আবদুর রহিম ও রফিকুল ইসলাম
ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১, ০৭:০৫ পিএম
চিন্তা হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার। সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ভাবতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। এরপরই আলোচনায় আসছে গণরুম! এটিই এখন দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠগুলোতে ভয়ংকর নাম। স্বাস্থ্যঝুঁকি, পড়ার পরিবেশ ও ঘুমের বিপর্যস্ত যন্ত্রণার ঠিকানা। করোনা মহামারির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম নিয়ে চিন্তার ভাঁজ অভিভাবক ও সচেতন মহলের।
সরকারি নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলোর ভাষ্যমতে, এতোদিন গণরুমই ক্যাম্পাস খুলতে বড় বাধা ছিলো। গণরুমে করোনায় কোনো মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রাণহানি হলে পরিস্থিতি রাজনৈতিক অঙ্গনে ভিন্ন দিকে মোড় নেবে। তাই সরকার গণরুম শঙ্কায় অতিরিক্ত চাপ নিতে চায়নি এতোদিন। সমপ্রতি হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নিচ্ছে ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজ। বিপাকে পড়ছে শতশত নারী শিক্ষার্থী। এখন হল বন্ধ রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও পরীক্ষার ঘোষণা দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে চাপে পড়ে প্রশাসন। ইঙ্গিত দেয় হল খোলার। এ নিয়ে বিশেজ্ঞরা ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক দিকই বেশে দেখছেন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। গণরুম রেখে কেউ হল খোলার পক্ষে না। তারা বলছেন, এ মুহূর্তে গণরুমের ব্যবহার উদ্বেগজনক। বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে গণরুমের পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে বলা যাচ্ছে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার আগে অবশ্যই গণরুমের সমাধান করতে হবে। গণরুম রেখে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে বিপর্যয় ঘটতে পারে। তবে অনেকে এও বলছেন, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো অছাত্র ও বহিরাগতরাই দখল করে রাখে। ফলে নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই হলে কষ্টে থাকে। প্রতিটি হলের ছিটগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি দায়িত্বশীলতার সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে অগ্রাধিকারভিত্তিতে বণ্টন করেন তাহলে এ সমস্যা থাকবে না । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮টি হলে ১৫০টির অধিক গণরুমে সাড়ে তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে, প্রতিটি হলে ১০-২০টি করে গণরুম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কমন রুম, রিডিং রুম, সংসদ রুম, নামাজের কক্ষ ও সাইবার রুম গণরুম হিসেবে পরিচিত একজনের আসনে চারজনও থাকছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি হলের প্রত্যেকটিই গণরুম। ছেলেদের চারজনের কক্ষে ১০ জন, মেয়েরা থাকছে ১৫ জনেরও বেশি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেনে গণজমায়েত নিয়ে চিন্তা প্রশাসনে, প্রতিদিন গাদাগাদি করে ১২ হাজার শিক্ষার্থী ট্রেনে যাতায়াত করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি হলে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের অবস্থান, বিশেষ করে মেয়েদের গণরুম নিয়ে চিন্তার ভাঁজ প্রশাসনে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের তিনটি এবং মেয়েদের একটি হল গণরুম, স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা দেখছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া এখনো সবমিলে দেশের ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ৩৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা রয়েছে। বাকি ৬৪ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীই এ সুবিধার বাইরে রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউজিসি। এ নিয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ যতিন সরকার আমার সংবাদকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব গণরুম রয়েছে তা বন্ধ ও সমাধানের এখনই কার্যত সময়। গণরুম সমাধান ব্যতিত স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে প্রতিষ্ঠান খোলা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। তাই সরকারের উচিত গণরুমের সমাধান করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য একে আজাদ চৌধুরী এ বিষয়ে আমার সংবাদকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণরুম বন্ধের একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তা নিয়েছেন অবশ্যই স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয় চিন্তা করে। গণরুম রেখে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে বিপর্যয় ঘটতে পারে। ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আমার সংবাদকে বলেন, শুধু করোনা নয়, যেকোনো সময়ের জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণরুম বন্ধ করা উচিৎ এবং করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়নি। এ মুহূর্তে গণরুমের ব্যবহার উদ্বেগজনক। এই পরিস্থিতিতে যেকোনো মূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে গণরুম পরিহার করতে হবে। নইলে গণরুমের শিক্ষার্থীদের করোনা ঝুঁকি থেকে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না আমার সংবাদকে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন গণরুম থাকবে? এটি নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। করোনার এ সংকটকালীন সময়ে যদি প্রতিটি শিক্ষার্থীকে আলাদা সিট নিশ্চিত করা না হয়, তাহলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে বলা যাচ্ছে না। তাই শিক্ষার্থীদের সিট নিশ্চিত করতে হবে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর আমার সংবাদকে বলেন, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো অছাত্র ও বহিরাগতরাই দখল করে রাখে। ফলে নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই হলে কষ্টে থাকে। প্রতিটি হলের ছিটগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি দায়িত্বশীলতার সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে অগ্রাধিকারভিত্তিতে বণ্টন করেন, তাহলে এ সমস্যা থাকবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, তারা সব সময় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের ওপর ছেড়ে দেন। করোনার এ সংকটে এটা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। নইলে করোনার এ পরিস্থিতিতে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নতুনভাবে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
আমারসংবাদ/জেআই