Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪,

বিরোধী শিবিরে দুর্বল কূটনীতি

আবদুর রহিম ও রফিকুল ইসলাম

মার্চ ২২, ২০২১, ০৮:২০ পিএম


বিরোধী শিবিরে দুর্বল কূটনীতি
  • রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কূটনৈতিকভাবে সফল
  • কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা বাংলাদেশে আসছে জানে না জাতীয় পার্টি
  • দূতাবাসের নীরবতাকে বিস্ময়কর দেখছে অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি
  • কূটনৈতিক মিশনগুলো শুধু সরকারের সাফল্যকেই গুরুত্ব দিয়েছে
  • বৈঠকের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে দেশের শীর্ষ দুটো রাজনৈতিক দল

বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সফরকে গুরুত্ব দেয়নি সরকারবিরোধীরা। যোগাযোগ হয়নি কূটনৈতিক মিশনে। চেষ্টা করা হয়নি সাক্ষাত পাওয়ার। করা হয়নি আবেদন। তবে তাকিয়ে ছিলো দূতাবাসের দিকে! বিদেশি কূটনীতিকরা নিজ উদ্যোগে যোগাযোগ করবেন। সরকারবিরোধীদের সাথে অতীতের মতো রাজনৈতিক সৌজন্যতা রক্ষা করবেন। বৈঠকে মিলিত হবেন। কিন্তু দিন শেষে একটি দেশেরও সাক্ষাত পাওয়ার ভাগ্য জুটছে না বিরোধী শিবিরে।

রাষ্ট্রপ্রধানরা শুধু সরকারের সঙ্গেই বৈঠক করে ফিরে যাচ্ছেন। চলমান সফরে বিরোধী দলের সঙ্গে বৈঠকের জন্য কোনো প্রস্তুতি বা শিডিউল রাখা হয়নি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বাংলাদেশে এলেও ক্ষমতাসীন দল ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক এবারের মতো হচ্ছে না।

ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পিটিএ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের সাথেও বৈঠক হয়েছে। নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী ঢাকায় অবস্থান করছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৬ মার্চ ঢাকায় পৌঁছে ২৭ মার্চ ঢাকা ত্যাগ করবেন। শীর্ষ দুই ব্যক্তি বিরোধী শিবিরের সাথে সাক্ষাৎ ছাড়াই স্বদেশে ফিরে গেছেন। বাকি প্রভাবশালী দুটি দেশের সাথেও কোনো শিডিউল নেই বলে জানা গেছে। দুটি রাজনৈতিক দল বৈঠকের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। কূটনৈতিক মিশনের ব্যক্তিরা সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, বৈঠকের মতো কোনো কারণ বা পরিস্থিতি নেই। তবে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কূটনৈতিকভাবে সফল বলেই মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, জনগণের সাথে ভালো সম্পর্কের জন্য বিরোধী শিবিরে সাক্ষাত জরুরি বলেও দাবি উঠেছে। 

কূটনৈতিক সূত্রমতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে হতাশা নেই। ক্ষমতাসীনদের অধীনে সব কিছু সুন্দরভাবে চলছে। রাজনৈতিক সংঘর্ষ নেই। হামলা, মামলা, আক্রমণের খবর নেই অতীতের মতো। তাই কূটনৈতিক মিশনগুলো শুধু সরকারের সাফল্যকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে কোনো ধরনের বিশেষ বার্তা দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না। তাই পূর্বনির্ধারিত সফরে এবার সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য কোনো সময় রাখা হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে বিরোধী মিশনের ব্যর্থতাও দেখা হচ্ছে। এক সময়কার ক্ষমতাধর রাজনৈতিক দল কিংবা বর্তমান বিরোধী দল চেষ্টা করার মতো করলে হয়তো বৈঠকের সুযোগ পাওয়া যেতো। বিশেষ করে বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারতের কেউ এ দেশে এলে সাক্ষাতের সংস্কৃতি রয়েছে, এবার তারও নিয়ম ভঙ্গ হচ্ছে। বিরোধী দলের কূটনৈতিক মিশনগুলো দুর্বলতার কারণে সাক্ষাতের সুযোগটা ভেস্তে গেলো বলেও মনে করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক দল ও কূটনীতিতে চোখ রাখা ব্যক্তিরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় বা অন্য যেকোনো সফরে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানরা দেশে এলে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করতেন। কিন্তু বর্তমান সরকার কঠোরভাবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা একদলীয় শাসনব্যবস্থার বহিঃপ্রকাশ বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাসীন দল কূটনৈতিকভাবে সফল বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। তবে বিদেশের কোনো রাষ্ট্রপ্রধান এলে বিরোধী দলগুলোর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করানোর জন্য সরকারেরই চেষ্টা করা উচিত বলেও দাবি উঠেছে।

বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি আমার সংবাদকে বলেন, ‘বিভিন্ন সময়-বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বাংলাদেশ সফরে আসেন। তারা নিজ উদ্যোগে তাদের অ্যাম্বাসির মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু এবার তাদের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে এখনো কেউ যোগাযোগ করেনি। কেন তারা যোগাযোগ করছেন না, বিষয়টি তারাই বলতে পারবেন। আমাদের বোধগম্য নয়।’

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ আমার সংবাদকে বলেন, ‘আজ ১৩ দিন আমি গোপালগঞ্জে রয়েছি। কোন কোন রাষ্ট্রপ্রধান আসছেন তা-ও জানি না। পার্টির কেউ এ নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেনি। কেউ এলে তো অবশ্যই সাক্ষাত করার কথা।’ তিনি বলেন, ‘কেন তারা সাক্ষাত দিচ্ছেন না— এটা আমি বলতে পারবো না। যারা ঢাকায় আছেন, তারাই বলতে পারবেন।’

লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রীয় বা অন্য যেকোনো সফরে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানরা দেশে এলে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করতেন। কিন্তু বর্তমান সরকার কঠোরভাবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা একদলীয় শাসনব্যবস্থার বহিঃপ্রকাশ। আগত রাষ্ট্রপ্রধানরা বিরোধীদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত না করলে আমাদের দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগত রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে সাক্ষাতের জন্য আমাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করেনি।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ‘বিদেশি অতিথিরা বিরোধী দলগুলোর সাথে সাক্ষাত করবে কি-না, সে বিষয়ে সরকারের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া উচিত। একই সাথে বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক দলগুলোর চেষ্টা করা উচিত অতিথিদের সাথে সাক্ষাত করার। তাহলে বিদেশি অতিথিদের সাথে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাক্ষাত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আমার সংবাদকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপ্রধানরা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেনি। আমি জানি না বিষয়টি নিয়ে সরকারের কোনো ভূমিকা আছে কি-না। যদি কোনো ভূমিকা থাকে— তাহলে এটা খুবই দুঃখজনক। দেশে বিদেশের কোনো রাষ্ট্রপ্রধান এলে বিরোধী দলগুলোর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করানোর জন্য সরকারেরই চেষ্টা করা উচিত। একই সাথে যারা বিদেশ থেকে আসবেন, তাদেরও চেষ্টা করা উচিত। তাহলে দেশের জনগণের সাথেও ভালো সম্পর্ক হয়। একই রাজনীতিতেও সবার জন্য মঙ্গলজনক হয়।’

আমারসংবাদ/জেআই