Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

লকডাউন চায় না সাধারণ মানুষ

এপ্রিল ৩, ২০২১, ০৮:০৫ পিএম


লকডাউন চায় না সাধারণ মানুষ
  • কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ কেউ খুশি নন
  • স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কঠোর শাস্তি দেয়ার পক্ষে সাধারণ মানুষ
  • সাতদিনের লকডাউন কী সমাধান হবে —প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদেরও

এক সপ্তাহ লকডাউন! আবারো মহাবিপদের মুখোমুখি হচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষ। অতীতের দুর্বিষহ পরিস্থিতিসহ মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। রিকশাচালকরা বলছেন, ‘দু-একদিন কেউ ত্রাণ দিয়ে আর হয়তো খোঁজ নেবে না!’ শ্রমিকরা বলছেন, ‘আবারো হয়তো ভোটার আইডি নিয়ে রাস্তায় সাহায্যের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।’ মধ্যেবিত্তদের কপালে বড় চিন্তার ভাঁজ! আবারো হয়তো ঢাকা ছেড়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শহর ছাড়তে হবে। পরিবার নিয়ে নিঃস্ব হওয়ার শঙ্কার কথা বলছেন দেশের বড় একটি অংশ।

সাধারণ মানুষসহ কেউ চাচ্ছে না লকডাউন। স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়ি আরোপ করা, মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা; স্বাস্থ্যবিধি না মানলে প্রয়োজনে কঠোর শাস্তি দেয়ার দাবি তুলছেন সাধারণ মানুষ। বিচক্ষণ জনগণের একটি অংশ থেকে দাবি উঠেছে, লকডাউনের বদলে দেশে সকল কর্মকাণ্ড ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দিলে ভালো হবে। সরকারি অফিসগুলো রাত ১০টা থেকে শুরু করে ভোর ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকতে পারে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকতে পারে। মার্কেট ও শপিংমলগুলো বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকতে পারে। পরিবহন সার্ভিস, চিকিৎসাসেবা, আইনিসেবা, হাট-বাজার ইত্যাদি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা উচিত। এতে করে জনসমাগম হবে না। মানুষের চাপ থাকবে না। এভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। সাধারণ মানুষও বেঁচে থাকবে। সরকারের ওপর চাপ বাড়বে না। এটি হতে পারে বিভিন্ন রাষ্ট্রের জন্য মডেল। পরিকল্পিত ছাড়া এভাবে লকডাউন দিলে তা হবে প্রহসনের লকডাউন। সব কিছুর দাম বাড়বে। গরিবরা মরে যাবে। মধ্যবিত্তরা পড়বে জীবন শঙ্কায়।

দেশের অধিকাংশ সচেতন নাগরিক লকডাউন নিয়ে তাদের মতামত জানাচ্ছে। এর মধ্যে রুবায়েত রাজ বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো এত বেশি জনসংখ্যার ঘনত্বের দেশে লকডাউনের কোনো যৌক্তিকতা নেই! লকডাউন দেয়ার পরও একটা বিষয় পরিষ্কার যে, এই এক বছরে কমবেশি আমরা সবাই করোনা আক্রান্ত হয়েছি। যে ভাইরাসটা এত দ্রুত সারা পৃথিবীতে ছড়িয়েছে, সেটা ১৮ কোটির এই দেশে লকডাউন দিয়ে প্রতিরোধ করা অসম্ভব, নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের দেশে এখনো ৩৫ শতাংশ মানুষ আছে যারা জানে না পরের দিন তাদের কপালে কয় বেলা ভাত জুটবে? নতুন করে লকডাউন দিয়েন না, আমরা রাস্তাঘাটে যে পরিমাণ নোংরা ধুলাবালু আর জীবাণুতে বেঁচে আছি সেগুলো করোনার থেকে কম নয়। তাই লকডাউন কোনো সুফল বয়ে আনবে বলে মনে হয় না।’

একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রাহেমিন সিফতি বলেন, ‘এখন আর লকডাউন দিয়ে কী লাভ? সব পরীক্ষা, অনুষ্ঠান হয়ে মানুষের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে এখন প্রহসনের লকডাউন... সব কিছুর দাম বাড়বে... নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত বাঁশ খাবে... এমনিতেই চিকিৎসা খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, এখন খাবারের জিনিসপত্র কিনতে গেলে হাবুডুবু খাবে... প্ল্যানিং সবসময় বাজে এই দেশের...।’

