Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

ঝুঁকি নিয়েই ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

এপ্রিল ৪, ২০২১, ০৭:৩০ পিএম


ঝুঁকি নিয়েই ঢাকা ছাড়ছে মানুষ
  • কমলাপুর পদ্মাপাড় গাবতলী মহাখালী কল্যাণপুরে ঢাকা ছাড়ার উৎসব
  • একজনের আসনে ৪-৫ জন বসে বাড়ি ফিরছেন, ছিলো না ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি
  • ৫-৭ গুণ ভাড়া দিতেও যাত্রীরা আপত্তি জানায়নি, ছিলো না কঠোরতাও 
  • লকডাউন চান না ব্যবসায়ীরা, বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

আবারো ভেসে যাচ্ছে লকডাউন! এক সপ্তাহের লকডাউনের ঘোষণা পেয়ে মানুষ ঈদ উৎসবে বাড়ি ফিরছে। রাজধানীর কমলাপুর, গাবতলী, মহাখালী, পদ্মাপাড়, শ্যামলী, সায়েদাবাদ, কল্যাণপুরে গতকাল দিনব্যাপী ঢাকা ছাড়ার উৎসব ছিলো। হাতে ও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বাসটার্মিনাল ও রেলস্টেশনের দিকে হন্তদন্ত ছুটেছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের লক্ষ্য— গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বাসে বা ট্রেনে ওঠা।

লকডাউনের সময় কর্মহীন সময় কাটাতে গ্রামে যাওয়াই ছিলো উদ্দেশ্য। একজনের আসনে চার-পাঁচজনও বসেছে। ছিলো না ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধিও। পাঁচ-সাতগুণ বেশি ভাড়া দিতেও যাত্রীরা আপত্তি জানায়নি, টার্মিনালগুলোতে ছিলো না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতাও। অন্যদিকে দেশের বড় অংশ এখনো লকডাউন চাচ্ছেন না। সাধারণ মানুষ ২৪ ঘণ্টা সব কিছু খোলা রেখে ভাগ করে সময় বেঁধে দেয়ার দাবি তুলেছেন।

অন্যদিকে লকডাউনের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন ঢাকাসহ সারা দেশের ব্যবসায়ীরা। বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। সড়ক অবরোধ করেছেন। কয়েকটি স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরও তারা ব্যবসা করতে পারেননি। এ বছর মার্কেট বন্ধ থাকলে তারা রাস্তায় নামা ছাড়া আর উপায় থাকবে না। 

লকডাউন চান না ব্যবসায়ীরা, ঢাকায় সড়ক অবরোধ : লকডাউনের বিরোধিতা করে নিউমার্কেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছেন ব্যবসায়ীরা। বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের একটি দল পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেলও নিক্ষেপ করেছে। গতকাল রোববার বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, এলিফ্যান্ট রোড, সাইন্সল্যাব, চকবাজার, উর্দুরোড, ইসলামপুর এলাকায় বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা মাঠে নামেন। ব্যবসায়ীরা কোথাও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন আবার কোথাও বিক্ষোভ মিছিল করেন। এর মধ্যে নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ীদের একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকে। ‘লকডাউন মানি না মানব না, দোকানপাট খোলা থাকবে, জোর করে মার্কেট খোলা রাখা হবে, বাধা এলে বাধা দেবো, লকডাউন চাই না, চাই না, ব্যবসায়ীদের মারবেন না, মারবেন না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন তারা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা কলেজের সামনের সড়কে চলছিল বিক্ষোভ। সেখানে চন্দ্রিমা, গাউছিয়াসহ বেশ কয়েকটি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এসে যোগ দেন। এতে সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। বিপুল সংখ্যক গাড়ি আটকা পড়ে। পুলিশ তাদের অনুরোধ করে সড়ক ছেড়ে দিতে বললে ব্যবসায়ীদের একটি দল পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। একই সময় বেশ কয়েকটি প্রাইভেটকার ও একটি বাস ভাঙচুর করে। নিউমার্কেট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াছীন আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তবুও তারা সড়ক ছেড়ে দেয়নি। অবরোধ ও অবস্থান করে তারা।’

