Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

হরতালে রাজধানীতে নমনীয় হেফাজত ও পুলিশ

মার্চ ২৮, ২০২১, ০৭:৪৫ পিএম


হরতালে রাজধানীতে নমনীয় হেফাজত ও পুলিশ

ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনায় দেশজুড়ে উত্তাল অবস্থার সৃষ্টি হলেও রাজধানীতে নমনীয় ভূমিকায় ছিলো পুলিশ। যে কারণে রাজধানীর কোথাও বড় ধরনের কোনো সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি। ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের মিছিলে পুলিশ বাধা দেয়ায় সংঘর্ষ বাধে— এমন অভিযোগ থাকলেও রাজধানীতে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি গতকাল। বরং পুলিশ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে স্বাগত জানায়। এছাড়া গত শুক্রবার বায়তুল মোকাররম মসজিদে হেফাজত নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা জড়িয়ে পড়লেও গতকাল একইস্থানে হেফাজতকর্মীদের প্রতিবাদী বিভিন্ন স্লোগান আর কাছাকাছি এলাকায় থাকা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও বিভিন্ন স্লোগানে প্রকম্পিত হতে দেখা গেলেও কোনো রকমের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। রাজধানীর অন্য কোথাও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি বলেও জানা গেছে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে।

তবে নমনীয় নয় বরং ধৈর্য্যের পরিচয় দিচ্ছে সরকার— গতকাল সচিবালয়ে এমনটা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আবার হেফাজতে ইসলামের এ আন্দোলনকে ঘিরে দেশের বিভিন্নস্থানে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ সব ধরনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে এটা না মানলে জনগণের জানমাল ও সম্পদ রক্ষার্থে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে বলেও বিবৃতি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

গতকাল রোববার দুপুরে বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে লাঠি হাতে মিছিল বের করে পল্টন মোড় হয়ে দৈনিক বাংলা মোড়ে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করার কথা জানিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায় হেফাজতের এক নেতাকে। পুলিশকে ধন্যবাদ জানান হেফাজতের ওই নেতা। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তিনি বলেন, আপনারা সারাদিন কষ্ট করেছেন। কোনো রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই আমাদের কর্মসূচি সফলভাবে শেষ করার সুযোগ দিয়েছেন এ জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। পুলিশও ওই নেতাকে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করায় ধন্যবাদ জানায়। ওই নেতা পুলিশকে বলেন, মাদ্রাসাগুলো বন্ধ থাকায় আমাদের ছাত্ররা নেই। তবে আমাদের সঙ্গে বহিরাগত অনেকেই যোগ দিলেও তারা নেতাদের নির্দেশনা মেনেই হরতাল পালন করছে। শৃঙ্খলাও বজায় রাখছে। এদিকে নমনীয় হলেও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে সতর্ক অবস্থানেই ছিলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলেও রাজধানীতে বড় কোনো গোলযোগের ঘটনা ঘটেনি। নিরাপত্তার কারণে সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিলো। তবে ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় বাসসহ বিভিন্ন গণপরিবহন চলতে দেখা গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় ছিলো কম। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে গত শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে প্রাণহানির প্রতিবাদে গতকাল সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের এই কর্মসূচি দেয় হেফাজতে ইসলাম। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে এবং রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। হরতালের সকালে রাজধানীতেও কয়েকটি জায়গায় পিকেটিংয়ের চেষ্টা হয়েছে, তবে কর্মসূচির শেষ সময় নাগাদ বড় কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি।

জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানার ডিউটি অফিসার এসআই তাপস পাল বলেন, কুতুবখালি বড় মসজিদে হরতালের পক্ষে জমায়েত হয়েছিল একদল লোক। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের পরিস্থিতি স্বাভাবিক, সেখানে কোনো সমস্যা নেই। একই কথা বলেছে দারুস সালাম ও বনানী থানা পুলিশও। দারুস সালাম থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) কামরুল হুসেইন বলেন, সকাল থেকে রাস্তায় গাড়ি চলাচল করছে। কোনো সমস্যা নেই। আর বনানী থানার এএসআই কলিম উদ্দিন বলেন, আমাদের এদিকে কোনো সমস্যার খবর পাওয়া যায়নি। মহাখালী ও বনানী এলাকা দিয়ে যথারীতি গাড়ি চলাচল করছে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এসআই জয়দেব জয়ধর বলেন, মহাখালী টার্মিনাল থেকে বাস চলছে। সেখানে কোনো পিকেটিং হয়নি। কমলাপুর রেলওয়ে থানার ডিউটি অফিসার এসআই রিয়াজ মাহমুদ জানান, সকাল থেকে সব ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে। হরতালের কোনো প্রভাব সেখানেও নেই।

নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে থানা ও বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা করলে সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাণ্ডব চালিয়ে রেলওয়ে স্টেশনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা। আর রাজধানীতে মোদিবিরোধীরা সংঘাতে জড়িয়েছে পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে, তাতে আহত হয়েছেন অন্তত ৬০ জন। এর ধারাবাহিকতায় শনিবারও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসাছাত্ররা পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে সংঘাতে জড়ালে অন্তত ৫ জন নিহত হন। হেফাজতের এই হরতালে বিএনপি আনুষ্ঠানিক সমর্থন না দিলেও সংঘর্ষে প্রাণহানির প্রতিবাদে দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই ইস্যুতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, গত দুই দিন ধরে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ধর্মীয় উন্মাদনায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলায় সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করেছে। এর মধ্যে উপজেলা পরিষদ, থানা ভবন, সরকারি ভূমি অফিস, পুলিশ ফাঁড়ি, রেলস্টেশন ও রাজনৈতিক ব্যক্তির বাড়িঘর, মানবসম্পদের ক্ষতি করেছে। সরকার উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে, একটি মহল এতিম ছাত্র ও শিশুদের রাস্তায় নামিয়ে সরকারি সম্পদ ধ্বংসসহ নানা ধরনের অপকর্ম করছে। প্রাণহানি ঘটাচ্ছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অসত্য গুজব ছড়িয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যারা গুজব ছড়াচ্ছে, আইন অমান্য করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া নাশকতামূলক কাজে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিবৃতি দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফ মাহমুদ।

আমারসংবাদ/জেআই