ইমরান হোসাইন বলেন, ‘বড়লোক ভয় পায় করোনা আর গরিব ভয় পায় লকডাউন। লকডাউন কোনো সমাধান হতে পারে না। করোনায় বাঁচতে হবে এবং বাঁচাতেও হবে। লকডাউনের বদলে দেশে সকল কর্মকাণ্ড ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দিলে ভালো হয়। সরকারি অফিসগুলো রাত ১০টা থেকে শুরু করে ভোর ৬টা পর্যন্ত খোলা রাখা উচিত। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা উচিত। মার্কেট ও শপিংমলগুলো বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা রাখা উচিত। পরিবহন সার্ভিস, চিকিৎসাসেবা, আইনিসেবা, হাট-বাজার ইত্যাদি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা উচিত। এতে করে জনসমাগম হবে না। মানুষের চাপ থাকবে না বললেই চলে।’

নাঈয়ার লুপি বলেন, ‘মাননীয় সরকার, লকডাউনে না গিয়ে দেশে আর্মি নামিয়ে দিন, লোকজন পুলিশের থেকে বেশি আর্মি ভয় পায়, আর্মি বারবার ঘোষণা দিয়ে মানুষকে সচেতন করবে, টহল দেবে, অবশ্যই লোকজন সচেতন হবে, কিন্তু লকডাউনে একটা বিশাল মধ?্যবিত্ত সমাজ পথে বসে যাবে। তারা কারো কাছে হাত পাততে পারবে না, শুধু উচ্চবিত্ত আর নিম্নবিত্তদের নিয়ে না ভেবে মধ?্যবিত্তদের নিয়েও একটু ভাবুন। একমাত্র কঠোর সচেতনতা ছাড়া লকডাউন আমাদের মতো দেশের জনগোষ্ঠীর জন্য সমাধান হতে পারে না।’

নাগিব মাহফুজুর রহমান দিপ্ত বলেন, ‘আগের বার লকডাউন দেয়ায় সংক্রমণ থামানো তো যায়নি, উল্টো অনেক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। এসব লকডাউনের জন্য গরিব মানুষরা করোনায় না মরলেও না খেতে পেরে ঠিকই মরবে। সংক্রমণ ঠেকানোর সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়ি করা, মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে প্রয়োজনে কঠোর শাস্তি দেয়া হোক, তবে লকডাউন একেবারেই নয়। স্বাস্থ্যবিধির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেই সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব, লকডাউন দিয়ে নয়।’

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবু নোমান রুমি বলেন, ‘সকল অফিস আদালত, ফ্যাক্টরি, কল-কারখানা, পাবলিক সার্ভিস খোলা রেখে এ কেমন অপরিকল্পিত লকডাউন?’

ট্রাভেল এজেন্সি মেসার্স জুহা ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী মো. মাহমুদুল হাছান বলেন, ‘এই লকডাউন কারো কারো জন্য আশীর্বাদ হলেও আমাদের জন্য অভিশাপ। তাইবুনে নেসা চৌধুরী অনামিকা বলেন, ‘লকডাউন দিলে কী হবে? করোনা ভাইরাস যেমন আছে তেমনই থাকবে! মাঝখান থেকে উচ্চবিত্তরা ঘরে আরামে বসে নিজেদেরকে নিরাপদ ভাববে, নিম্নবিত্তদের জন্য আপনারা আছেন আর মধ্যবিত্তরা সারাদিন বাসায় হতাশায় নিমজ্জিত এটা ভেবে সময় কাটাবে— চাকরিটা থাকবে তো, আগামী মাসে বেতন পাবে তো, আগামী মাসে বাসা ভাড়া দিতে পারবে তো, আগামী মাসে বাজারের টাকা থাকবে তো, সামনে রোজা কিভাবে কী হবে? এসব ভেবে কিছু হতাশায় আত্মহত্যা করবে আর কিছু না খেয়ে মারা যাবে,  মধ্যবিত্তদের কথা কেউই ভাবে না।’

