Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

স্বাস্থ্যবিধিতে জোর দিচ্ছে সরকার

মাহমুদুল হাসান

মার্চ ১৭, ২০২১, ০৮:৫৫ পিএম


স্বাস্থ্যবিধিতে জোর দিচ্ছে সরকার
  • স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে —জাহিদ মালেক, মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
  • করোনা প্রতিরোধে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে —অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
  • করোনা থেকে পরিত্রাণ পেতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই —ডা. মো. মুশতাক হোসেন, সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আইইডিসিআর

করোনা সংক্রমণ ফের সক্রিয়। বলা হচ্ছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পথে দেশ। শনাক্ত ও মৃত্যু প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২ শতাংশের কিছু বেশি রোগী শনাক্তের হার সম্প্রতি সাড়ে ৯ শতাংশে ঠেকেছে। এখনই লাগাম টানতে না পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। ব্রিটেন ও আফ্রিকায় শনাক্ত করোনার নতুন একটি ধারার সাদৃশ্যতা মিলেছে। যা কয়েকগুণ বেশি দ্রুত ছড়ায়। অন্যদিকে আশঙ্কার দিক হচ্ছে, বর্তমানে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশেরই নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রয়োজন পড়ছে। গতকাল তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু কিছুটা কমেছে। গতকাল এক হাজার ৮৬৫ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে আরও ১১ জনের। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, অবহেলা আর স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় সংক্রমণ দীর্ঘদিন ধরেই বেড়ে চলছিল। কিন্তু শুরুতে সংক্রমিত তরুণ ও যুবকদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকায় সেটি তারা বেশি অনুভব করতে পারেনি। তাদের মাধ্যমে পরিবারের বয়স্ক ও অন্যান্য দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তরা সংক্রমিত হয়েছেন। এরপর মূলত সংক্রমণ হার বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে। ফলে প্রতিনিয়ত রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় বেশি জোর দিচ্ছেন। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে হলেও মাস্কসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় বাধ্য করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। সেই সাথে টিকাদান কার্যক্রমে আরও উদ্বুদ্ধ করছেন। সরকার ও জনস্বাস্থ্যবিদদের ভাষ্য প্রায় একই রকম। স্বাস্থ্যমন্ত্রী থেকে অধিদপ্তরের কর্তা সবাই স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্ক পরায় জোর দিচ্ছেন। জনসমাগম, সভা-সমাবেশ ও পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় এড়িয়ে চলতেও অনুরোধ করছেন। সেই সাথে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর থেকে কঠোর হওয়ারও বার্তা দিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি ২১৯টি ল্যাবে ২৪ হাজার ২৭৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৪৩ লাখ ২৮ হাজার ২৬৯টি নমুনা। তার মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩৩ লাখ চার হাজার ৮৫৭টি আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আরও ১০ লাখ ২৩ হাজার ৪১২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে গতকাল আরও এক হাজার ৮৬৫ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে পাঁচ লাখ ৬২ হাজার ৭৫২ জনে পৌঁছেছে। তার মধ্যে গতকাল সুস্থ হওয়া রোগীসহ এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়ে পাঁচ লাখ ১৫ হাজার ৯৮৯ জন। এছাড়া মৃত্যুও নেহায়েত কম নয়। গতকাল ১১ জনের মৃত্যুতে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে আট হাজার ৬০৮ জনে পৌঁছেছে। গতকাল শনাক্তের হার ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মো. মুশতাক হোসেন বলেন, করোনা সংক্রমণ কিন্তু আজ থেকে নয় বেশ কিছুদিন ধরেই বাড়ছে। কিন্তু এর আগে বিষয়টি কেউ গুরুত্ব দেয়নি। টেস্টও করায়নি। গত নভেম্বরে যখন করোনা সংক্রমণ স্থিতিশীলতা থেকে বাড়তে শুরু করে সেটি প্রথমে তরুণ-যুবক থেকে পরিবারের ঝুঁকিপূর্ণ বয়সের মানুষে সংক্রমিত হয়েছে। তরুণরা যখন বাইরে থেকে সংক্রমিত হয়ে ভাইরাসটি বাড়িতে নিয়ে গিয়েছে তখন কিন্তু তারা শনাক্তকরণ টেস্ট করায়নি। যখনই বয়স্করা সংক্রমিত হয়েছে, তখন নমুনা পরীক্ষার পর এখন শনাক্ত-মৃতের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে আবার করোনার টিকা নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি ভুলে গেছে। এজন্য করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। পরিত্রাণ পেতে হলে আগেও বলেছি মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে। এজন্য সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সহায়তা চালু করতে হবে। শনাক্ত পরিবারটির পাশে সমাজকে দাঁড়াতে হবে। অভয় দিতে হবে যাতে তিনি চাকরি হারানোর ভয়ে সংক্রমিত হয়েও তথ্য না লুকায়। সেই সাথে টিকাদানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া করোনা সংক্রমণ এখন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের সবসময় নির্দেশনা স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে। মাস্ক পরা, নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। এগুলোকে জোরদার করার কথা বারবার বলা হচ্ছে। আর মাস্ক পরার বিষয়ে তো প্রজ্ঞাপন জারি করা আছেই। জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে এটাই আমাদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা। এর বাইরে কোনো দফা আমি জানি না। এখন যদি মাঝরাতে কেউ কোনো দফা প্রকাশ করে সেটা আমি বলতে পারছি না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ইদানিং করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। এ নিয়ে সমালোচকরা সমালোচনা করছে, কেন বাড়ছে এটা নিয়ে কেউ আলোচনা করছে না। গত এক মাসে প্রায় ২০ লাখ লোক ঢাকা থেকে কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামে গিয়েছে। প্রত্যেক উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামপর্যায়ে বিয়েশাদি হচ্ছে। কেউ মাস্ক পরে না। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আমরা ইতোমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা জেলা প্রশাসন ও করোনা সম্পর্কিত কমিটিকে বলেছি তারা যেনো বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো সীমিত করেন। অতিথি নিয়ন্ত্রণ করেন। এয়ারপোর্টে যাত্রীদের স্ক্রিনিং কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। একইসঙ্গে কোয়ারেন্টাইন জোরদার করতে বলা হয়েছে। যদিও হোটেলগুলোতে কোয়ারেন্টাইনের নীতিমালা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাচ্ছি। মোবাইল কোর্টকে বলা হয়েছে যারা স্বাস্থ্যবিধি মানবে না, মাস্ক পরবে না তাদের যেনো জরিমানা করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের এখন প্রস্তুতি আছে। কারণ করোনা নিয়ন্ত্রণে কী লাগবে তা প্রথমে জানা ছিলো না কিন্তু এখন সবই জানা আছে। এখন হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ও  হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাসহ সবই আছে। ঢাকাসহ সারা দেশে সব ব্যবস্থা নেয়া আছে। তবুও রোগী উৎপত্তির স্থান থেকে তা বন্ধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং সবাইকে করোনামুক্ত থাকায় সচেষ্ট থাকতে হবে। নয়তো সংক্রমণ বেড়ে এমন পরিস্থিতি হতে পারে হাসপাতালে রোগীদের জায়গা হবে না।

আমারসংবাদ/জেআই