এদিকে উর্দুরোড এলাকায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছেন ব্যবসায়ীরা। উর্দুরোড আভ্যন্তরীণ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন মালিক বলেন, ‘গত বছর লকডাউন থাকায় যে লোকসান হয়েছে সেই ক্ষতি এখনো পুষিয়ে উঠতে পারিনি। এবার কেবল বেচাবিক্রি শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। অথচ সরকারি সবই খোলা থাকছে। শুধু মার্কেট বন্ধ থাকবে তা কি করে হয়।’ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জালাল বলেন, ‘আমরা চাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট খোলা রাখতে। বিবেচনা করে এই অনুমতি দেয়া হোক। না হলে সবাই মাঠে মারা যাবে। কেউ ভাত পাবেন না। দিনে অন্তত চারঘণ্টা হলেও মার্কেট খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হোক।’ চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এখানে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা। তারা সীমিত পরিসরে হলেও মার্কেট খোলা রাখার দাবি জানিয়েছেন।’

কোভিড ১৯-এর সংক্রমণ রোধে শর্তসাপেক্ষে সারা দেশে চলাচল ও কাজে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার তা না মানার ঘোষণা দিয়েছেন পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ব্যবসায়ীরা। ভাঙ্গুড়া বাজার দোকান মালিক ও বণিক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ শহীদুজ্জামান বলেন, ‘গত বছর ঈদের আগ মুহূর্তে লকডাউনের কারণে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তাই এ বছর আবার ঈদের আগে লকডাউনের ঘোষণায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা তাদের জীবিকার প্রয়োজনে আমাদের কাছে উপজেলা পর্যায়ে লকডাউন না দিতে দাবি জানিয়েছেন। তাই আমরাও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবির বিষয়টি তুলে ধরবো। যেনো স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালনের ব্যবস্থা করে উপজেলা শহরে লকডাউন না দেয়া হয়। কারণ লকডাউন হলে আর্থিক দৈন্যতায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়বেন। আশা করি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সরকারের সর্বোচ্চ মহল বিষয়টি দেখবে।’

লকডাউন না দেয়ার দাবি জানিয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদ। ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, বর্তমান সরকার সব সময় ব্যবসায়ীদের কল্যাণে কাজ করেছেন। কিন্তু আবারো লকডাউন সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের মরার উপর খাঁরার ঘা স্বরূপ। বর্তমান সময়ে আবারো লকডাউন আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। লকডাউন দিলে ব্যবসায়ীদের জন্য হতাশা ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। বক্তারা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা এখনো বিভিন্ন ঋণে জর্জরিত। গত বছর ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে ব্যবসা না করার ফলে এমনিতেই লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। আবারো লকডাউন হলে অনেক ব্যবসায়ীকে রাস্তায় বসতে হবে।

লকডাউনের খবরে কমলাপুর রেলস্টেশনে ভিড় : লকডাউন ঘোষণার পর গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে বাড়তে শুরু করেছে যাত্রীদের চাপ। ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন রাজধানীবাসী। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকিট বিক্রি করার কারণে অনেকেই ফেরত যাচ্ছেন স্টেশন থেকে। গতকাল সকালে সরেজমিন কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে এ দৃশ্য নজরে পড়ে। স্টেশনের প্রবেশ মুখেই ছিলো টিকিটসংগ্রহকারীদের ভিড়। বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে তারা সংগ্রহ করছিলেন ট্রেনের টিকিট।