তানভীর শাহরিয়ার রিমন বলেন, ‘লকডাউন কতটা কার্যকর হবে জানি না। যে দেশে ধনী-গরিবের শ্রেণিবৈষম্য আকাশছোঁয়া, সে দেশের জন্য জীবন না-কি জীবিকা এ এক কঠিন প্রশ্ন! দিনমজুরদের জন্য এক সপ্তাহের পরিকল্পনাটাও জানতে পারলে ভালো হতো।’ মোহাম্মদ জামান বলেন, ‘যথাযথ সম্মান রেখেই বলছি, ভুল হলে ক্ষমা করবেন, বাঁচার চেয়ে ব্যবসা বড় না হলেও বাঁচতে হলে, টিকে থাকতে হলে ব্যবসা করতে হবে। এসি রুমে থেকে মধ্যবিত্ত মানুষদের দুঃখ বুঝবেন না। আপনারা আছেন মাস্ক আর সামাজিক দূরত্ব নিয়ে। এদের পরিবার কিভাবে চলবে? বাসা ভাড়া কিভাবে দেবে? এদের পরিবারের মাসিক খরচের ৫০ ভাগ কি আপনারা দেবেন? ওদের বাড়ির মালিকদের ওপর প্রেশার দিয়ে এক মাসের ভাড়া মওকুফ করাতে পারবেন? যে সমস্ত সিন্ডিকেট নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে তাদের বুঝিয়ে দাম কমাতে পারবেন? মাস্ক আর সামাজিক দূরত্ব দিয়ে ক্ষুধার জ্বালা মিটবে না। সবকিছুই ঠিকঠাকভাবে চললেও দোকান বন্ধ করার জন্য কিছু লোক উঠেপড়ে লেগেছে। যে দেশে ৭০ শতাংশ মানুষ মধ্যবিত্ত সেই দেশে দোকান বন্ধ করার আগে তাদের মাসিক খরচ নিশ্চিত করুন।  আপনার ছোট বাচ্চা ক্ষুধায় কান্না করছে আর আপনি দোকান বন্ধ থাকায় ইনকাম করতে পারছেন না, তখন কী করবেন? তাহলে শত কোটি টাকা খরচ করে ভ্যাকসিন আনার কী দরকার ছিলো!’ কুদ্দুস তালুকদার বলেন, ‘লকডাউনে করোনার সমস্যা সমাধান অতীতে হয়নি; বর্তমানে এবং ভবিষ্যতেও হবে না। মাঝখানে কিছু লোক আঙুল ফুলে কলাগাছ হবে এবং খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষ কষ্ট পাবে।’

ইসমামুল হক বলেন, ‘এই এক সপ্তাহ মানুষ খাবে কী? সবাইকে ভোটার আইডি কার্ডের ওপর ভিত্তি করে এক সপ্তাহের জন্য ১০ হাজার করে টাকা দেয়া হোক। তারপর লকডাউন।’ সুমন আহমেদ বলেন, ‘খুব খারাপ সিদ্ধান্ত। এতে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। মাঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। খেটেখাওয়া মানুষ অনাহারে মরবে।’ কামরুল হাসান ফাহিম বলেন, ‘লকডাউন করার আগে খেটেখাওয়া দিনমজুরদের জন্য এক সপ্তাহের খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়া উচিত বলে মনে করি। সেই সাথে বিত্তশালীদেরও উচিত অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো।’ দোলন দাস বলেন, ‘আমাদের মতো খেটেখাওয়া মানুষদের জন্য খুবই কষ্টকর। এক সপ্তাহের লকডাউনে আর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দামের ঊর্ধ্বগতির জন্য খেটাখাওয়া মানুষগুলো আরও ভুক্তভোগী হবে। কিছু বিবেকহীন মানুষ এই সুযোগে ফায়দা লুটবে, এটাই বাস্তব।’

জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘খেটেখাওয়া দিনমজুর শ্রমজীবী মানুষের তিনবেলা খাবার নিশ্চিত না করে লকডাউনে যাওয়াটা সরকারের এক ধরনের উচ্চভিলাষী সিদ্ধান্ত। সরকারি চাকরিজীবী এবং বিত্তশালীরা ছাড়া সাধারণ মানুষ এই মুহূর্তে লকডাউন চায় না। অতএব অবিলম্বে সরকারের উচিত লকডাউন প্রত্যাহার করে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।’

গোলাম রব্বানি বলেন, ‘আগে অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাঠিয়ে দিন। চিকিৎসাব্যবস্থা সহজ করুন। দেশকে রক্ষা করুন।’ রাকিবুল হাসান বলেন, ‘লকডাউন তারাই মানতে পারবে যাদের খাবারের চিন্তা করতে হবে না! তাই যারা দিনমজুর তাদের ঘরে ঘরে খাবার দিয়ে আসারও ব্যবস্থা করতে বলেন! আর লজ্জায় যেসব নিম্ন-মধ্যবিত্তরা সাহায্য চাইতে পারে না তাদের ঘরে ঘরেও খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে বলেন! তা না হলে এসব লকডাউন দেয়ার কোনো মানেই হয় না।’

কাজী সুহূদ বলেন, ‘এমন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া মোটেও ভালো হয়নি। এক সপ্তাহ আগে অন্তত জানানোর দরকার ছিলো। যাদের হাতে টাকা নেই তাদের কী অবস্থা হবে? আর এই লকডাউনের জন্য কেউ টাকা ছাড়বে না। এক কথায়, এবারের লকডাউন সাধারণ মানুষ চরম ভয়াবহতার সম্মুখীন হবে। সময় পেলে বউ-বাচ্চা গ্রামে পাঠাতাম সেই সুযোগও দিলো না। আমি নিজে একজন সাধারণ মানুষ হয়ে অনুধাবন করতে পারছি। সামনে আমার পরিবারের সামনে কী দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে।’

মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আজ করোনা ভাইরাস এমন ঊর্ধ্বগতির জন্য কি সুশীল সমাজ দায়ী নয়? গত মাসে যতগুলো সমাবেশ, মিটিং, মিছিল বিক্ষোভ, হরতাল হলো তা গত এক বছরেও আমার মনে হয় হয়নি। আর এর নেপথ্যে  রয়েছে সুশীল সমাজের কিছু লোক। তারা জানতো এমন কিছু একটা হতে পারে, কিন্তু তারা তাদের ক্ষমতা দেখানোর জন্যই এমন কিছু করছে বলে আমি মনে করি। আপনি একটা শ্রমিক, কৃষক, নিম্ন আয়ের মানুষ দেখান, যারা আজকের এমন সিদ্ধান্ত খুশি, তারা জানে এর ফলে তাদের জীবনের ঝুঁকিটাই সবচেয়ে বেশি। কারণ, তাদের পেটে খাবার যোগান দিতে হবে। এর জন্য তাদের বাইরে বের হতেই হবে। ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিটা তাদেরই, কিন্তু ওই যে, যারা গরিব পারবে না ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে। কিন্তু পারবে এ সমাজে মাথা নিচু করে সব মেনে নিতে। গত মাসের মিটিং মিছিলে ক’জন দিনমজুর গেছে, আর যারা গেছে তারা তাদের কতিপয় নেতার নির্দেশে গেছে। আজ ওইসব নেতাদের বলছি, আপনারা তো নিজেদের ক্ষমতা সো অফ করার জন্য ব্যবহার করেছেন, আর দেশে যতজন ‘দিন আনে দিন খায়’ এমন মানুষ আছে তাদের দায়িত্বটা নেন, তাহলেই তারা আর কিছু বলবে না। কারণ, আজ এ অবস্থার জন্য আপনারাই দায়ী। ঝুঁকিটা যখন বাড়াইছেন এখন ঝুঁকিটা আপনারাই কমান।’

গবেষক আফসান চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের দেশে লকডাউন আরো বহু আগে দেয়া উচিত ছিলো। যখন দেয়ার কথা তখন আমরা দেইনি। যখন ভয়াভহতা ছড়িয়ে গেছে তখন আমরা দিচ্ছি। যেটি মনে হচ্ছে আসলে পরিকল্পিত চিন্তার আলোকে মনে হচ্ছে না। আমাদের দেশে সাধারণত মানুষ নিয়ম মানতে চায় না। এদেশের মানুষকে নিয়ম মানতে বাধ্য করতে হয়। বাধ্য করার পদ্ধতিগুলো এতদিন প্রয়োগ করা উচিত ছিলো। এখন হঠাৎ করে ঘোষণা ছাড়া লকডাউন দেয়ায় ঢাকা শহরের মানুষ অনেক বিপদে পড়ে যাবে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের যারা রয়েছেন। তারা বাসা ভাড়া দিতে পারবেন না, নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে পারবেন না। এ লকডাউন তো মাত্র সামান্য সময়। এক সপ্তাহ পর্যন্ত। এখন বিষয় হচ্ছে— এই এক সপ্তাহে মোকাবিলার কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে কি-না। কিংবা আক্রান্ত মৃত্যু কমে যাবে কি-না? স্বাভাবিকভাবে মনে হচ্ছে এই রোগ বা সমস্যা আমাদের দেশ থেকে আরো দুই-তিন বছরেও যাবে না। তাই সরকারকে যা কিছু করতে হবে চিন্তা করে করতে হবে।’

সু’শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজুর রহমান খান আমার সংবাদকে বলেন, ‘লকডাউন দিলে অবশ্যই নিম্ন আয়ের মানুষ বড় বিপদে পড়বে। বিশেষ করে ছোট পুঁজির ব্যবসায়ী, রিকশাচালক, ভাসমান মানুষ এ শ্রেণির লোকরা অসুবিধায় বেশি পড়বে। এর আগে তো সাধারণ ছুটি দিয়ে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। এখন তো মাঝে সব কিছু খুলে দেয়ায় সভা সমাবেশ সব ধরনের কর্মসূচি উন্মুক্ত থাকায় এটি আরো সবার মাঝে ছড়িয়ে গেছে। এখন এই সাংঘাতিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সবারই সমন্বিত উদ্যোগ।’

আমারসংবাদ/জেআই