Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

সম্মানের সফরে পাওয়ার স্বপ্ন

মার্চ ১৯, ২০২১, ০৭:৩৫ পিএম


সম্মানের সফরে পাওয়ার স্বপ্ন
  • প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ভরসায় থাকবে বিশ্বনেতাদের চমক
  • সবগুলো দেশের কাছে পাওনা রয়েছে, এই সফরে তার হিসাব-নিকাশ
  • বন্দর ব্যবহার সর্বাধিক অগ্রাধিকার পাবে এই সম্মানের সফরে
  • সরাসরি ফ্লাইট নেই এমন দেশের সঙ্গে ফ্লাইট চালু হওয়ার সম্ভাবনা
  • বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধায় ভারতের থাকতে পারে উপহার, সেদিকে এখন দেশবাসীর চোখ
  • মালদ্বীপ আশা দেখানোর পর এখন অন্য দেশগুলোও আশা দেখাচ্ছে

সম্মানের বৈঠকেও দেয়া-নেয়ার হিসাব চলছে। মালদ্বীপ আশা দেখানোর পর এখন অন্য দেশগুলোও আশা দেখাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ভরসায় থাকবে বিশ্বনেতাদের চমক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে যোগ দিতে ঢাকা আসছেন বিশ্বনেতারা। এ নিয়ে হিসাব কষছেন দেশের কূটনৈতিক মহল।

তারা বলছেন, যে সব দেশের শীর্ষ ব্যক্তিরা আমাদের দেশে আসছেন তাদের সবগুলো দেশের কাছে আমাদের পাওনা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি পাওনা হচ্ছে ভারতের কাছে। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভুটান  ওরা ছোট দেশ। ওদের কাছেও রয়েছে কিছু চাওয়া, তবে ওদেরকে দেয়ার ইতিহাস আমাদের অতীতে রয়েছে। যাদের সঙ্গে আমাদের এখনো সরাসরি ফ্লাইট নেই তাদের সঙ্গে ফ্লাইট চালু হওয়ার জোর দাবি ও চুক্তি হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। নেপাল যেতে চাইলে বাংলাদেশ ট্রানজিট পায় না, তার ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া ভারত থেকে বাংলাদেশের রয়েছে বড় পাওনা— পানি, ট্রানজিট, হঠাৎ করে ইম্পোর্ট বন্ধ, অশুল্ক বাধা ইত্যাদিও রয়েছে। এগুলো সমাধানে আলোচনার সঙ্গে দাবি ও কার্যত ব্যবস্থাও প্রয়োজন। বাংলাদেশ ত্রিপুরার সঙ্গে সম্পর্কের সব ধরনের সুবিধা দিয়েছে। এগুলোর বিষয়ে কথা বলার সুযোগ রয়েছে। বন্দর ব্যবহারের সর্বাধিক অগ্রাধিকার পাবে এই সম্মানের সফরে। এর সঙ্গে জোর দাবি উঠছে ভারত নিয়ে।  অতীতে ভারত বাংলাদেশ থেকে অনেক কিছুই পেয়েছে। এ দেশ পায়নি কিছুই। এবার বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে হয়তো ভারত কিছু উপহার দেবে।  পানি, ট্রানজিট ইত্যাদির বিষয়ে ভালো কিছু আশার দিক থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মালদ্বীপের বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে বিষয়টি জানিয়েছেন— মালদ্বীপের সঙ্গে  বাংলাদেশের সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে তা বড় আশার দিক। তবে তা বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত এটি বড় কিছু বলা যাবে না। মালদ্বীপের অর্থনীতি খুব বড় নয়, কিন্তু এখানে ভূ-রাজনৈতিক সুবিধা এবং কূটনৈতিক গুরুত্বটা বেশি। এ সফরগুলোতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ,  প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণ, মানবসম্পদ ও যুব সমপ্রদায়ের উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ঔষধসামগ্রী, কৃষি, সামুদ্রিক সম্পদ ও মৎস্য, পর্যটন, সাংস্কৃতিক,  জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, দুদেশের মধ্যে বিমান ও নৌ যোগাযোগ বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সমস্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা— অনেক বেশি অগ্রাধিকার পাবে।

ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পিটিএ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। গতকাল ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। তিনি আজ সকাল ১০টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে দুই সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে দুদেশের মধ্যে কয়েকটি স্মারক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। এ ছাড়া নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারি ১০ দিনের উদযাপনে যোগ দিতে ২২ মার্চ দুদিনের সফরে ঢাকা আসবেন এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং ২৪ ও ২৫ মার্চ ঢাকা সফর করবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৬ মার্চ ঢাকায় পৌঁছে ২৭ মার্চ ঢাকা ত্যাগ করবেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ উভয় দেশের মধ্যকার ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তিতে (পিটিএ) স্বাক্ষর করতে সম্মত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পিটিএ চুক্তিতে স্বাক্ষরের বিষয়ে দুই নেতা ঐকমত্যে পৌঁছেন। মালদ্বীপে অবস্থানরত অবৈধ বাংলাদেশিদের বৈধ করতে অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। এ ছাড়া দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকে মৎস্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছে। রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহর উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে এই সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। এ ছাড়া ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে ডবল ট্যাক্স পরিহারে কাস্টমস সহযোগিতা চুক্তি করতে একমত হয়েছে। মালদ্বীপ-বাংলাদেশ নৌপথ চালুর জন্য একমত হয়েছে। মালদ্বীপে ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সকে প্রশিক্ষণ সহযোগিতা দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। এছাড়া মালদ্বীপের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি সইয়ের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে মালদ্বীপ।

সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘আসলে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতারা যে বাংলাদেশে আসছেন তা মূলত স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে। সম্মান ও শুভেচ্ছা জানানোর জন্যই। এখানে দেয়া বিষয়টা হয়তো দু’দেশের মধ্যে তেমন বড় আকারে গুরুত্ব পাবে না। সমঝোতা কিংবা চুক্তি বড় কোনো দিক এই সফরগুলোতে হবে না। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মালদ্বীপের বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে বিষয়টি জানিয়েছেন— মালদ্বীপের সঙ্গে  আমাদের সরাসরি ফ্লাইট চালু হবে তা আশার দিক। তবে তা বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত এটি বড় কিছু বলা যাবে না। দু’দেশের স্বার্থ, নাগরিকদের অধিকারের বিষয়ে নিয়ম রক্ষার বৈঠকগুলোতে একটু গুরুত্ব পাবে তা বলা যায়।’

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘যে সব দেশের শীর্ষ ব্যক্তিরা আমাদের দেশে আসছেন তাদের সবগুলো দেশের কাছে আমাদের পাওনা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি পাওনা হচ্ছে ভারতের কাছে। শীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভুটান ওরা ছোট দেশ; ওদের কাছে আমরা আর কি-ই বা পাবো। তবে যাদের সঙ্গে আমাদের এখনো সরাসরি ফ্লাইট নেই তাদের সঙ্গে ফ্লাইট হওয়ার জোর দাবি ও চুক্তি হওয়া প্রয়োজন। নেপাল যেতে চাইলে আমরা ট্রানজিট পাই না, তার ব্যবস্থা হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া ভারতের কাছে আমাদের রয়েছে বড় পাওনা— পানি, ট্রানজিট, হঠাৎ করে ইম্পোর্ট বন্ধ, অশুল্ক বাধা ইত্যাদিও রয়েছে। অথচ আমরা ত্রিপুরার সঙ্গে সম্পর্কের সব ধরনের সুবিধা দিয়েছি। আমাদের দেয়ার সংস্কৃতি যেমন রয়েছে, পাওনার সংস্কৃতিও চালু করতে হবে। এতে করে দু’দেশেরই ভাবমূর্তি বাড়বে।’

মালদ্বীপের সঙ্গে চুক্তি হওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে মালদ্বীপের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক একটা সহযোগিতা বা কানেকটিভিটির ক্ষেত্রে ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশকে নিয়ে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সেখানে মালদ্বীপের সহায়তা একটা নতুন মাত্রা দেবে। সব মিলিয়ে এটি আমাদের কূটনীতির জন্য এবং মালদ্বীপের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কল্যাণে আসবে। মালদ্বীপের অর্থনীতি খুব বড় নয়, কিন্তু এখানে ভূ-রাজনৈতিক সুবিধা এবং কূটনৈতিক গুরুত্বটা বেশি।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর ইসফাক ইলাহি চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ‘যে সব দেশের শীর্ষ ব্যক্তিরা বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে সফর করছেন, এতে ব্যবসা বাণিজ্যের দিকগুলো রাষ্ট্রীয় বৈঠকগুলোতে গুরুত্ব পাবে। সম্পর্কের উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা মৌলিকভাবে থাকবে বলে মনে করছি। বন্দর ব্যবহারের গুরুত্ব সর্বাধিক অগ্রাধিকার পাবে। মালদ্বীপ ছোট রাষ্ট্র, তবুও গুরুত্ব রয়েছে। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমাদের সরাসরি যাতায়াতের সুযোগের বড় সম্ভাবনার দিক রয়েছে এই সফরে। তবে বিশেষ করে ভারতের দিকে চোখ থাকবে সবার। অতীতে ভারত বাংলাদেশ থেকে অনেক কিছুই পেয়েছে। বাংলাদেশ পায়নি কিছুই। এবার বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে হয়তো ভারত কিছু উপহার দেবে— পানি, ট্রানজিট ইত্যাদির বিষয়ে ভালো কিছু আশার দিক থাকতে পারে।’ 

আমারসংবাদ/জেআই