Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধির হার প্রসারে সফল বেজা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ৩, ২০২১, ০৭:২০ পিএম


আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধির হার প্রসারে সফল বেজা
  • ইতোমধ্যে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে বেজা, যা শিগগিরই ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে যাচ্ছে। বড় কোম্পানিগুলোও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে জমি বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করছে -পবন চৌধুরী, নির্বাহী চেয়ারম্যান, বেজা

অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধির হার প্রসারিত করা বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহতী এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

বিগত ২০১০ সালে প্রণীত বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইনের আওতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল মূলত পশ্চাৎপদ এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, পরিচালন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) স্থাপন করা হয়। এই সংস্থা অর্থনৈতিক অঞ্চলে অন্বয়ী ও পশ্চাৎসংযোগ শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকার চলতি বছর নাগাদ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত করার যে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, বেজার ভিশন পরিকল্পনায় শিল্প ও সেবাখাত উন্নয়নে তার সম্যক প্রতিফলনও রয়েছে। তদানুযায়ী দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণ, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য সেবা উৎপাদন ও রপ্তানির প্রত্যাশা নিয়ে অর্থনেতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বেজা কর্তৃক ইতোমধ্যে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ডেভেলপার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

চীন, জাপান ও ভারতের সাথে জিটুজি ভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণসহ অফ-সাইট অবকাঠামো উন্নয়নে প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছে। তিনটি ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের জন্য অফ-সাইট অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২০টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রি-কোয়ালিফিকেশন লাইসেন্স দেয়া হয়েছে, তন্মেধ্যে দশটি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে চূড়ান্ত লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন ও পরিচালন কৌশল নির্ধারণ একটি চলমান দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় সুবিধাজনক স্থান নির্ধারণ বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন, প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা, ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিশ্চিতকরণ ও বিনিয়োগ প্রচারণা কৌশল চিহ্নিতকরণ অপরিহার্য। বেজার গভর্নিং বোর্ড ইতোমধ্যে ৯৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান নির্ধারণ ও জমির পরিমাণ অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল ৬৪টি, বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল ২৯টি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের অর্থনৈতিক অঞ্চল দুটি, জিটুজি অর্থনৈতিক অঞ্চল চারটি এবং ট্যুরিজম পার্ক তিনটি।  

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে বড় বড় কোম্পানিগুলো জমি বরাদ্দের জন্য বেজায় আবেদন করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। সম্প্রতি বেজা কার্যালয়ে সংস্থাটির সঙ্গে বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে নিউ ইকোনমিক ফ্রন্টিয়ার হিসেবে গড়ার বিষয়ে বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আরো বেশি বেসরকারি খাতবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন ও যৌথ গবেষণার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। বেজার নির্বাহী চেয়ারনম্যান পবন চৌধুরী জানান, বেজা ইতোমধ্যে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে, যা শিগগিরই ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে যাচ্ছে। বড় বড় কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে মিরসরাই ইকোনমিক জোনে জমি বরাদ্দের জন্য বেজার কাছে আবেদন করছে। মিরসরাই ইকোনমিক জোনকে গেমচেঞ্জার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই জোনটিতে জমি বরাদ্দ দেয়া প্রায় শেষের দিকে রয়েছে। ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় নিয়ে এই জোনটিকে কোম্পানিগঞ্জ, সিতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, ইত্যাদি এলাকায় সমপ্রসারিত করা যেতে পারে। আড়াইহাজার ইকোনমিক জোনের সমপ্রসারণ ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক (১০৪৭ একর) এ জমি বরাদ্দ পুরোদমে শুরু হওয়ার বিষয়েও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরো জানান, দেশের ইকোনমিক জোনগুলো প্রয়োজনের ভিত্তিতে বিভিন্ন মডেল অনুসরণ করে থাকে। একটি ভালো মডেল হতে পার ডিভিডেন্ড অ্যান্ড প্রফিট শেয়ারিং মডেল, যা কি-না ভারতের জয়পুরে আইসিটি পার্কে অনুসরণ করা হচ্ছে। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান সামষ্টিক পর্যায়ে নীতিগত সংস্কারের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন এবং যেসব ইকোনমিক জোনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলোর কাজ সফলভাবে সুসম্পন্ন করার জন্য শক্তিশালী পরিচালনার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহজীকরণ, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, এসএমইদের সহায়তা, সামাজিক পর্যায়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর স্পিলওভার প্রভাব, ইত্যাদি বিষয়ে যথাযথ প্রস্তাবনা নিয়ে বিল্ডকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি। বিভিন্ন দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সফলতার বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি ইকোনমিক জোন একেকটি নতুন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রস্থল হিসেবে কাজ করতে পারে। তিনি জানান, বিল্ড বর্তমানে একটি ধারণা নিয়ে কাজ করছে, যার নাম ‘এসইজেড- দ্য নিউ ইকোনমিক ফ্রন্টিয়ার’। তিনি বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো শুধু অভ্যন্তরীণ পর্যায়েই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে না, এর বাইরেও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া এ অঞ্চলগুলো অন্যান্য অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টিতেও কাজ করে। প্রত্যেকটি ইকোনমিক জোনই সরকারের জন্য একটি ইকোনমিক ফ্রন্টিয়ার।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, সরকারি ও বেসরকারি ইকোনমিক জোনগুলো নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের সঙ্গে যে নীতিগত ঘাটতি রয়েছে সেগুলো কমিয়ে আনতে হবে। ইকোনমিক জোনগুলোতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আকর্ষণে নীতিগত সংস্কারের জন্যও সরকারকে সহায়তা প্রদানে এবং নিউ ইকোনমিক ফ্রন্টিয়ারের ধারণা জোরালো করতে শিগগির গবেষণাও শুরু করবে বিল্ড। 

আমারসংবাদ/জেআই