Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

জরুরি প্রয়োজনে চলছে প্রশাসন

এপ্রিল ৫, ২০২১, ০৮:৫০ পিএম


জরুরি প্রয়োজনে চলছে প্রশাসন

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশে চলছে সাতদিনের লকডাউন। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে লকডাউনের প্রথমদিনে সীমিত পরিসরে অফিসের কার্যক্রম চলেছে। বর্তমানে সচিবালয়ে দর্শনার্থীর প্রবেশ বন্ধ আছে। সচিবালয়ে অন্যান্য দিনের তুলনায় মানুষের সমাগম ছিলো অনেক কম। অন্যান্য দিনের তুলনায় গাড়ির কোনো চাপ ছিলো না। যেখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোকের শোরগোলে মুখর থাকলেও লকডাউনে সরকারি বিধি মেনেই চলেছে অফিস। তবে ছিলো না নির্দিষ্ট উপস্থিতির সংখ্যা। বিশেষ করে জরুরি প্রয়োজনীয় দপ্তরগুলো খোলা ছিলো।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যাদের বিশেষ কাজ তারাই মূলত লকডাউনের প্রথম দিনে এসেছেন, এছাড়া তেমন কাউকে দেখা যায়নি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন উইংয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্য স্বাভাবিক দিনের তুলনায় এখন সীমিত পরিসরে লোকবল দিয়ে অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রশাসন উইংয়ে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মী আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের ৫০ জন লোকবল নিয়মিত কাজ করেন। সেখানে বর্তমানে ২০ জনের কাছাকাছি আজ (লকডাউনের প্রথম দিন) কাজ করছেন।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানাগেছে, মন্ত্রী ও সচিবের দপ্তরসহ মোট ১১টি উইংয়ে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিসের কার্যক্রম চলছে। যেখানে বেশি প্রয়োজন সেখানে কাজ হচ্ছে। একই ভবনের ভূমি, ত্রাণ ও দুর্যোগব্যবস্থাপনা এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়েও প্রায় একই চিত্র দেখা যায়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ে বেশকিছু কর্মকর্তার রুম বন্ধ দেখা যায়। খাদ্যমন্ত্রীর দপ্তরে কর্মরত এক অফিস সহকারী আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের যাদের কাজ আছে তারাই এসেছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছি বলে জানান তিনি। এছাড়াও তিনি জানান, আমাদের অফিস রুমে চারজন নিয়মিত কাজ করি। আজ আমরা দুজন কাজ করছি। অপরদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে কেউ ছিলো না। রুম খোলা থাকলেও প্রায় রুমের লাইট বন্ধ ছিলো। তবে প্রশাসন বিভাগে কয়েকজনকে কাজ করতে দেখা গেছে।

প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের যাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে তারাই এসেছি। কাজ শেষ হলেই চলে যাবো, কোনো সময় বাধা নেই। তিনি বলেন, লকডাউনের আগে আমরা রোস্টারভিত্তিক কাজ করার শিডিউল করেছিলাম তবে এখন লকডাউনের জন্য সব পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ কর্মকর্তা আরও জানান, এখন কাজের গুরুত্ব বুঝে বেশি দরকার তারাই কাজ করতে আসবে। বেশির ভাগ মন্ত্রণালয়ে দেখা গেছে অল্প লোকবল দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, মানুষের গতিবিধিকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। কারণ মানুষ যতই বাইরে আসবে ততই এ সংক্রমণ বেড়ে যাবে। তবে আজকে সকাল (লকডাউনের প্রথমদিন) থেকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি আগের অবস্থা থেকে এখনকার অবস্থা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে, সংক্রমণ যাতে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এবার আমরা দেখছি সংক্রমণ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সে ক্ষেত্রে সকলকেই সংযত আচরণ করতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিধিনিষেধের প্রথম দিনে রাজধানীতে গাড়ি চলতে দেখা গেছে- সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাজধানীতে গণপরিবহন নেই। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন সেটি। বিভিন্ন অফিসে এই পরিবহনগুলো নিজেরা ব্যবস্থা করেছে। এগুলো গণপরিবহন না।  অফিসের সঙ্গে তারা চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, কর্মকর্তাদের আনা-নেয়ার জন্য শুধু ব্যবহার হচ্ছে। অনেক দূরপাল্লার গাড়িও ছেড়ে গেছে— এমন প্রসঙ্গ টানলে তিনি বলেন, যদি সেটি হয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সচিবালয়ে সব মন্ত্রণালয় খোলা আছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জরুরি প্রয়োজন যেগুলো, সেগুলো খোলা আছে। আমাদের আগের যে নির্দেশনা, সেখানে ৫০ ভাগ বলা আছে, সে অনুযায়ী আমরা চাইলে আরও কমাতে পারি, প্রয়োজন অনুযায়ী সেখানে জনবল রাখতে হবে।

রমজানে অফিস ৯টা-সাড়ে ৩টা : রমজান মাসে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সকাল ৯টা-বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘হিজরি ১৪৪২ (২০২১ খ্রিস্টাব্দ) সালের পবিত্র রমজান মাসে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য অফিস সময়সূচি নির্ধারণ’ করা হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ বা ১৫ এপ্রিল থেকে মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান শুরু হবে। বর্তমানে অফিস সময় সকাল ৯টা-বিকাল ৫টা পর্যন্ত। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রমজানে দুপুর সোয়া ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত জোহরের নামাজের বিরতি থাকবে। সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে যথারীতি শুক্র ও শনিবার। ব্যাংক, বিমা, আর্থিকপ্রতিষ্ঠান, ডাক, রেলওয়ে, হাসপাতাল ও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা এবং অন্যান্য জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এ সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবে। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব আইন অনুযায়ী জনস্বার্থ বিবেচনা করে সময়সূচি নির্ধারণ ও অনুসরণ করবে। সুপ্রিম কোর্ট ও এর আওতাধীন সব কোর্টের সময়সূচি সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারণ করবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

আমারসংবাদ/জেআই