টিকিট কাটার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নাসিম হায়দার জানান, তিনি যাবেন পাবনার বড়াল ব্রিজে। একটি কাজের জন্য ঢাকায় এসেছিলেন। কিন্তু লকডাউনের ঘোষণা আসায় সে কাজটি শেষ না করেই পাবনায় ফিরছেন। কারণ, সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলে আমার কাজটাও হবে না। আবার বাড়িও ফিরতে পারবো না। টিকিটপ্রত্যাশী আরেক যাত্রী নাজমুল যাবেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। তিনি বলেন, ঢাকায় আমি চাকরি করি। সোমবার থেকে লকডাউন হলে আমার অফিস বন্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং আমার ঢাকায় থেকে কোনো লাভ নেই। সেজন্যই বাড়ি যাচ্ছি।

এ বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, লকডাউনের ঘোষণায় স্টেশনে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। তবে আমরা সরকারের নির্দেশনা মেনে, অর্ধেক আসনে টিকিট বিক্রি করছি। কোনোভাবেই আমরা সরকারি নির্দেশনা অমান্য করবো না। তিনি বলেন, সোমবার থেকে সব যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য ৫ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিক্রীত সব টিকিটের টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে। এদিকে, সোমবার থেকে সব যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এরপর থেকেই অগ্রিম টিকিট কেটে রাখা যাত্রীরা টিকিট ফেরত দিতে ভিড় জমাচ্ছেন কমলাপুর রেলস্টেশনে।

অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও গাবতলী থেকে বাড়ি ফিরছে মানুষ : লকডাউনের অগ্রিম সরকারি ঘোষণা আসার পর রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। গাবতলী বাসটার্মিনালে ঘরমুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড়। গতকাল গাবতলীতে দেখা গেছে, ঈদের প্রায় দেড় মাস বাকি থাকলেও রাজধানীবাসী বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। এক সপ্তাহের লকডাউনের ঘোষণা শোনার পরপরই কাউন্টারগুলোতে টিকিটপ্রত্যাশীরা যোগাযোগ শুরু করেন। অনেকে আবার সপরিবারে সকাল-সকাল টার্মিনালে এসে টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে কাউন্টারগুলো থেকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

টিকিটের জন্য অপেক্ষমাণ নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি গণমাধ্যমকে বলেন, লকডাউন আসছে তাই পরিবারসহ বাড়ি চলে যাচ্ছি। টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছি। টিকিট পেলে রওনা দেবো। মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী সুমাইয়া ও শারমিন বলেন, ‘আগামীকাল থেকে লকডাউন আসছে এ কারণে আমাদের কলেজ ছুটি দিয়েছে। হোস্টেলের সব ছাত্রীরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।’ এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে টিকিট সংগ্রহ করেছি। বেলা সাড়ে ১২টায় বাস ছাড়বে। খুলনাগামী আরেক যাত্রী বলেন, ‘খুলনার ভাড়া সাধারণত ৫০০ হলেও যাত্রী বেড়ে যাওয়ায় আজকে এক হাজার টাকা নেয়া হয়েছে।’ এ নিয়ে কাউন্টারে তার সঙ্গে বাক-বিতণ্ডাও হয়। গাবতলী সোহাগ পরিবহনের কাউন্টারে দায়িত্বরত নজরুল বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, লকডাউনের খবর আসার পর কাউন্টারে উপচেপড়া ভিড় দেখা দিয়েছে। আজকে সারাদিনে ১২টি বাস ছাড়বে। গতকাল রাত থেকে শুরু হয়ে সকাল ১১টার মধ্যে টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। এখন যারা আসছে তাদের বাধ্য হয়ে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।

হানিফ কাউন্টারের ম্যানেজার জাকির মল্লিক জানান, লকডাউনের কারণে ঢাকার মানুষ বাড়ি ফেরা শুরু করেছে। এ কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। তবে কিছু টিকিট এখনো রয়েছে। যারা আগে আসছেন, তারা টিকিট নিতে পারছেন। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার কারণে ৪০ সিটের বাসে ২০ জন নিতে হচ্ছে। ফলে সিট খালি থাকলেও যাত্রী নেয়া যাচ্ছে না। যশোরের টিকিট নিতে রোজিনা এক্সপ্রেসের কাউন্টারে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এক যাত্রী। তার অভিযোগ, নিয়মিত ভাড়া ৫০০ টাকা হলেও বর্তমানে এক হাজার টাকা দাবি করা হচ্ছে। সরকার ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত নির্ধারণ করে দিলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

