Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে দুশ্চিন্তা

মার্চ ১৩, ২০২১, ০৭:৩০ পিএম


স্কুল-কলেজ খোলা নিয়ে দুশ্চিন্তা
  •  সংক্রমণ বাড়লে শুধু স্কুল-কলেজে নয় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সবখানেই -স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা

করোনার কারণে দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ আছে স্কুল-কলেজ। চলতি বছরের শুরুতেই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার কথা মাথায় রেখে প্রি-প্ল্যান গ্রহণ করা হয়। এতে করে সারা দেশের স্কুল ও কলেজগুলোকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়। দেশে করোনা সংক্রমণ অনেকটা কমে আসায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি একটি ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, আগামী ৩০ মার্চ থেকে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। সেই সঙ্গে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ঈদের পর ২৪ মে থেকে শুরু হবে বলেও জানানো হয়। কিন্তু এই ঘোষণা দেয়ার দুদিন পরই ফের বাড়তে শুরু করে করোনা সংক্রমণ।

যেদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেয়া হয়, সেদিন করোনা শনাক্তের হার ছিলো ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। পরের দিন ২৮ ফেব্রুয়ারি শনাক্তের হার আরও কমে ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ হয়। এর আগে ফেব্রুয়ারিজুড়ে প্রতিদিন গড়ে ২ দশমিক ৮২ শতাংশ হারে রোগী শনাক্ত হয়। বর্তমানে করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় হঠাৎ-ই থমকে গেছে শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। নির্দিষ্ট সময়ে স্কুল-কলেজ খোলা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। চলতি মাসের প্রথমদিকে রোগী শনাক্ত বেড়ে ৪ শতাংশের ওপরে উঠে যায় এবং শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে যায়। গত তিনদিন শনাক্তের হার ৬ শতাংশের ওপরে উঠে গেছে। এছাড়াও রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে হাজারের ওপর। গত ১২ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, স্কুল-কলেজ খোলার পর সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি যেনো না থাকে সেজন্য আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকতে হবে। সংক্রমণ বাড়বে না সরকার যদি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয় তাহলে স্কুল-কলেজ খোলা যেতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া যেতে পারে তবে স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মানতে হবে। একটা ক্লাসরুমে যেনো অনেক ছাত্রছাত্রী না থাকে, ভেন্টিলেটর থাকে, বাতাস আসা-যাওয়া করতে পারে, অর্থাৎ সংক্রমণ প্রতিরোধে সব স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। স্কুল-কলেজ রাখতে হবে নিরাপদ। সংক্রমণ যেনো সেখানে না ছড়ায়। সংক্রমণ বাড়লে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা শুধু স্কুল-কলেজে নয়, সবখানেই আছে। সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, টিকা যত বেশি দেয়া যায়, ততই ভালো। টিকা নেয়ার পর সংক্রমিত হলেও মারাত্মক রোগ হবে না। জীবনের নিরাপত্তা বাড়বে। তবে টিকা নেয়ার আগে বা পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেছেন, টিকা দেয়ার পর অনেকেই বেপরোয়া চলাচল করছেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানার তেমন তোয়াক্কা করছেন না সাধারণ মানুষ। এতেও করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, সারা দেশে আমাদের ক্লাস খুলে দেয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে নির্দিষ্ট সময়ে স্কুল খুলে দেয়া হবে। প্রাথমিকের শিক্ষকদের টিকা নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী ২০ মার্চের মধ্যে প্রাথমিকের সব শিক্ষককে টিকা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশের সকল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সুপারিনটেনডেন্টকে করোনার টিকা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে এ নির্দেশ দেয়া হয়। অগ্রাধিকারভিত্তিতে দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে কোভিড-১৯ টিকার আওতায় আনার নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষকই টিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেছেন বলে জানান তিনি। আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, অনেকেই টিকা নিয়েছেন। কিন্তু এখনো বিভিন্ন কারণে অনেক শিক্ষক নিবন্ধন করতে পারেননি বলে জানা গেছে। যারা এখনো নিবন্ধনের আওতায় আসেননি, তারা দ্রুত নিবন্ধন সম্পন্ন ও টিকা নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন মহাপরিচালক।

আমারসংবাদ/জেআই