Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ভুয়া জামিনাদেশে মুক্ত যুবলীগ নেতা!

ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২১, ০৮:১০ পিএম


ভুয়া জামিনাদেশে মুক্ত যুবলীগ নেতা!
  • জামিনের বিষয়ে জানেন না সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কেউই
  • জাল নথি নজরে আসায় গ্রেপ্তারের নির্দেশ
  • জামিননামায় উল্লিখিত আইন কর্মকর্তাদের কেউই স্বপদে নেই
  • শাস্তি নিশ্চিত করা গেলেই জালিয়াতি বন্ধ হবে -অ্যাটর্নি জেনারেল

বগুড়া সদর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম ও কাউন্সিলরসহ ৩০ আসামি ভুয়া আগাম জামিনাদেশ তৈরি করে সেই জাল জামিনের কপি বগুড়া সদর থানায় দাখিল করে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

আদেশটি হাইকোর্ট থেকে নেয়া হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। ভুয়া ওই আদেশনামায় দেখানো হয়েছে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে যুবলীগ নেতা আমিনুলসহ ৩০ আসামির ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেয়া হয়েছে। জামিনের মেয়াদ শেষে তাদের সবাইকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অথচ জামিনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ ও বেঞ্চ অফিসাররা কিছুই জানেন না। আদেশের বিষয়ে কিছু জানেন না ওই বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়াও। এমনকি বেঞ্চ সৃষ্টির পর থেকে এখন পর্যন্ত ওই আগাম জামিনের কোনো আবেদনও শোনেনি।

আবার জামিননামায় যেসব আইন কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দুজন ২০১৯ সাল থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়েই নেই। অপরজন পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। এছাড়া আদেশের কপিতে টাইপিস্ট (মুদ্রাক্ষরিক) হিসেবে নাম আছে জি. মোক্তাদিরের। অথচ সংশ্লিষ্ট সেকশনে জি. মোক্তাদির নামে কেউই নেই। এছাড়া জাল আদেশে ফৌজদারি বিবিধ মোকাদ্দমার নম্বর-৪০৫৪২/২১। তবে আদেশের দিন হাইকোর্টের ফৌজদারি বিবিধ মোকাদ্দমার সংখ্যা সাত হাজারের বেশি। জালিয়াত চক্রের শেষ রক্ষা হয়নি। জালিয়াতি করে জামিন নেয়ার বিষয়টি ধরা পড়ায় বিস্মিত হয়েছে হাইকোর্ট। সেই সাথে ৩০ আসামিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়ে এই আদেশ বাস্তবায়ন করে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে গত বুধবার বগুড়া সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দেয় বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের বেঞ্চ।

জানা যায়, বগুড়ায় দুপক্ষের সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আবেদন না করেও জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত জাল আদেশে তারা এ জামিন নেন। সেই জাল জামিনাদেশ দাখিল করা হয় বগুড়া সদর থানায়। সেই আদেশবলে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আমিনুল ও তার সহযোগীরা। এতে সন্দেহের সৃষ্টি হলে মোহন গ্রুপের লোকজন থানা থেকে ওই জামিনাদেশের কপি সংগ্রহ করে তা এক আইনজীবীর মেসেঞ্জারে পাঠান।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম বলেন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই কোর্টে কোনো মোশন শুনানি হয়নি। এছাড়া এ বেঞ্চ এখতিয়ার পাওয়ার পর থেকে কোনো দিনই আগাম জামিনের শুনানি করেননি।

সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী সকালে কোর্টে এসে খবর নেন এ মামলায় ৩০ জন আসামির জামিন হয়েছে কি-না। তখন কোর্টের বেঞ্চ অফিসার বলেছেন, আমাদের কোর্ট থেকে এ ধরনের কোনো আগাম জামিন হয়নি। এমন কোনো আদেশ এ আদালত থেকে দেয়া হয়নি। এ সময় বেঞ্চ অফিসার ওই আইনজীবীর কাছে জানতে চান, জামিন আদেশের কোনো অনুলিপি তার কাছে আছে কি-না। তখন ওই আইনজীবী মোবাইলে জামিন আদেশটি দেখান। তখন বেঞ্চ অফিসার আদালতকে বিষয়টি জানালে আদালত এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শুনে তাদের গ্রেপ্তার করতে নির্দেশ দেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, এটা সম্পূর্ণ জালিয়াতি। একটি চক্র এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠিনতর ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা এই জাল আদেশের সুবিধাভোগী তাদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই জালিয়াত চক্রের হদিস মিলবে। এই জালিয়াত চক্রকে কঠোর হস্তে দমন ও শাস্তি দিতে হবে। শাস্তি নিশ্চিত করা গেলেই এ ধরনের জালিয়াতি বন্ধ হবে। তিনি বলেন, এই জাল আদেশের কপিতে যেসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে তার অধিকাংশই মিথ্যা।

আদালত আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়ার সঙ্গে বগুড়ার আদালতকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। হাইকোর্টের জামিন আদেশের বিষয়ে জানতে আমিনুল ইসলামের মোবাইল নাম্বারে কল করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

জাল আদেশের কপিতে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন— যুবলীগ নেতা সদরের নিশিন্দ্রা গ্রামের আমিনুল ইসলাম, তার ভাই মো. আলিম ও মো. আনোয়ার মণ্ডল, বগুড়া সদরের মো. লিটন প্রাং, মো. বাদল (ভ্যানগাড়ি), মো. সেলিম, মো. মানিক, মো. জাকির, মো. তানভীর, মো. কিবরিয়া, মো. গণি, মো. হালাল, মো. রাসেল মণ্ডল, মো. রাশেদুল, মো. সাদ্দাম, মাহমুদ, রুহুল আমিন, মো. জাহিদুর রহমান জাদু, আসাদুজ্জামান মনা ওরফে সাহিকুজ্জামান, নুর আলম মোল্লা, বিপুল, খোকন ওরফে মো. গোলাম রফিক, শিপন, আল মামুন ওরফে মো. মাহবুব রহমান, মিরাজ, মো. সুমন প্রামাণিক, মিনহাজ আহমেদ ওরফে দীপ্ত, রাজীব, রতন এবং সেলিম রেজা।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে মোটর মালিক গ্রুপের অফিস দখলকে কেন্দ্র করে বগুড়া শহরের চারমাথা এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মোটর মালিক গ্রুপের একটি অংশ চারমাথায় অবস্থিত গ্রুপের কার্যালয়টি দখল করতে যায়। এ সময় আরেকটি গ্রুপের সদস্যরা বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে সাংবাদিক, পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। তিনটি বাস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পাঁচটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া চারমাথা পেট্রল পাম্প, নাভানা সিএনজি ফিলিং স্টেশন, শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় দুই গ্রুপের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি এবং পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা হয়। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের করা মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে আমিনুলসহ ৩০ জনের নাম রয়েছে জাল জামিনের আদেশে।

এই মামলায় হাইকোর্ট থেকে আমিনুলসহ ৩০ জনের জামিন নেয়ার একটি ভুয়া আদেশনামা তৈরি করা হয়। ঘটনাটি জানার পর অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিনের বক্তব্য জানতে চায় আদালত। তিনি জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আরজি জানালে আদালত আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়।

আমারসংবাদ/জেআই