Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ১১ মে, ২০২৪,

ব্যাংকে টাকা তোলার হিড়িক

জাহাঙ্গীর আলম

এপ্রিল ৪, ২০২১, ০৭:৩০ পিএম


ব্যাংকে টাকা তোলার হিড়িক

দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টারে যাওয়ার সুয়োগ হয়েছে। এতো ভিড় কল্পনাই করা যায়নি। দুপুরের পর গেলেও এ ভিড়। এভাবে কলেজের সহকারী অধ্যাপক কানিজ ফাতিমা মোহাম্মদপুরের জনতা ব্যাংকের শাখায় টাকা তুলতে গিয়ে ভিড়ের ব্যাপারে খেদোক্তি জানান। শুধু মোহাম্মদপুরের জনতাই নয়, অগ্রণী, সোনালী, রূপালীসহ রাজধানীর মতিঝিলসহ প্রায় এলাকায় সব ব্যাংকে এরকম ভিড় দেখা যায়।

সরকার করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ ঠেকাতে আজ সোমবার থেকে সাতদিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণায় আতঙ্কে রাজধানীতে প্রায় ব্যাংকেই টাকা তোলার হিড়িক পড়ে। এতে গ্রাহকদের বাড়তি চাপে হিমশিম খেতে হয়েছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সরকারের নির্দেশনা প্রতিপালনে ব্যাংকিংব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু রাখা হবে। কাল মঙ্গলবার থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ব্যাংকিং লেনদেন হবে। সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশনা মেনে চলতে সার্কুলার জারি করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, সরকার করোনার প্রকোপ ঠেকাতে যে নির্দেশনা দিচ্ছে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক তা প্রতিপালনের ব্যবস্থা করছে। আজ (রোববার) যে নির্দেশনা জারি করেছে তার আলোকে সীমিত পরিসরে ব্যাংকিংসেবা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একইসাথে তা প্রতিপালনে সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের জন্য সার্কুলার জারি করা হয়েছে। তাহলে ব্যাংকে টাকা তোলার হিড়িক কেন? এ ব্যাপারে তিনি বলেন, গ্রাহকদের কোনো আশঙ্কার কারণ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব ব্যাংকে যথেষ্ট লিকুইডিটি (নগদ অর্থ) রয়েছে। হয়তো প্রথম দিনের ঝামেলা এড়াতে গ্রাহকরা একটু আগেই লেনদেন করতে ভিড় করেছেন। তিনি আরও বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক সদা সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। গতকাল রাজধানীর ব্যাংকপাড়া মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ব্যাংকের শাখায় গ্রাহকের ব্যাপক ভিড়। ব্যাংকাররা বলছেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকের লেনদেন প্রায় দ্বিগুণ। তবে টাকা জমা দেয়ার চেয়ে উত্তোলনের পরিমাণ বেশি।

এ বিষয়ে মতিঝিল সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের কর্মকর্তারা জানান, আজকে (রোববার) আতঙ্কে হয়তো গ্রাহকরা বেশি টাকা তুলতে ভিড় জমান। এ জন্য অন্যান্য দিনের তুলনায় গ্রাহকের উপস্থিতি বেশি, লেনদেনও বেশি হচ্ছে। স্বাভাবিক দিনের চেয়ে আজ প্রায় দ্বিগুণ লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে গ্রাহক টাকা উত্তোলন বেশি করেছে। স্বাভাবিক দিনে স্থানীয় শাখায় ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকার মতো উত্তোলন হয়। কিন্তু আজ দ্বিগুণেরও বেশি টাকা উঠিয়েছেন গ্রাহকরা। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে গ্রাহকসেবা দিচ্ছে জানিয়ে কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা ও স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করছি। মাস্ক ছাড়া কাউকে শাখায় ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনেও কার্যক্রম জোরদার করেছে সোনালী ব্যাংক। শুধু সোনালী নয়, এক্সিম ব্যাংকের মতিঝিল শাখায়ও গ্রাহকের অনেক চাপ। সকাল থেকেই কর্মকর্তারা তাদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। গ্রাহক টাকা জমা দেয়ার চেয়ে বেশি উত্তোলন করছে। এ কারণে চাপ বেড়েছে। বিডিবিএল ও ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায়ও ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। কর্মকর্তারা বলছেন, অনেকে লকডাউনের ঝামেলা এড়াতে আগেই হয়তো ব্যাংকের লেনদেন সেরে নিচ্ছেন।

উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন হুহু করে সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় কিছু বিধিনিষেধ আরোপের পর মানুষকে ঘরে থাকতে সরকার গতকাল শিল্প-কারখানা খোলা রেখে কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে। তবে সব ধনের যানবাহন বন্ধ থাকলেও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সীমিত পরিসরে ব্যাংক চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২৯ মার্চে ১৮ দফা নির্দেশনা উল্লেখ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সরকারের এই নির্দেশনা মানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও গত ৩১ মার্চ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ ও অবস্থানকালীন সময়ে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

গতকাল সরকারের নির্দেশনা মেনে সীমিত পরিসরে ব্যাংকিংসেবা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে— ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিদিন ব্যাংকিং লেনদেনের সময়সূচি সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। তবে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ২টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। টাকা জমা থেকে শুরু করে উত্তোলন, ঋণের অর্থ ছাড়করণ, শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ, ভাতা ও অনুদান বিতরণসহ সব ব্যাংকিং লেনদেন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সেবা প্রদান অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের বিন্যাস ও উপস্থিতি ব্যাংক নিজ বিবেচনায় করবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের কাছের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতির বিষয়টি অগ্রাধিকার বিবেচনা করতে পারে। এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমও ব্যাংক নিজ বিবেচনায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। নগদ জমা ও উত্তোলনের জন্য অনলাইন সুবিধা ব্যাংকের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সার্বিক সুবিধা নিশ্চিত করে সিটি কর্পোরেশন ও জেলা সদরে কার্যরত ব্যাংকের ২টি শাখার মধ্যে সুবিধাজনক যেকোনো একটি শাখা থেকে গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে শাখার দৃশ্যমান জায়গায় বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রদর্শন করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বৈদেশিক লেনদেনে বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার লেনদেন অব্যাহত রাখতে হবে। সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দর এলাকার ব্যাংকের শাখা, উপশাখা, বুথ সার্বক্ষণিক খোলা রাখার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ব্যাংকের সান্ধ্যকালীন ও সাপ্তাহিক ছুটিকালীন ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে বিআরপিডির মহাব্যবস্থাপক মো. আনোয়ারুল ইসলামের সই করা সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।

আমারসংবাদ/জেআই