Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

‘এসডিজি বাস্তবায়নই চ্যালেঞ্জ’

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১, ০৯:০৫ পিএম


‘এসডিজি বাস্তবায়নই চ্যালেঞ্জ’

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম বলেছেন, সরকার সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়িয়েছে। এতে অনেকে ভাতা পাচ্ছেন, যাদের দরকার নেই। কারণ তারা ধনী। তবুও তারা পেয়ে যাচ্ছেন। আর যাদের পাওয়ার কথা, তাদের অনেকেই বাদ পড়ছে। এই অংশটা প্রায় ৪৬ শতাংশ। তার মানে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বড় ধরনের অপচয় আছে। এটা একটা গবেষণার ফলাফল। পরিকল্পনার সঙ্গে বাজেটের সমন্বয় না হলে পরিকল্পনার ফল পাওয়া যাবে না।

গতকাল ‘করোনার প্রভাবে এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ : স্বাস্থ্য ও শিক্ষা’ অনলাইন সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অ্যাকশন ফর সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) ও ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) আয়োজনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যাকশন ফর সোস্যাল ডেভেলপমেন্টের (এএসডি) নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক, রোগতত্ত্ববিদ ও মানিকগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইসরাত শর্মী। যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডেভেলপমেন্ট জার্নালিজম ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) ও ফাইনানসিয়াল এক্সপ্রেসের বিশেষ প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর।

ড. শামসুল আলম বলেন, আমরা চাইবো, ২০২৫ সালের মধ্যে সব দারিদ্র্য সামাজিক সুরক্ষার কোনো না কোনো কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হোক। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ানোর বিষয়ে শামসুল আলম বলেন, ‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আমরা শিক্ষা ব্যয় বাড়ানোর কথা বলেছি। শিক্ষা ব্যয় ৪ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলেছি। যেটি বর্তমানে ২ দশমিক ৬ শতাংশে আছে। আসলে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, শিক্ষা ব্যয় ৬ শতাংশে যাওয়া উচিত। তবু এটা এখন যেহেতু ২ দশমিক ৬ আছে, এটাকে ৪ শতাংশে নিতে পারলেও বড় রকমের উল্লম্ফন হবে। আর স্বাস্থ্য খাতে আমরা এখন ব্যয় করছি ১ দশমিক ৬ শতাংশ। সেটি ২ শতাংশে নেয়ার কথা বলেছি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। সেটি করতে পারলেও বড় রকমের উল্লম্ফন হবে। পরিকল্পনায় যা বলা হচ্ছে, বাজেটে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি-না সেদিকে নজর রাখার পরামর্শ দিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, যেসব বরাদ্দ যাচ্ছে আর পরিকল্পনায় যা বলা হচ্ছে, সেগুলোর সঙ্গে সংযোগ কতটা হচ্ছে, তা খেয়াল রাখতে হবে। যেমন পরিকল্পনায় আমরা বলেছি, অনুন্নত অঞ্চলগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল রাখার জন্য বা সে এলাকায় স্কুল-কলেজ গড়ে তোলার জন্য। পরিকল্পনার সঙ্গে বাজেটের সমন্বয় না হলে পরিকল্পনা করে ফল পাওয়া যাবে না।

শ্রেণিগত অসাম্য না থাকলেও বাংলাদেশে অঞ্চল বৈষম্য আছে। শামসুল আলম বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবায়, দারিদ্র্যে, শিক্ষা ক্ষেত্রে অঞ্চল বৈষম্য আছে। সেজন্য দেখবেন নারাণগঞ্জে ৩ শতাংশ দারিদ্র্য, অথচ রংপুরে ৭১ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষা কমিশনে বলা হয়েছিল, সকলের জন্য সার্বজনীন শিক্ষা। আমাদের অনেক বিজয়, সাফল্য, কৃতিত্ব আছে; কিন্তু শিক্ষার ক্ষেত্রে সার্বজনীনতা আমরা এখনো অর্জন করতে পারি নাই। জনগণকে শিক্ষার আওতায় আনতে হবে। প্রাথমিকেই প্রায় ১৮-১৯ ভাগ শিশু ঝরে পড়ছে। এটা তো মানবসম্পদের বড় অপচয়।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির উচ্চতর পর্যায়ে গেছে। করোনায় কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, জলবায়ু সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ভালো করছে। তবে শামসুল আলম বলেন, ‘এসডিজি বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ তো আছেই। বিশেষ করে এই করোনার কারণে দারিদ্র্যতা বাড়ার একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছিল। যদিও আমরা খুব সুন্দরভাবে তা হ্যান্ডেল করেছি। এসডিজি বাস্তবায়ন কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে। তবু আমরা আশা করছি, তৃতীয় বর্ষ থেকে পুরনো প্রবৃদ্ধির পথে ফিরে যাবো এবং এসডিজি বাস্তবায়ন সামলিয়ে উঠতে পারবো। সেভাবেই পরিকল্পনা সাজিয়েছি।

জামিল এইচ চৌধুরী বলেন, করোনায় একটা বড় ক্ষতি হলো, অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। অনেকে কাজে চলে গেছে, অনেকের বাল্য বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়? আবার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অনেক জায়গায় বড় বড় প্রণোদনা দিয়েছেন। বেসরকারিভাবে যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালাতেন, বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলোর জন্য প্রণোদনার কথা শুনি নাই। তাদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়? কারণ তারা তো সমাজকেই সেবা দিচ্ছিলেন। মানুষ উপকৃত হচ্ছিল। কতগুলো বন্ধ হয়েছে তা নিয়ে জরিপ করা প্রয়োজন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এগুলো করা দরকার বাজেটের আগেই।

করোনায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের ক্ষতি পুষিয়ে কীভাবে এসডিজি বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়, সে বিষয়ে করণীয় তুলে ধরে সংলাপে অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। এ জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বরাদ্দ দারিদ্র্য, প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে। সরকারি সেবার মান উন্নত করতে হবে। স্বাস্থ্য সেবার পেছনে পরিবারের অর্থব্যয় কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবায় আমুল সংস্কার জরুরি। অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি দূর করতে হবে যাতে মানুষ হয়রানিমুক্তভাবে ও কম খরচে বেসরকারি সেবা পেতে পারে।

শিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষায় বাজেট জিডিপির ২ শতাংশের চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ জন্য বরাদ্দের উল্লম্ফন প্রয়োজন। অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনাকালে বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের ফিরিয়ে আনতে বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে।

আমারসংবাদ/জেআই