Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

প্রকল্পের গতি বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

মার্চ ২, ২০২১, ০৭:৩৫ পিএম


প্রকল্পের গতি বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এ জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে তাগাদা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রকল্পের নির্ধারিত যে সময়, সে সময়ের মধ্যেই প্রকল্প অবশ্যই শেষ করতে হবে। যেহেতু মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তাই প্রকল্পের গতি বাড়াতেই হবে। প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি) প্রকল্প এলাকায় থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। একইসঙ্গে একই ব্যক্তিকে যেনো একাধিক প্রকল্পের পিডি হিসেবে দায়িত্ব না দেয়া হয়, সে নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।

গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এসব নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ও এনইসির চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা গণভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষ ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কোভিডের কারণে স্বাস্থ্য খাত ও দারিদ্র্যবিমোচনকে গুরুত্ব দিয়ে এডিপি সংশোধন করে দুই লাখ ৯ হাজার ২৯২ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী।

সচিব জয়নুল বারী বলেন, দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার এখন গত কয়েক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। প্রায় সব কার্যক্রমই স্বাভাবিকভাবে চলছে। এ পরিস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদন যেনো কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়, প্রধানমন্ত্রী সেদিকে নজর রাখতে নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যেনো সংকট তৈরি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা বেশি থাকার সময় গোটা বিশ্বের অর্থনীতিই সংকটের মধ্যে পড়েছিল। আমরা সে তুলনায় ভালো করেছি। এই অবস্থান ধরে রাখতে হবে। জয়নুল বারী বলেন, কোভিডের কারণে স্বাস্থ্য খাত ও দারিদ্র্যবিমোচনকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, আইসিটি শিক্ষার উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাসকরণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, অতিবৃষ্টি ইত্যাদির ক্ষয়ক্ষতি পুনর্বাসন সংক্রান্ত প্রকল্পে অগ্রাধিকার বেশি দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কাজের গতি বাড়াতে প্রকল্প পরিচালকদের প্রকল্প এলাকায় থাকতে হবে। সেই সঙ্গে একজন পরিচালককে একাধিক প্রকল্পে নিয়োগ করা যাবে না। একটি প্রকল্পে একজন প্রকল্প পরিচালক থাকবেন। তাকে অন্য কোনো প্রকল্পে দায়িত্ব দেয়া যাবে না।

সংশোধিত এডিপিতে কমলো সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা : সভায় জানানো হয়, চলতি অর্থবছরে সবমিলে দুই লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও সাত মাসে ব্যয় হয়েছে ৬১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা বা ২৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছিল ৩২ দশমিক ০৭ শতাংশ, তার আগের অর্থবছরে ৩৪ দশমিক ৪৩, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৩ দশমিক ৩৫ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩২ দশমিক ৪১ শতাংশ। সার্বিক দিক বিবেচনা করে এনইসি সভায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তার অংশ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি এই অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিলো দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৪ কোটি ৭৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ ছিলো এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে বরাদ্দ ছিলো ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ হাজার টাকা। এছাড়া, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে ১১ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে সরকারি বরাদ্দের অংশে কোনো পরিবর্তন হয়নি। শুধু বৈদেশিক অংশের সাত হাজার ৫০১ কোটি ৭৯ হাজার টাকা কমিয়ে সবমিলে ২০২০-২১ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার হচ্ছে দুই লাখ ৯ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপিতে নতুন ১৭২টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করে নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৭৮৫টি প্রকল্প।  আগের মতোই সংশোধিত এডিপিতেও পরিবহনে সর্বোচ্চ প্রায় ৪৯ হাজার ২১৩ কোটি টাকা বা ২৪.৯০ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরপর ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণে প্রায় ২৬ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা  বা ১৩.৪০ শতাংশ। শিক্ষা ও ধর্মবিষয়ে প্রায় ২৪ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা বা ১২.৪৩ শতাংশ। এরপর বিদ্যুতে প্রায় ২১ হাজার ৯৪৫ কোটি বা ১১.১০ শতাংশ, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৮ হাজার ২৯০ কোটি টাকা বা ৯.২৫ শতাংশ। এছাড়া স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণে প্রায় ১৪ হাজার ৯২২ কোটি  বা ৭.৫৫ শতাংশ। বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে প্রায় ১১ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বা ৫.৮৬, কৃষিতে প্রায় সাত হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা বা ৩.৯১, পানি সম্পদে প্রায় ছয় হাজার ৭০৯ কোটি টাকা বা ৩.৩৯ এবং শিল্প খাতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বা ১.৭৭ শতাংশ।

উল্লেখ্য, বিদায়ী অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির মোট ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ৬১ হাজার ৭৪০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। যা সংশোধিত এডিপির ৮০.৩৯ শতাংশ।

আমারসংবাদ/জেআই