লকডাউনের খবরে মহাখালী বাসটার্মিনালে ভিড় : লকডাউনের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন বেশির ভাগ মানুষ। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর মহাখালী বাসটার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সকালে মহাখালী বাসটার্মিনাল থেকে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, রংপুর, গাইবান্ধার উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়। সরেজমিন দেখা যায়, মহাখালী বাসটার্মিনালে বাসে প্রবেশের শুরুতে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার ও মাস্ক পরার জন্য বারবার সচেতন করা হচ্ছে। এমনকি বারবার মাইকিং করে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতন করা হচ্ছে। মহাখালী বাসটার্মিনালে বেশ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা থেকে জামালপুর পর্যন্ত দুই সিটে একজন হিসেবে সাড়ে ৫০০ টাকা করে নিচ্ছেন। সরকারের নির্ধারিত ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়লেও অর্ধেকের বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে বাস কাউন্টারে। আগের হিসাবে জামালপুর পর্যন্ত যেতে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা নেয়া হতো। আর এখন নেয়া হচ্ছে সাড়ে ৫০০ টাকা।

জামালপুর যাওয়ার উদ্দেশে আসা যাত্রী মো. খলিলুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এক সপ্তাহ আগেও আমরা এ বাসে জামালপুর গিয়েছি। তখন ২০০ টাকা নিয়েছে। এখন সাড়ে ৫০০ টাকা ছাড়া টিকিটই দিচ্ছে না। এটা আমার জন্য অনেক বেশিই। তবু নিজের তাগিদে যেতে হচ্ছে। শুনেছি সোমবার সারা দেশে লকডাউন। তাই আজ বাড়তি ভাড়া দিয়ে না দিয়ে উপায় নেই। বাসের চালক মো. দুলাল বলেন, এখানে যাত্রীর চাপ থাকলেও আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যাত্রী নিচ্ছি। আমরা বাসে ২৫ জনের বেশি নিচ্ছি না। আমাদের দুই সিটের মধ্যে একজন করে বসছে। তাই আমরা দুই সিটের ভাড়া নিচ্ছি।

করোনার ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা পার হচ্ছেন দক্ষিণবঙ্গের মানুষ : করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়েই ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন দক্ষিণবঙ্গের মানুষ। শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে ঘরমুখী যাত্রীদের ঢল দেখা গেছে। সরকার কর্তৃক দেশব্যাপী লকডাউনের ঘোষণা দেয়ায় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুটে যেনো পারাপারে প্রতিযোগিতায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ। গতকাল সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সরজমিন দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত বাংলাবাজার লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। তবে লঞ্চে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া বাড়ানো হলেও কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ও যাত্রীরা। নেই কোনো সামাজিক দূরত্ব।

বাংলাবাজার সি-বোট ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, জনপ্রতি ২০০ টাকা ভাড়া দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিচ্ছেন অনেকে। বর্তমানে এই নৌরুটে ৮৭টি লঞ্চ ও ২০০ স্পিডবোট চলাচল করছে। ঢাকা থেকে খুলনাগামী যাত্রী আবুবকর বলেন, ‘কাল থেকে লকডাউন দিছে সরকার তাই বাড়ি যাচ্ছি, লঞ্চে আগের মতই গাদাগাদি করেই ছুটছে মানুষ। এতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’ বিআইডব্লিটিসিএর বাংলাবাজার ঘাটের ট্রাফিক ইনচার্জ আক্তার হোসেন বলেন, ‘সকাল থেকে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় বেশি। করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে তাদের মাইকিং করে নিরাপদ দূরত্বে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। লঞ্চগুলোকে ট্রিপ শেষে ওয়াশ করা হয়। এছাড়া সকল যাত্রীদের মাস্ক বাধ্যতামূলকভাবে লঞ্চে উঠানো হয়।

