Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

জামানত ছাড়াই ব্যাংক ঋণ

জাহাঙ্গীর আলম

মার্চ ১০, ২০২১, ০৮:২০ পিএম


জামানত ছাড়াই ব্যাংক ঋণ
  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দুই হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন
  • ২৫ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চুক্তি
  • ছয়টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২৭৪ উদ্যোক্তার ঋণের গ্যারান্টি ইস্যু
  • পরিধি বাড়াতে ক্রেডিট গ্যারান্টি এজেন্সি গঠনে এডিবির উদ্যোগ

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাই ব্যাপকভাবে অবদান রাখছে। কিন্তু করোনায় অনেকেরই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতি সামলাতে সরকার কম সুদে প্রণোদনা ঘোষণা করলেও প্রয়োজনীয় দলিলপত্রের অভাবে অধিকাংশ উদ্যোক্তা ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছেন না। তাই অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে সরকার তাদের জন্য জামানতবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করেছে।

স্বল্প সুদে গঠন করা হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকার তহবিল। এর ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম ইউনিটও গঠন করা হয়েছে। ১৯টি  ব্যাংক ও ছয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংক চুক্তিও করেছে। তার মধ্যে এ পর্যন্ত অগ্রণীসহ তিনটি ব্যাংক ও আইডিএলসি ফাইন্যান্সসহ তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২৭৪ উদ্যোক্তার ঋণের বিপরীতে ২৯ কোটিরও বেশি টাকার গ্যারান্টি ইস্যু করা হয়েছে। এর পরিধি আরও বিস্তৃত করতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ক্রেডিট গ্যারান্টি এজেন্সি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে যাওয়ায় ছোট ছোট ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। তারা অর্থনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু গত বছরের মার্চে হঠাৎ করে করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করায় সরকার প্রকোপ ঠেকাতে ৬৬ দিন ছুটি ঘোষণা করে। ঘরবন্দি থাকায় এসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীরা একেবারে কর্মহীন হয়ে পড়ে। এমন অবস্থা সামলাতে সরকার বড় বড় ব্যবসায়ীদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্যও বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এ প্রণোদনার বড় বড় ঋণগুলো নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বিতরণ হয়ে যায়। কিন্তু ঋণের শর্ত হিসেবে জামানত বা মর্টগেজ বা জমির কাগজপত্র চাই। যা অধিকাংশ উদ্যোক্তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য ছোট্ট ঋণগুলো বিতরণ হয়নি। পরপর দুইবার ঋণ বিতরণের সময় বাড়ালেও ঋণের অর্ধেক টাকা বিতরণ হয়নি। ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, ঋণের চাহিদা থাকলেও গ্রাহকরা জামানতসহ অন্যান্য যে সব শর্ত আছে সেগুলো পরিপালন করতে পারে না। এ কারণে এ ধরনের ঋণ বিতরণ করা সম্ভব হয় না।

এ বাধা কাটাতে অর্থাৎ উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে জামানতবিহীন ঋণ প্রদানে কুটির শিল্প, ছোট্ট ও ক্ষুদ্রশিল্প খাতের উদ্যোক্তার ঋণের গ্যারান্টি দেয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের আওতায় ‘ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম ইউনিট’ গঠন করে কার্যক্রম শুরু করেছে। ২০২০ সালের ২৩ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৪০৬তম সভায় এর নীতিমালা ও দুই হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যাতে ছোট ছোট উদ্যোক্তা গড়ে ওঠে। একই সাথে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।

সূত্র আরও জানায়, কুটির, ছোট্ট ও ক্ষুদ্রঋণ খাতের উদোক্তাদের জন্য এ ধরনের ঋণের বিপরীতে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত গ্যারান্টি দেবে সরকার। বাণিজ্যিক ব্যাংক এসব কুটির, ছোট্ট ও ক্ষুদ্র গ্রাহকের আবেদন পাওয়ার পর গ্রাহকদের ব্যবসা পরিকল্পনা ও বাস্তবতা যাচাই করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠাবে। এসব উদ্যোক্তার নাম বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকায় সন্নিবেশিত করে ঋণ বিতরণের অনুমতি দেবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের নিজের তহবিল থেকে ঋণ বিতরণ করবে। ওই ঋণের টাকা কোনো কারণে ঋণী ফেরত না দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই টাকার ৮০ ভাগ ফেরত দেবে ব্যাংককে। ৯ শতাংশ সুদে এ ঋণ বিতরণের জন্য ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর প্রথমবারের মতো গভর্নর ফজলে কবিরের উপস্থিতিতে পাঁচটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশগ্রহণ চুক্তি হয়েছে। এই সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে ১৯টি ব্যাংক ও ছয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে চুক্তিতে সই করেছে। 

চুক্তিবদ্ধ ব্যাংকগুলো হলো— অগ্রণী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ইউসিবিএল ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও ডাচ বাংলা লিমিটেড। এছাড়া বিডি ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসিএল, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, মেরিয়ান ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ও সিভিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড। পর্যায়ক্রমে চুক্তির আওতায় আরও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যুক্ত হবে। চুক্তিবদ্ধ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার গ্যারান্টির আবেদন করা হয়েছে। ব্যাংকের মধ্যে গ্যারান্টি পেতে সবচেয়ে বেশি ১১৮ কোটি টাকার আবেদন করেছে ইসলামী ব্যাংক। এরপরই ব্র্যাক ব্যাংক ৯৭ কোটি টাকার এবং পূবালী ব্যাংক ৫৫ কোটি টাকা গ্যারান্টির আবেদন করেছে। এসব ব্যাংকের ঋণের আবেদন যাচাই করে এর নিবন্ধন ইস্যু করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংকের পাঁচটি, ইস্টার্ন ব্যাংকের ছয় ও এনআরবি ব্যাংকের ১৯টি উদ্যোক্তা এবং আইএলসি ফাইন্যান্সের ২৩৮টি, আইআইডিএফসিএলের চারটি ও সিভিসি ফাইন্যান্সের দুটি মোট ২৭৪টি ঋণের বিপরীতে ২৯ কোটি ৪১ লাখ টাকার গ্যারান্টি ইস্যু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সূূত্র আরও জানায়, এসএমই শিল্পের বিকাশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু রয়েছে। দেরিতে হলেও আমাদের দেশে চালু হলো। এর সুফল পাবে সাধারণ জনগণ। সরকারও লাভবান হবে। কারণ গ্রামীণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাই চাঙ্গা করছে অর্থনীতি। তা আমলে নিয়ে এডিবিও গুরুত্ব দিয়েছে। এ জন্য গত মঙ্গলবার অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এডিবির ভার্চুয়াল ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন ফর মিটিগেটিং মিডিয়াম অ্যান্ড লং টার্ম ইকোনমিক অ্যান্ড সোসিয়াল ইমপ্যাক্ট অব কোভিড-১৯ প্রোগ্রামের ওপর ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ বাংলাদেশের আর্থিক খাতের বিভিন্ন শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ক্রেডিট গ্যারান্টি ইউনিটকে এমআরআই বা পিকেএসএফের আদলে ক্রেডিট গ্যারান্টি এজেন্সি করার উদ্যোগ নিয়েছে এডিবি। এজন্য স্টাডি করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এডিবির উদ্যোগেই এটা করা হবে। যাতে বৃহৎ পরিসরে কার্যক্রম শুরু করে সারা দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বিশেষ করে গরিব ও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ এর সুফল পায়।

আমারসংবাদ/জেআই