Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

দেশে করোনা টিকার সংকট নেই

মাহমুদুল হাসান

মার্চ ৩, ২০২১, ০৭:২০ পিএম


দেশে করোনা টিকার সংকট নেই
  • টিকা প্রয়োগে ৪০ বছরের বাধ্যবাধকতা কমিয়ে আনা  হতে পারে -জাহিদ মালেক, মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
  • চলতি মাসেই কোভ্যাক্সের করোনা ভাইরাসের টিকা দেশে আসবে -মো. আবদুল মান্নান, সচিব, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ

করোনা নির্মূল এখন বড় চ্যালেঞ্জ। লম্বা সময়ের সংক্রমণে বিশ্ব অর্থনীতি লণ্ডভণ্ড হয়েছে। ভাইরাসটি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও টিকা প্রয়োগের বিকল্প নেই। সম্প্রতি দেশে দেশে টিকার প্রয়োগ চলছে। বাংলাদেশে শুরু থেকেই ভাইরাসটি ভয়াবহভাবে ছড়ায়নি। এক বছরে সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষের নমুনায় করোনার উপস্থিতি মিলেছে। যাদের ৯২ শতাংশের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে সাড়ে আট হাজারের কিছু কম। তবুও নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার ৫৪তম দেশ হিসেবে গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু করেছে।

শুরুতে ভাইরাসটি মোকাবিলায় কিছুটা অব্যবস্থাপনা উঠে এলেও পরে সেটি বদলেছে। পরিবর্তন এসেছে স্বাস্থ্যসেবায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীতে। এরপর বিশ্বের দেশে দেশে টিকা প্রয়োগ শুরু হলে বাংলাদেশও পিছিয়ে থাকেনি। তিন কোটি ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা ক্রয়ের চুক্তি হয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে। সেখান থেকে ইতোমধ্যে দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। উপহার হিসেবে ভারত সরকার আরও ২০ লাখ ডোজ টিকা পাঠিয়েছে। সবমিলিয়ে ৯০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। করোনা মোকাবিলার স্বীকৃতি হিসেবে ব্লুমবার্গের জরিপে কোভিড ব্যবস্থাপনায় শীর্ষ দেশের ২০তম তালিকায় উঠে আসে।

গত এক মাসে ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ১৫৯ ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধকোটি মানুষ টিকার জন্য আবেদন করেছে। এছাড়াও কোভ্যাক্সের আওতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে বাংলাদেশ এক কোটি ৯ লাখ আট হাজার ডোজ টিকা পাচ্ছে। চলতি মাসেই কোভ্যাক্সের টিকা দেশে আসার কথা রয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী আরও তিন কোটি ডোজ অক্সফোর্ডের টিকা কেনার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই সাথে জনসন অ্যান্ড জনসনের প্রয়োগকৃত এক ডোজের টিকা সংগ্রহের বিষয়েও সরকার তৎপর রয়েছে। সুষ্ঠুভাবে টিকা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সচিবালয়ে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ডিপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট শীর্ষক বিশেষ সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। টিকা প্রদানে ভবিষ্যতে যাতে কোনো রকম সমন্বয়হীনতা দেখা না দেয় সেজন্য প্রতি ১৫ দিন পরপর সচিবালয়ে অন্তত একটি করে টিকা আপডেট সভা করা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৪০ লাখ ৮৯ হাজার ৩৩৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। গতবছর ৮ মার্চ প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার ৯৩০ জনের নমুনায় করোনার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ সুস্থ হয়ে উঠেছে। সংখ্যার হিসেবে চার লাখ ৯৯ হাজার ৬২৭ জন সুস্থ হয়েছে। আর মারা গেছে আট হাজার ৪২৮ জন। অধিদপ্তর সূত্র আরও জানায়, গতকাল এক লাখ ১৮ হাজার ৬৫৪ জন ব্যক্তি করোনার টিকা গ্রহণ করেছেন। তার মধ্যে ১১ জনের শরীরে মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। গত মাসের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ১৫৯ জন নরনারী করোনার টিকা গ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে মাত্র ৭৮৪ জনের শরীরে মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমাদের টিকার কোনো সংকট হবে না। সেরাম থেকে ক্রয়কৃত অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ শেষ হতে না হতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অক্সফোর্ডের আরও তিন কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ের নির্দেশনা দিয়েছেন। কোভ্যাক্স জানিয়েছে মার্চেই তারা আমাদের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাঠাবে। আমরাও আশা করছি এই সময়ের মধ্যেই পাবো। তবে এখনো তারা আমাদেরকে কোনো নির্ধারিত তারিখ জানায়নি। বাংলাদেশে কবে তারা টিকা দেবে এটা বড় কথা নয়, কথা হলো এশিয়ার অন্য কোনো দেশ যদি আগে পেয়ে যায়, তাহলে বলতে পারেন যে, কেন আমরা আগে পেলাম না।’

তিনি বলেন, ‘টিকার জন্য জনসন অ্যান্ড জনসনের সাথে কথা হয়েছে। তাদের টিকা আমাদের দেশে রাখার মতোই। যদি কোনো সুযোগ আসে, নিশ্চয়ই আমরা এটা নিয়ে আসবো। এতে করে এক ডোজ করে দেয়ায় আমাদের সময় বাঁচবে। আর যদি সেটা না হয়, তাহলে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে টিকা আছে, ওটাই চালিয়ে যাবো।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনার টিকা প্রদানে বিশ্বের বহু দেশ এখনো হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু দেশের স্বাস্থ্য খাত টিকা প্রদানে এখন পর্যন্ত যথেষ্ট সফলতা দেখিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে পারলে আগামীতেও দেশের সুনাম বিশ্বব্যাপী অক্ষুণ্ন থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘গত এক মাস টিকা প্রদানে বাংলাদেশের প্রশংসা কেবল দেশেই নয়, বিদেশ থেকেও হয়েছে। ইতোমধ্যেই দেশের এক হাজার সাতটি ভ্যাকসিন বুথে পর্যাপ্ত টিকা পাঠানো হয়েছে। আগামী জুলাই পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে কোভ্যাক্সের এক কোটি ৯ লাখ টিকাসহ মোট চার কোটি টিকা দেশের মানুষের শরীরে প্রদানের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে পর্যাপ্ত টিকা হাতে চলে এলে ভ্যাকসিন প্রদানে ৪০ বছরের বাধ্যবাধকতা কমিয়ে আনা হতে পারে।

আমারসংবাদ/জেআই