Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ভেতরে-বাইরে আলোচনা

আসাদুজ্জামান আজম, আবদুর রহিম ও শরিফ রুবেল

মার্চ ৩, ২০২১, ০৭:২০ পিএম


ভেতরে-বাইরে আলোচনা
  • খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসায় স্থায়ী জামিন ও দেশের বাইরে নিতে পরিবারের আবেদন
  • ওনার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্তের জন্য প্রক্রিয়া করা হচ্ছে -আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
  • আইনগতভাবে সুযোগ নেই সরকার চাইলে সম্ভব -এ এম আমিন উদ্দিন, অ্যাটর্নি জেনারেল
  • মানবিক সহায়তা খালেদা জিয়া পেতে পারেন -আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক
  • খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা জরুরি হয়ে পড়েছে -নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান

খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে আবারো ভেতরে-বাইরে আলোচনা চলছে। পরিবারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে সরকারের কাছে আবেদন। চাওয়া হয়েছে স্থায়ী জামিন। উন্নত চিকিৎসার জন্য নিতে চান দেশের বাইরে। তবে প্রশ্ন উঠেছে খালেদা জিয়া জামিন পেলেও দেশের বাইরে যেতে পারবেন কি-না। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার যদি ইচ্ছে করে তাহলে কোনো বাধা থাকবে না। খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে পারবেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। গত বছর ২৫ মার্চ ৭৬ বছর বয়সি খালেদা জিয়াকে ২৫ মাস কারাভোগের পর সরকার শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত করে। এরপর দ্বিতীয় দফায় ফের ছয় মাস সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সে মেয়াদ আগামী ২৫ মার্চ শেষ হচ্ছে। তার আগেই এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে খালেদা জিয়ার পরিবার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিকভাবে বিএনপি মূল ফোকাসের বাইরে থেকে পরিবারের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সমঝোতা করছেন। বন্দি হওয়ার পর থেকেই হয়েছে পরিবার ও সরকারের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিকবার বৈঠক। বর্তমানে খালেদা জিয়া আরও বেশি অসুস্থ হয়ে গেছেন। যেকোনো মুহূর্তে অবনতির আশঙ্কা করছেন পরিবারসহ নেতাকর্মীরা। সরকারও খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিভিন্ন মহল।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন। বিষয়টি একদিন গোপন থাকার পর গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ বিষয়ে মুখ খোলেন। তিনি জানান, ‘খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। তারা আবার সময়টা (সাজা স্থগিত) এক্সটেনশন (বাড়ানো) করার জন্য, আরও কিছু শর্ত শিথিল করে এক্সটেনশন চেয়েছে। আমরা এখন সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উনি যা চেয়েছেন, এটা যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য প্রক্রিয়া করা হচ্ছে।’ আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হলেন মানবতার জননী। তিনি যখনই কাউকে দেখেন এরকম অবস্থায়, তখন তো তিনি সবসময় তার সহযোগিতা করে থাকেন। এক্ষেত্রেও তিনি (প্রধানমন্ত্রী) তাকে (খালেদা জিয়া) উন্নত চিকিৎসা যাতে তার বাসায় থেকে পায় এবং সে যেনো তার যে অন্যান্য অসুবিধাগুলো ছিলো, চিকিৎসা যেনো আরও সুন্দরভাবে পায়, সে জন্যই তিনি শর্তসাপেক্ষে বাসায় থাকার অনুমতির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’ গতকাল বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

আবেদনে তারা কী চেয়েছেন— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা তো তাদের পত্রে শর্ত শিথিল করে করোনাকালীন চিকিৎসা নিতে পারেননি, সেটা জানিয়েছেন এবং তার দণ্ডাদেশ মওকুফ করা যায় কি-না সে সম্পর্কেও তারা বলেছেন।’ এখন পরবর্তী প্রক্রিয়াটা কী, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তো বলছি এটা আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো, আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামত এলে আমাদের যথাযোগ্যদের সঙ্গে আলাপ করে তার ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ চিঠিটা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা সবেমাত্র তো গতকালকে এলো, পাঠানো হবে।’ তারা বিদেশে যাওয়ার আবেদন করেছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা সব সময় চিঠিতে লেখা থাকে। রেফারেন্সে থাকে বিদেশে যাওয়ার, সেরকম লেখা থাকে, কিন্তু উনি তো এখনো কারাগারেই রয়েছেন। তার বাড়িটা এখন কারাগার হিসেবেই তিনি এখানে আছেন।’ সাজা মওকুফের কোনো সুযোগ আইনগতভাবে আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য তারা চেয়েছে, আমরা পরীক্ষা করে দেখছি। আমি তো আগেই বলেছি আমাদের প্রধানমন্ত্রী সব সময় যতখানি সম্ভব সেটুকু ব্যবস্থা করছেন।’

এ বিষয়ে আইন কী বলে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আমার সংবাদকে বলেন, ‘আইনগতভাবে সুযোগ নেই, সরকার চাইলে সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘আইনগতভাবে খালেদা জিয়ার দেশের বাইরে গিয়ে অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট ও স্থায়ী জামিনের কোনো সুযোগ নেই। এখন সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর সবকিছু নির্ভর করে। কারণ আগে যেমনিভাবে নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল ঠিক সেভাবেই আবার এখন যে আবেদন করেছেন সেটা মঞ্জুর করতে পারেন। সুতরাং এটা সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিষয়, এখানে আমাদের মন্তব্য করার কিছু নেই।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমরা এতদিন বলে আসছি খালেদা জিয়া আসলে মুক্ত নন, তিনি বন্দি থেকে গৃহবন্দি। আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেছেন খালেদা জিয়া যেখানে আছেন সেটিই কারাগার। কারাগারে কখনোই কারো উন্নত চিকিৎসা হতে পারে না। আদালত বলেছে খালেদা জিয়াকে অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট দিতে। কিন্তু তিনি এখন যেখানে আছেন সেখানে তা সম্ভব নয়। রোগীরও একটা পছন্দ থাকে। খালেদা জিয়া আগে যেখানে ট্রিটমেন্ট নিয়েছেন এখন তা জরুরি হয়ে পড়েছে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিষয়টি আইনগত ব্যাপার। স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। সুতরাং যা করা প্রয়োজন সরকার সেটা নিশ্চয়ই করবে। মানবিক সহায়তা তিনি পেতে পারেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দলীয়ভাবে বা রাজনৈতিকভাবে এ বিষয়ে অনেক কথাই উঠে আসে। সে ব্যাপারে এখন বলবো না। যেহেতু মানবিক কারণে তারা এটা চাচ্ছেন। আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতির বাইরেও অনেক বিষয় গুরুত্ব দেন। নেত্রী মানবিক কারণে উনার (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত করেছেন। এটা মানবিকভাবে নিয়েছেন। এটা তার মহানুভবতা। এটাই নেত্রী এবং আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভঙ্গি। এখানে রাজনৈতিক কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।’ কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘তবে আমার মনে হয়, তারা এখন পর্যন্ত বিদেশ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনি। যেভাবে নানান সময়ে মানবিক বিষয় বলে, বাইরে নেয়ার কথা বলে, অনেক কথাই বলে, যা বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই। আগে তাদের বাস্তবতায় আসা উচিত।

আমারসংবাদ/জেআই