রেলে একজনের আসনে চারজন বসে ঢাকা ছাড়ছে : লকডাউন দেয়া হবে এমন ঘোষণার পর রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লেগেছে। হুড়োহুড়ি করে ট্রেনে উঠছেন যাত্রীরা। লোকাল ট্রেনগুলোতে শোভন চেয়ারে এক সিটে একজন করে বসার কথা থাকলেও তিন থেকে চারজন করে বসছেন। তাদের কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। গতকাল সকাল ৯টায় সিরাজগঞ্জগামী লোকাল ট্রেনে পরিবার নিয়ে উঠেন আরমান হোসেন। আসন না পেয়ে পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে দাঁড়িয়েই রওনা দিয়েছেন তিনি। হোসনে আরার মতো এমন আরও অন্তত ২৫ জনকে একটি বগিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ওই বগিতে তখন প্রতিটি আসনে বসে ছিলেন চার থেকে পাঁচজন করে যাত্রী।

আরমান নামে এক যাত্রী বলেন, ‘সোমবার (আজ) থেকে লকডাউন ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তাই নির্ধারিত সময়ের আগে বাড়ি রওনা দিয়েছি। আজ যেতে না পারলে এক সপ্তাহের জন্য আটকে যেতে হবে।’ আরেকটি বগিতে চার ফুটের একটি আসনে গাদাগাদি করে বসেছেন টাঙ্গাইলের চারজন যাত্রী। তাদের মধ্যে সালাউদ্দিন নামের একজন বলেন, ‘লোকাল ট্রেনে আমরা সবসময় এভাবে গাদাগাদি করে যাতায়াত করি। কিন্তু লকডাউনের ঘোষণায় ট্রেনে যাত্রী অনেক বেশি। চাইলেও এখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতায়াত করা সম্ভব নয়।’

বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশনমাস্টার মো. আলমগীর হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকে বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রী অনেক বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, লকডাউনের ঘোষণায় যাত্রীদের চাপ বেড়েছে।’ তবে তিনি দাবি করেন, স্টেশনে মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। ট্রেনে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করতেও দেয়া হচ্ছে না।

থালা হাতে রাস্তায় নেমেছেন ঢাকা রাইড শেয়ারিং ড্রাইভাররা : এছাড়া গতকাল থালা হাতে রাস্তায় নেমেছেন ঢাকা রাইড শেয়ারিং ড্রাইভার ইউনিয়ন। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রাইড শেয়ারিং ড্রাইভার ইউনিয়ন এ বিক্ষোভ সমাবেশ করে। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে যাত্রী তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় এ বিক্ষোভ করেছেন চালকরা।

ঢাকা রাইড শেয়ারিং ড্রাইভার ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মায়ের মতো। আপনার কাছে আমাদের আবেদন— আমরা যারা বাইকার আছি রাইড শেয়ার করি, প্রাইভেট কারের রাইড শেয়ারিং করি আমাদের যে পরিবহন আছে আমরা প্রতিবছর ট্যাক্স দিয়ে থাকি। আমরা সাধারণ গরিব ড্রাইভার। কেউ জমি বিক্রি করে গাড়ি কিনেছি, কেউ ব্যাংকের লোন নিয়ে। এনজিও থেকে লোন নিয়েও অনেকে গাড়ি কিনেছে। এখন লকডাউনের কারণে আমরা পারছি না গাড়ি চালাতে। তাহলে পরিবার নিয়ে কিভাবে বাঁচব আমরা? ব্যাংক, এনজিওর লোন শোধ করবো কেমন করে। আমরা আমাদের ক্ষুধার্ত শিশুদের আহাজারি দেখেছি।’

আমারসংবাদ/জেআই