Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

মৃত নারীর অ্যাকাউন্টে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা!

আমিনুল ইসলাম,সখীপুর (টাঙ্গাইল)

ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১, ০৮:৫০ পিএম


মৃত নারীর অ্যাকাউন্টে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা!
  • সখীপুরে ইএফটির মাধ্যমে ভাতা স্থানান্তর  নিয়ে হ-য-ব-র-ল

বীর মুক্তিযোদ্ধা বিলাশ চন্দ্র বর্মন ২০১০ সালের ১৭ জুন মারা যান। ২০১৪ সাল থেকে তার একমাত্র ছেলে পলাশ চন্দ্র বর্মন উপকারভোগী হিসেবে ওই ভাতা পেয়ে আসছেন। সরকার এখন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ইএফটির মাধ্যমে (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাবে (অ্যাকাউন্টে) পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে পলাশ চন্দ্র বর্মনের অ্যাকাউন্টে জানুয়ারি মাসের টাকা পাঠানো হলেও ওই টাকা চলে গেছে একজন নারীর অ্যাকাউন্টে। ওই নারীও বছর চারেক আগে মারা গেছেন। এদিকে আরও ২১৫ জন মুক্তিযোদ্ধার  ভাতা সোনালী ব্যাংকের সখীপুর শাখায় আসার পরিবর্তে চলে গেছে বাগেরহাটে। ইএফটির মাধ্যমে ভাতা স্থানান্তর (ট্রান্সফার) নিয়ে এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা হয়েছে টাঙ্গাইলের সখীপুরে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় ৯৯৮ জন তালিকাভূক্ত মুক্তিযোদ্ধা থাকলেও এমআইএসের (ম্যানেজম্যান্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন ৯৮৩ জন। এর মধ্যে জীবিত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন ৬২০ জন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা জিটুপি (গভনম্যান্ট টু পারসন) প্রক্রিয়ায় সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাবে পাঠানোর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় এক লাখ ৬৮ হাজার মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের উপকারভোগীকে জানুয়ারি মাসের ভাতা বাবদ ১৮২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরাসরি ভাতাভোগীর ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়। সখীপুর সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার সাইফুল ইসলাম  বলেন, ‘৭৮৬ জনের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকলেও শাখার নাম ভুল হওয়ার ২১৫ জন মুক্তিযোদ্ধার অ্যাকাউন্টে এখনো টাকা পৌঁছেনি। এ ছাড়াও আরও একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের অ্যাকাউন্টে টাকা না ঢুকে একজন নারীর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার ঘটনাও ঘটেছে।’ পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের এমআইএস করার সময় ভুলবশত ব্যাংকের শাখার লেখার অপশনে সখীপুর লেখা হলেও অটোমেটিক বাগেরহাট হয়ে গেছে। ফলে তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা আসেনি। গত সাতদিন ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাংকে এসে টাকা তুলতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন।

ওই ব্যাংক কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সখীপুরে ১৩২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা তাদের ভাতার বিপরীতে তিন লাখ টাকা করে ঋণ নিয়েছেন। প্রতি মাসে আমরা ওই ভাতা থেকে সাড়ে সাত হাজার টাকা কিস্তি হিসেবে কেটে রাখি। তাদের ভাতা না আসায় ঋণের কিস্তিও কাটা যাচ্ছে না।’ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পলাশ চন্দ্র বর্মন  বলেন, ‘অ্যাকাউন্ট নম্বর সঠিক দেয়ার পরও আমার অ্যাকাউন্টে না এসে টাকা গেছে সালাতন নেছা নামের এক নারীর অ্যাকাউন্টে। এখন ওই টাকা কবে আমার অ্যাকাউন্টে আসবে তা কেউ বলতে পারছে না।’ সখীপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহীদ সিকদার আমার সংবাদকে বলেন, ‘সালাতন নেছা আমার ওয়ার্ডের মৃত টুক্কু ফকিরের স্ত্রী। তিনি ২০১৭ সালে মারা গেছেন।

সোনালী ব্যাংকের ভাতা-বিষয়ক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সালাতন নেছার ওই অ্যাকাউন্টে মাত্র ১০ টাকা ছিলো। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযোদ্ধার ১২ হাজার টাকা ওই অ্যাকাউন্টে ঢুকে। এই টাকা আসা ছাড়া ওই অ্যাকাউন্টে ২০১৬ সালের পর কোনো লেনদেন হয়নি। সালাতন নেছা মারা যাওয়ার বিষয়টিও আমাদের জানা নেই। তারপরও সমাজসেবা কর্মকর্তার চিঠি পেয়ে সালাতন নেছার অ্যাকাউন্টটি আমরা বন্ধ (ফ্রিজ) করে দিয়েছি। এদিকে  উপজেলার গোহাইলবাড়ি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়া উল্লাহ, বাঘেরবাড়ি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম, বহুরিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়েজ উদ্দিন বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েছেন। তারা তিনজনই বলেন, আমরা একদিন নয়, দুইদিন নয়, পরপর চারদিন ২০০ টাকা খরচ করে ভাতা তোলার জন্য সখীপুর এসেছি। সোনালী ব্যাংকে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে ভাতা না পেয়ে নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছি।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ  আমার সংবাদকে বলেন, ‘এমআইএস করার সময় তথ্য পূরণে আমাদের কোনো ভুল হয়নি। তবে শাখার অপশনে অটোমেটিক সখীপুরের স্থলে বাগেরহাট হয়েছে। এদিকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের বেলায় হিসাব নম্বর লিখতে ভুল হওয়ায় ওই টাকা এক নারীর অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। এগুলো সংশোধনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আশা করি শিগগিরই বিষয়টি সমাধান হবে।’ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চিত্রা শিকারি আমার সংবাদকে বলেন, ‘সফটওয়্যারে সমস্যার কারণে এমনটি হয়েছে। শিগগিরই সংশোধনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

আমারসংবাদ/জেআই