার করছে। আমার মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, আরও যারা যারা আছে, তাদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলাদাভাবে ভ্যাকসিন দিয়ে খুব কম সময়ে পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক কার্যক্রমে যেতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে আর কতদিন? আপনি প্রাইমারি বা হাইস্কুল বন্ধ রাখতে পারেন, অটোপাস দেয়া যায়, ক্ষতি হলেও পুষিয়ে নেয়ার সময় পাওয়া যাবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের তো সেভাবে চালিয়ে দেয়া যাবে না। আমরা তো টানেলের শেষপ্রান্তে। ছুটির বৃত্তে ১০ দিন থেকে মাস ঘুরে বছর গেলো গেলো অবস্থা। না হয়েছে একাডেমিক পড়াশোনা, না চাকরির। এখন আমাদের প্রতিটা সেকেন্ড গুরুত্বপূর্ণ। এখানে যত কালক্ষেপণ করবেন ততই দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবো আমরা, দেশটা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটাই আর্জি থাকবে সরকারের সাথে আলোচনা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন দেয়ার ব্যবস্থা করেন। আমরা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত কিছু প্রাণী হয়ে যাচ্ছি। প্রাণচাঞ্চল্য ক্যাম্পাসে ফেরার আকুলতায় সেকেন্ড-মিনিটে কাউন্টডাউন করছি।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও সময়ের পরিক্রমায় প্রতিষ্ঠানটি তার মৌলিক বৈশিষ্ট্য (সম্পূর্ণ আবাসন ব্যবস্থা) হারিয়েছে। তথাপি শিক্ষার্থীদের বৃহৎ অংশটি হলেই অবস্থান করতো। এমতাবস্থায় করোনা পরিস্থিতি একটি ভিন্ন অবস্থার সূচনা করে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যবিত্ত পরিবার হতে উঠে আসা শিক্ষার্থীদের অংশটি অন্যতম। যাদের চোখেমুখে খেলা করে স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধভাব। এই মহামারি তাদের স্বপ্নকে সত্যে রূপান্তরের পথে পিছিয়ে দিয়েছে অনেকগুণ। করোনা পরবর্তী ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম ক্যাম্পাসে ফেরার প্রত্যাশা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতা এর পথে তৈরি করে দীর্ঘসূত্রতা। যার অনিবার্য পরিণতিই হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন সংকট।’ তিনি আরও বলেন, ‘হল খোলা থাকলে শিক্ষার্থীরা তাদের পড়ার আমেজ ফিরে পাবে। শ্রেণি কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে অনেকের শিক্ষাজীবন ত্বরান্বিত হতো। অংশ নিতে পারতো বিভিন্ন ধরনের জাতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়। হল খোলার পুরো ব্যাপারটি শিক্ষার্থীদের উপকৃতই করবে। ভ্যাকসিনেশন কিংবা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে হল খোলার ও একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার একটি ফ্রেমওয়ার্ক দ্রুত ঘোষণা দেয়া উচিত। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা-বিষণ্নতা দূর হয়ে তাদের মনোবল চাঙ্গা হবে। এই মুহূর্তে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলো শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা বাকি রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক বিভাগের ক্লাস-টিউটোরিয়াল সম্পন্ন রয়েছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই ব্যাচ সমূহের পরীক্ষা গ্রহণের ঘোষণা দেয়া। যাতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারে। এক্ষেত্রে পরীক্ষাগুলোর সিলেবাস সংকোচন করা যেতে পারে। এতে সেশনজট হতে কিছুটা হলেও নিস্তার পাবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এবং নিজেদের স্বপ্ন পূরণে হবে অগ্রগামী।’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খোলা না থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। হল না খুলে যখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিচ্ছে তখন শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ আবাসন সংকটে ভুগছে যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাচ্ছে। এর ফলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও মানসিকভাবে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এর ফলে একদিকে যেমন এটি তাদের একাডেমিক পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা তাদের লক্ষ্য থেকে ছিটকে পড়ছে। তাছাড়া চাকরিপ্রত্যাশী অনেক শিক্ষার্থী তাদের পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়ার ফলে চাকরির প্রস্তুতি সঠিক সময়ে সম্পন্ন করতে পারছেন না । এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের এসব ভোগান্তি ও সমস্যার কথা মাথায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত অচিরেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলগুলো খুলে দেয়া।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থী মাইনুদ্দীন পরান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার ফলে স্বাভাবিকভাবে হলগুলোও বন্ধ রয়েছে। তাই বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই তাদের বাসায় অবস্থান করছে। তবে অনেক শিক্ষার্থী টিউশনি কিংবা ক্যারিয়ার কেন্দ্রিক পড়াশুনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান করছে। এক্ষেত্রে তারা হল বন্ধ থাকায় বাইরে মেস কিংবা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হচ্ছে, যার দরুণ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জন্য নিজেদের অধিক খরচ বহন করা কষ্টসাধ্য হচ্ছে। অন্যদিকে একাডেমিক কিংবা চাকরির পড়াশুনার জন্য শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কিংবা রিডিং রুম ব্যবহার করে এবং নিজেদের মধ্যে গ্রুপ স্টাডি করে থাকে। কিন্তু হল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগ থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হচ্ছে, যার ফলে তাদের পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটছে। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে বিশেষ করে মাস্টার্স কিংবা চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য হলেও সীমিত পরিসরে হল খুলে দেয়া।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রানা আহম্মেদ বলেন, ‘পরীক্ষার কারণে অনেক শিক্ষার্থী এখন ক্যাম্পাসে চলে এসেছে। বাইরে থাকা-খাওয়া অনেক টাকার ব্যাপার। করোনার কারণে টিউশনিও বন্ধ। তাই হল খুলে দিলে অন্তত বাইরে থাকার ভাড়া নিয়ে চিন্তা করতে হতো না।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক আমার সংবাদকে বলেন, সরকার ইতিমধ্যে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন খুলতে দেরি হচ্ছে সেটা ছাত্র-ছাত্রীদের বলা দরকার। টিকা দিয়ে খুলতে গেলে একটু সময় লাগবে। এখন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ যারা তাদের পরামর্শটায় বেশি কাজে লাগবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী থাকুক আমরা চাই। কিন্তু তারা কোন ঝুকিতে না থাকুক সেটাও আমরা চাই। এই দুটি দিক বিচেনায় প্রশাসনের সেটাই চেষ্টা করা উচিত। একটা সুন্দর সমাধান হোক সেটাই আমরা চাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য় (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল আমার সংবাদকে বলেন, সামগ্রিক বিশ্বের প্যানডেমিক সিচুয়েশনে  কী করনীয় বা ওয়ার্ল্ড এন্ড অরগানাইজেশনের সুপারিশ এগুলো বিবেচনায় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি জাতীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। খন্ডিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই। সেই আলোকে সরকার সার্বিক ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা করে জেনে বুঝে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আমারসংবাদ/জেআই